রমজান ও আল-কুরআন-১
- Details
- by এহসানুল কবীর
কুরআন নাযিলের মাস রমজান। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- ‘‘রমজান মাস; এ মাসেই নাযিল হয়েছে আল-কুরআন। যাতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত, হেদায়াতের দলিল এবং ফুরকান (ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী জ্ঞান)।” (বাকারা ২: ১৮৫)
প্রতীকী ছবি
আল-কুরআন ও রমজানের মধ্যকার গভীর সম্পর্ক বুঝা যায় নিচের আয়াত দু’খানি হতে-
“ইহাই (অর্থাৎ আল-কুরআনই) সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা হেদায়াত।” (বাকারা ২: ২)
আবার বলা হয়েছে-
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল যেমন বিধান দেয়া হয়েছিল তোমাদের আগেকার লোকদের যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” (বাকারা ২: ১৮৩) দু’খানি আয়াতের মধ্যে সম্পর্ক খুবই সুস্পষ্ট।
- প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, আল-কুরআন হতে হেদায়াত লাভ করবে কেবল মুত্তাকীরা।
- আর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হলো রোজা ফরয করা হয়েছে যেন মুমিনরা মুত্তাকী হতে পারে।
সুবহানাল্লাহ! কি অপূর্ব আমাদের রব আল্লাহ তা’য়ালার বিধান। এক আয়াত কিভাবে আরেক আয়াতের ব্যাখ্যা করে। একটা বিধান কীভাবে আরেকটা বিধানের পরিপূরক। হেদায়াত মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হেদায়াত অর্থ পথের দিশা। দুনিয়ায় কিভাবে কি করবো, কোনটা করবো, কোনটা না।
আচ্ছা, এ বিষয়ে কথা বলার আগে আরেকটা প্রশ্ন আসুন সুরাহা করে নেই। প্রশ্ন আসতে পারে – কুরআন কি গোটা মানবজাতির জন্য হেদায়াত নয়? তবে যে বলা হল মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত? এর সুরাহা কি?
# হ্যাঁ, অবশ্যই কুরআন গোটা মানবজাতির জন্যই হেদায়াত। শুধু মুসলমান বা মুত্তাকীদের জন্য নয়।
# “আল-কুরআনে রয়েছে মানবজাতির জন্য হেদায়াত……..।” (বাকারা ২: ১৮৫)
# হেদায়াত মানবজাতির জন্যই। তবে তা পাওয়ার জন্য তাকওয়ার অধিকারী হতে হবে। (আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে তাকওয়া বা সংযম ও আল্লাহকে পরোয়া করে চলার গুণ যার আছে সে-ই মুত্তাকী।)
# এই শর্ত দিলেন কেন আল্লাহ তা’য়ালা- সম্ভবত:ই এই প্রশ্ন আসতে পারে? এ শর্তটাই স্বাভাবিক।
# দেহের কোনো রোগ হলে তার চিকিৎসার জন্য আগে রোগের কারণ বর্জন বা প্রতিরোধ করতে হবে। রোগের জন্য ঔষধ নিচ্ছি, আবার একই সাথে রোগের কারণটাও ছাড়ছি না তাহলে তো ঔষধ কাজ করবে না।
# ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই প্রেসার এমনকি পেটের পীড়াসহ যেকোনো রোগের চিকিৎসার জন্য এটা একটা শর্ত।
# ধুমপায়ীদের জন্য আরেক ধাপ সুসংবাদ। ফুসফুসের কোনো বড় রকম ক্ষতি না হলে সিগারেট ছেড়ে দিলেই দেহ আপনা থেকেই ফুসফুসের ক্ষতি পুষিয়ে নিবে। সুবহানাল্লাহ! “ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খা-লিকীন।” ‘‘অতএস, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান।’’ (আম্বিয়া ২১: ১৪)
# কুরআন হল মানুষের জীবন পথের দিশা। বিভ্রান্তির পথ ত্যাগ না করলে সঠিক পথের দিশা লাভ করা বা সে পথে চলা দুষ্কর। তাই বলা হয়েছে এটা মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশ।
এখন আসি হেদায়াত কি সে প্রসঙ্গে:
• হেদায়াত অর্থ পথনির্দেশ, পথের দিশা।
• কোন বিষয়ে পথনির্দেশ? উত্তর- দুনিয়ার জীবনের জন্য। দুনিয়ায় কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ। কোনটা করা উপকারী, কোনটা ক্ষতিকর। কোনটা দেখতে ভাল হলেও আসলে ক্ষতিকর। কোনটা ভাল না লাগলেও প্রকৃতপক্ষে উপকারী; শুধু উপকারীই নয় বরং তা না করলেই ক্ষতি।
• এসব চিন্তাকে আমরা তিনটি প্রশ্নের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি:
১. দুনিয়ায় আমি কোথা থেকে এসেছি?
২. কেন এসেছি?
৩. কোথায় যাচ্ছি?
ইমাম ইবনে আবদিল বার এই জ্ঞানকে আল-ইলম আল আ’লা (সবচেয়ে বড় জ্ঞান) নামে অভিহিত করেছেন। (রসুলুল্লাহর (সা.) শিক্ষাদান পদ্ধতি- ড. মোহাম্মাদ আবদুল মাবুদ, পৃষ্ঠা ৬৯)
# সত্যই আল-কুরআন হচ্ছে জীবন সমস্যার সমাধান। মানবজীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক সব প্রশ্নের জবাব। আল্লাহ বলেন-
“ওরা তোমার কাছে এমন কোনো সমস্যা নিয়ে আসে না, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করি না।” (ফুরকান ২৫: ৩৩)
আরো বলেন-
“আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ হিসেবে তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করলাম।” (নহল ১৬: ৮৯)
# আল-কুরআন কিভাবে মানব মনের প্রশ্নের জবাব দেয়- মনের প্রশ্নগুলির সঠিক-সুন্দর সমাধান দিয়ে তাকে হেদায়াত প্রদান করে তার একটা সুন্দর-সাম্প্রতিক উদাহরণ- মার্কিন গণিতবিদ জেফরি ল্যাং-এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনীর মধ্যে আমরা দেখতে পাই।।
# জেফরি ল্যাং এক প্রথিতযশা মার্কিন গণিতবিদ। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন একজন খৃষ্টান ক্যাথলিক। কিন্তু নিজ ধর্মের নানা বৈপরিত্য তাকে নাস্তিক করে তোলে। তারপর ঘটনাচক্রে তিনি আল-কুরআনের একখানি ইংরেজি তরজমা পান ও তা নিছক কৌতূহলবশত: পাঠ করতে থাকেন।
কুরআন পাঠকালে তার বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে:
“কুরআন পড়তে গিয়ে আমি বুঝলাম যে, এটি এমন একটি অসাধারণ গ্রন্থ, যা আপনি খেলাচ্ছলে পড়তে পারবেন না; এটার এমন এক আকর্ষণীয় ও সম্মোহনী শক্তি আছে যা পাঠককে টেনে নেয়; পাঠকের সর্বোচ্চ মনোযোগ আশা করে; হয় আপনাকে ইতোমধ্যে এর প্রতি আত্মসমর্পণ করে এটা পাঠ করতে হবে নয়তো প্রতি বাক্য পাঠ করে এর সাথে লড়তে হবে। এ যেন শুধু এক বই নয়- বরং যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও বাস্তবতার সমন্বয়ে পাঠকের অন্তরে বিপ্লব আনে। এটা সরাসরি আপনাকে প্রশ্ন করে, আপনার নেতিবাচক পূর্ব ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।
আপনার পলায়নপর মানসিকতাকে তিরস্কার করে আবার সবচাইতে রহমদিল সত্ত্বার পক্ষ থেকে আপনাকে কাছে টানে। শুরু থেকে ও এক যুদ্ধ শুরু করে, আর এতে আমি প্রতিপক্ষ।
কুরআন পড়তে গিয়ে আমি যেন এক অসম যুদ্ধে পড়ে গেলাম। স্পষ্ট হয়ে গেল, এর প্রণেতা যেন আমাকে আমার চেয়েও অধিক চেনেন বা জানেন। বইয়ে আমার পূর্বধারণার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। ………
প্রতি রাতেই আমি কিছু প্রশ্ন এবং আপত্তি নোট করে রাখতাম এবং তার পরদিনের পাঠেই আমার আপত্তির বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা পেতাম। মনে হচ্ছিল- যেদিন থেকে আমি কুরআন ধরেছি সেদিন থেকেই লেখক আমার অন্তরের অন্তস্থলের খবর রাখছেন এবং সত্যিই গণিতের মতো জটিল শাস্ত্রের জটিল সব বৈজ্ঞানিক বই পড়তেও আমার এমন কখনো হয়নি। আমি যেন কুরআনের প্রতি পাতায় আমাকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম। এর লেখক যেন দীর্ঘদিন ধরে আমাকে চেনেন, আমার কষ্ট বুঝেন, আমার অন্তরের দ্বন্দ্ব এবং ক্ষোভ জানেন আর তা প্রশমিত করার সব উপায়-উপকরণ তাঁর কাছে আছে।’’ (আত্মসর্পণের দ্বন্দ্ব, জেফরী ল্যাং, অনুবাদ প্রফেসর ড. আবু খলদুন আল-মাহমুদ, একাডেমিয়া পাবলিশার্স লি. পৃ. ১২-১৩)
মহান আল্লাহ বলেন,
“আমি তো তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি এক কিতাব যাতে তোমাদের কথাই বলা হয়েছে, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?” (আম্বিয়া ২১: ১০)
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা
আপনার কি কোনো প্রশ্ন নেই? জীবন সমস্যা সম্পর্কে? জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে? কেন আপনাকে তিনি সৃষ্টি করলেন? কেন এ জীবন দিলেন? কি কাজ দিয়ে আপনাকে তিনি পাঠিয়েছেন? আপনার ভবিষ্যত কি আপনার জানতে ইচ্ছা করে না? অথবা আপনার কি কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই? নেই কোনো আপত্তি? ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কোনো বক্তার বক্তব্যে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভ বা প্রশ্ন? আপনি অবলিলায় সে প্রশ্ন করতে পারেন আপনার মালিক আল্লাহ তা’য়ালাকে? তিনি প্রশ্নের জবাব আপনার জন্য মওজুদ রেখেছেন তাঁর কিতাবে? আপনি কি একটু কষ্ট করবেন না?
তিনি আপনাকে আহবান জানিয়ে বলছেন- “তবে কি তারা কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে না?’’ (নিসা ৪: ৮২)।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.