রসুল (সা.) যেভাবে কুরআন পড়তেন
- Details
- by এহসানুল কবীর
মহান আল্লাহতা’য়ালা বলেন, “হে বস্ত্রাবৃত; রাত্রি জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত, অর্ধ রাত্রি কিংবা তার চেয়ে কম অথবা তার চেয়ে বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর তারতীলের সাথে ধীরে ধীরে ও স্পষ্টভাবে।” (মুযাম্মিল ৭৩: ১-৪)
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রা.) বলেন- “রসুল (সা.)-এর কুরআন পাঠ ছিল পরিষ্কার, আলাদা আলাদা ও প্রতিটি হরফের স্বতন্ত্র উচ্চারণ রীতির।” (তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ী)
রসুল (সা.) যেভাবে কুরআন পড়তেন:
কুরআন পড়ছি, কিন্তু বুঝছি না- এমন অভিযোগ অনেকেরই। কেন এমন হবে এটা একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন। আল্লাহ তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন, তাহলে বুঝছি না কেন? বস্তুত: মেহনত ও প্রচেষ্টা ছাড়া দুনিয়ার কিছুই হাসিল করা যায় না। আল-কুরআনও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং এক্ষেত্রে মেহনত আরো বেশি প্রয়োজন। কারণ এ পথে বাধা আসে চতর্দিক হতে। এজন্য কুরআন পাঠের শুরুতেই ‘আউযবিল্লাহ’ পাঠের জন্য আল্লাহ পাক তাঁর কালামে নির্দেশ দিয়েছেন। (নাহল ১৩: ৯৮)
কুরআন কিভাবে কতক্ষণ পাঠ করতে হবে তাও আল্লাহতা’য়ালা তাঁর কিতাবে জানিয়ে দিয়েছেন সুরা মুযাম্মিল-এর ১-৪ আয়াতে। সুরা মুযাম্মিল মক্কী জীবনের প্রাথমিক যুগের সুরা। তখন এর প্রথম ক’টি আয়াত নাযিল হয়। নাযিলের ধারাবাহিকতায় সুরাটি তৃতীয়। এতে কুরআন অধ্যয়নের সময় ও পদ্ধতি বাতলে দেয়া হয়-
“রাত্রি জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত। রাত্রির অর্ধেক বা তার থেকে কম বা বেশি এবং কুরআন পাঠ কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে।”
এই নির্দেশ পাওয়ার পর রসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাত্রি জাগরণ করে তাহাজ্জুদের নামাজে দীর্ঘ সময় কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কখনো রাতের এক তৃতীয়াংশ, কখনো বা অর্ধেক, আবার কখনো দুই-তৃতীয়াংশ। (সুরা মুযাম্মিল ৭৩: ২০) এ অবস্থা চলে প্রায় দশ বছর। অতঃপর হিজরতের পর মাদানী জীবনে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনায় সময়ের চাহিদা বাড়লে সুরা মুযাম্মিলের ২য় রুকু নাযিল করে এ ব্যাপারে সহজতা দেয়া হয়। হাদীসে এসেছে দীর্ঘ সময় নামাযে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত করায় নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর পা ফুলে যেত। কখনো তারা সারা রাত একটা আয়াত পাঠ করে কাটিয়ে দিতেন, তার অর্থ, তাৎপর্য ও শিক্ষা উপলব্ধি করার কাজে।
“তারতীলুল কুরআন” বলতে কি বুঝায় তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুফতী শফী (রহ.) মা’আরেফুল কুরআনে সুরা মুযাম্মিলের সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফতীরে বলেন:
“তারতীল শব্দের শাব্দিক অর্থ সহজ ও সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা। (মুফরাদাত)। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, দ্রুত কুরআন তিলাওয়াত করবেন না, বরং সহজভাবে এবং অন্তনির্হিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে উচ্চারণ করবেন। (কুরতুবী) ‘রত্তিল’ বলে রাত্রির নামাযে করণীয় কি বলা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল যে, তাহাজ্জুদের নামায কেরাআত, তসবীহ, রুকু, সিজদা ইত্যাদি সমন্বয়ে গঠিত হলেও তাতে আসল উদ্দেশ্য কুরআন পাঠ। এ ছাড়া সহীহ হাদীস সাক্ষ্য দেয় যে, রসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদের নামায অনেক লম্বা করে আদায় করতেন। সাহাবী ও তাবেয়ীগণেরও এই অভ্যাস ছিল। এ থেকে আরো জানা গেল যে, কেবল কুরআন পাঠই কাম্য নয় বরং তারতীল তথা সহজ ও সঠিকভাবে পাঠ কাম্য। রসুলুল্লাহ (সা.) এভাবেই পাঠ করতেন। তবে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ চিন্তা করে তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়াই আসল তারতীল। (মা’আরেফুল কুরআন, অষ্টম খণ্ড, ইফাবা প্রকাশিত, পৃ. ৬০৫-৬০৬)
রসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)- এর অনুসৃত পথেই আমাদের কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। তারা যেভাবে কুরআন নিয়ে মেহনত করেছেন সেভাবে কুরআন অধ্যয়ন না করে কুরআন বুঝা ও তা থেকে হেদায়াত লাভ করা সম্ভব নয়।
রমজান আসলেই আমাদের দেশে খতম তারাবীর জোর তদবির শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাবীতে যেভাবে কুরআন পড়া হয় তা কুরআনী নির্দেশ এবং সুন্নাহর আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। রসুল (সা.) ও সাহাবীরা দীর্ঘ তারাবী বা কিয়ামুল লাইল আদায় করতেন। একেবারে প্রায় সেহেরীর আগ পর্যন্ত। কেউ বলতে পারেন এত দীর্ঘ নামায কি এখন আমাদের পক্ষে সম্ভব? এর বাস্তবতা স্বীকার করতেই হবে। তবে এই ‘রেলী’ হাফিজদের কুরআন বিকৃতকারী পাঠ বন্ধ করতে হবে। অনেক মসজিদে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদে প্রতিদিন তারাবীতে কুরআন হতে পাঠ্য অংশের সারাংশের অনুবাদ পড়ে শুনিয়ে দেয়া হয়। এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে শুধু আনুষ্ঠাকিতায় যেন তা সীমাবদ্ধ না হয়ে যায়। সবারই এ রকম উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। না হয় সুরা তারাবীই উত্তম। কুরআনের যথাযথ সম্মান রক্ষা করি। সওয়াব কামাই করতে এসে গুনাহগার না হয়ে যাই।
সমকালীন প্রসঙ্গে দুটি কথা। ইমাম শাফেয়ীকে একবার জিজ্ঞাসা করা হল, কুরআন মজীদে সবচেয়ে ভীতিকর আয়াত কোনটি। তিনি জবাবে সুরা ত্বহার নিচের আয়াতটি পাঠ করলেন- “আমার প্রভু ভুল করেন না, আর তিনি ভুলেও যান না।” (ত্বহা ২০: ৫২)
প্রতিবেশী ভারতের বর্তমান অবস্থায় এ আয়াতখানি আমাদের সবার সামনে এক ভীতিকর বাস্তবতা তুলে ধরেছে। ভীতিকর তাদের জন্য যারা আল্লাহর নাম, তাঁর দ্বীন, তাঁর বান্দা, তাঁর ঘর- সব মিটিয়ে দিতে চায়। একইভাবে মুমিনদের জন্য এতে রয়েছে চরম সান্ত্বনা। কারো বিপদে উৎফুল্ল হতে নেই। আমরাও না হই। নাফরমানীর আচারণে আমরাও কম যাই না। তবে কদিন পূর্বের ভারত আর আজকের ভারত- কি বৈপরিত্য। যে আল্লাহর নিশানী দেখতে চায়- সে দেখুক। না দেখলে আল্লাহর কিছুই আসে যায় না। মুসলিম মহিলাদের নেকাব-হিজাব খুলে ফেলার জন্য যারা প্রবল আন্দোলন শুরু করেছিলেন, আজ তাদের নারী-পুরুষ সবাইকে নেকাব পড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। এরপরও কি আমাদের হুশ ফিরবে না। এরপরও কি আল্লাহর দিকে, ঈমানের দিকে, পবিত্র ও সুন্দর জীবনের দিকে ফিরবো না? হারাম-মিথ্যা-জুলুম ছাড়বো না? আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেদায়াত দিন, পবিত্র জীবন দান করুন, আমীন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.