সার্থক রমজানের লক্ষ্যে করণীয় (শেষ কিস্তি)
- Details
- by এহসানুল কবীর
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই,’’(সুরা হুজুরাত ৪৯: ১০)। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। অতএব, তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না। ঈর্ষান্বিত হয়ো না, কেউ কারো পিছনে লেগো না, আর তোমরা সবাই এক আল্লাহর দাস হয়ে যাও, একে অপরের ভাই হয়ে যাও।’’ (বুখারী, হাদীস নং ৫৬৩৮)।
মুসলমান পরস্পরের ভাই ভাই। এমনকি সহোদর ভাইয়ের চেয়েও ঘনিষ্ঠ তাদের সম্পর্ক। একই মায়ের গর্ভের সন্তানেরা আদর্শের কারণে যেমন দুনিয়ার জীবনে পরস্পরের শত্রু হয়ে যেতে পারে, তেমনি আখিরাতে তারা একজন জান্নাতী অপরজন জাহান্নামীও হতে পারে।
নবী (সা.) তার অপর হাদীসে মুসলিম উম্মাহকে এক মানবদেহের সাথে তুলনা করেছেন। যার একটি অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্য অংশে তা অনুভূত হয়।
দুঃসহ যন্ত্রনার সাথে আজ আমাদের দেখতে হচ্ছে মুসলমানদের পরস্পরের হানাহানি, শত্রুতা ও বিদ্বেষ। শিয়া-সুন্নী, মাযহাব, তরীকা, রাজনৈতিক মতাদর্শ এমনকি বর্ণ বা বংশ কেন্দ্রীক দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উম্মাহ। মাযহাবী বা ফিকিহ খুঁটি-নাটি নিয়ে নতুন নতুন দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছি আমরা। অথচ আমাদের মধ্যে বিভেদের থেকে ঐক্যের উপাদান বেশি। এক আল্লাহ, এক নবী, এক কিতাব, এক কিবলা, ৫ ওয়াক্ত সলাত, সিয়াম, হাজ্জ এ সবই উম্মতের ঐক্যের সূত্র।
বিশ্ব মানবতাকে শান্তি ও কল্যাণের পথে আহ্বানের দায়িত্ব উম্মতে মুসলিমার উপর অর্পিত। (আলে-ইমরান ৩: ১০৪)। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে কৃত্রিম সব বিভেদের দেয়াল অপসারণ করতে হবে। আন্তরিকভাবে ইসলামের অনুশীলন ছাড়া তা সম্ভব নয়। ইসলামই এই উম্মাহর ভিত্তি, ইসলামই আমাদের ঐক্য ও শক্তির উৎস।
উম্মাহর ঐক্যের এক নিদর্শন রমজানের রোজা। গোটা বিশ্বের মুসলিম এই এক মাসব্যাপী একই রুটিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করছে। সময়ের ভিন্নতা ছাড়া তাদের কার্যক্রমে কোনো পার্থক্য নেই- সেহরী, ইফতার, দিনব্যাপী সিয়াম পালন, রাতে তারাবী ও কিয়ামুল লাইল, কুরআন খতম, কুরআন অধ্যয়ন, যাকাত বিতরণ, ফিতরা আদায়- সব কিছুতেই তাদের কি অপূর্ব ঐকতান। এই আমাদের উম্মাহ। সেহরীতে রুটি খাই বা ভাত, ইফতারীতে পিয়াজু খাই বা পিৎজা। রোজা শেষে ঈদের আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, তাঁর বড়ত্ব ও মহত্বের ঘোষণা দিয়ে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
৯. আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী সকল মুসলিম মিলে-মিশে ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন যাপন করা ঈমানের দাবি। (সুরা আল-ইমরান ৩: ১০৩, সুরা নিসা ৪: ৫৯ এবং বুখারী ষষ্ঠ খণ্ড আহকাম ও ফিতনা অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। তাই কারো সাথে মতের মিল না হলে বা সে আমার দলভুক্ত না হলেই কাফির বা ফাসিক হয়ে গেল অথবা জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করছে এমন বিশ্বাস কুরআন-সুন্নাহসম্মত নয়। বরং যে বা যারাই কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী দ্বীনের পথে সহীহভাবে কাজ করছে তাদের সাথে মিলে ঈমানী দায়িত্ব পালনে সবাই সক্রিয় থাকি। ইসলামের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি। দলীয় বা ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধে উঠে ইসলামের কাজ বাড়াই। এ জন্য ইসলামী দলগুলির মধ্যে কুরআন-সুন্নাহর চর্চা এবং সে অনুযায়ী আমল বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। যেনতেন প্রকারে দল বড় করার চাইতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে ঈমানী চেতনা, ইখলাস, সত্যবাদিতা ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার গুণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সংগঠনের সদস্যদের পরিবারে ইসলামের অনুসরণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যক্তির বা মনগড়া চিন্তা-ভাবনার আনুগত্য নয়, সর্বক্ষেত্রে শরীয়ত ও নীতির আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের ভয়ে নয়, আল্লাহর ভয়ে কাজ করার অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।
সন্ত্রাস ও উগ্রতার পথে ইসলাম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ইসলাম সন্ত্রাস ও উগ্রতা সমর্থন করে না। সবর, কুরবানী ও হিকমতের সাথে সর্বাবস্থায় কাজ করাই ইসলামের দাবি, সুন্নাতে রসুল সা.-এর নীতি। সেই লক্ষ্যে আল-কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে সবার সাথে মিলে-মিশে ন্যায় এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ায় ভূমিকা রাখি। মাত্রাতিরিক্ত রাজনীতি চর্চা ও উগ্র কথা-বার্তা বর্জন করে কুরআন-সুন্নাহর যথাযথ জ্ঞান অর্জন ও সে অনুযায়ী নিজে আমল করা এবং জনগণকে এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল করার জন্য ইসলামী দলগুলোকে মনযোগী হতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ইসলামী চরিত্র গঠনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ইসলামের সঠিক শিক্ষা জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়াকে দলের মূল প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তরুণ-যুব সমাজ ও নারী সমাজকে কেবল সমালোচনা না করে তাদের বোধগম্য উপায়ে ইসলামের শিক্ষা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। অত্যন্ত ধৈর্য্য ও হিকমতের সাথে এ ব্যাপারে নিয়মিত, ধারাবাহিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামী দল ও সংগঠনের জন্য জরুরি। বর্তমান প্রেক্ষিতে সবরের সাথে কাজ করাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
১০. দ্বীন ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা (সুরা আল-ইমরান ৩: ১৯ অংশ)। অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা আল্লাহ পাক কবুল করবেন না (সুরা আল-ইমরান ৩: ৮৫)। তাই মানবরচিত ধর্ম বা মতবাদে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতে জান্নাত লাভ সম্ভব নয়। বরং আল্লাহর দেয়া কল্যাণময় জীবন ব্যবস্থা দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন মত-পথ অবলম্বনই মানবজাতির সমস্ত সমস্যার মূল কারণ। তাই সকল ঈমানদারের একান্ত কর্তব্য জীবনের সব ক্ষেত্রে দ্বীন ইসলাম মেনে চলতে সচেষ্ট হওয়া, দ্বীন ইসলামের পক্ষে কথা বলা ও কাজ করা।
অতএব, যে যেখানে আছি নিয়মিত বুঝে বুঝে কুরআন-হাদিস পড়ি, কুরআন-সুন্নাহর পক্ষে কাজ করি। রাত-দিন কুরআন নিয়ে দাঁড়াই। মাহে রমজানের প্রতিটি আমলের যথাযথ হক আদায়ে সচেষ্ট হই, তাকওয়া অর্জন করে একটা কল্যাণময় সমাজ গঠনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখি। এভাবে মাগফিরাত ও নাজাতের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য সকল মুসলমানের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবার সিয়াম ও যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী এবং নেক আমলসমূহ কবুল করে নিন, আমীন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.