আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ রহমতে আমাদের জীবনে আমরা আরেকটি রমজান মাস পেয়েছি। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মধ্যে এটি আমাদের দ্বিতীয় রমজান। করোনা আল্লাহয় অবিশ্বাসী কিংবা সন্দেহবাদী মানুষকে মহান মালিক আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব, অপার ক্ষমতা, সৃষ্টিজগতে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি এবং তাঁর অপ্রতিহত ক্ষমতাকে উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছে।

ramadan 2021 started bdপ্রতীকী ছবি

আবার একই সাথে এই দুর্যোগ মানুষের মানবিক ও সুকুমার বৈশিষ্ট্যগুলি চর্চার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং সমাজের মাঝে, মানুষের মাঝে সুপ্ত মহৎ গুণাবলীর প্রকাশ ঘটাচ্ছে। মহৎপ্রাণ ব্যক্তি বিশেষত: তরুণ-যুব শ্রেণি যাদের অনেককেই সমাজ-বিচ্ছিন্ন উন্নাসিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তারা এ সময় অনেক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দুঃখজনকভাবে প্রচলিত অর্থে ধার্মিক হিসেবে পরিচিতদের অনেকেই মানুষের এই দুঃসময়ে মানবিক দাবি পূরণে কার্যকর সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি।

আবার একই সাথে ধর্মহীনতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায় আচ্ছন্ন মানুষের অন্তরের কলুষতা এই মহামারি নগ্নভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে। ফলে, এই কঠিন বিপদের সময় অন্যায়, দুর্নীতি, প্রভাবশালীদের নির্যাতন-নিপীড়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুণ। একটি মুসলিম সমাজে যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের অধিকাংশই জন্মসূত্রে মুসলিম পরিচয়ে আবদ্ধ হয়ে গেছি। ইসলামের অনুশীলন ও অনুসরণ করছি খুব কম সংখ্যকই। বর্তমান পরিস্থিতি এরই নমুনা।

এ অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য প্রচলিত মানবরচিত ব্যবস্থাগুলিতে কোনো সুরাহা নেই। বরং মানুষের কর্মেরই ফল হিসেবে প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগগুলি জন্ম লাভ করে (সুরা রুম ৩০: ৪১)। এ থেকে মুক্তির পথ একমাত্র ইসলাম- আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা (সুরা আলে-ইমরান ৩: ১৯)। ইসলামে বিশ্বাস এবং সে অনুযায়ী সৎকর্মই বর্তমান দুর্বিসহ অবস্থা হতে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ। রমজানের রোজা বিশ্বাস, সদাচরণ ও সদগুণাবলী অর্জনে বিশ্ববাসীর জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার এক অনুপম নেয়ামত।

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে রমজান মাস উপস্থিত। কুরআন নাজিলের মাস রমজান। সংযম ও আত্মসংশোধনের মাস রমজান। এ মাস তাকওয়া অর্জন করে কুরআন থেকে হিদায়াত লাভের মাস। ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশ পরিহার করে কুরবানীর অভ্যাস তৈরির মাস।

রসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের সিয়াম পালন করল ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে, তার অতীতের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন (বুখারী)। একই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে রমজানে ও লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীর সলাত সম্পর্কে। হাদীস থেকে বুঝা যায়, এ সুসংবাদ তার জন্য যে দুটি শর্ত পূরণ করবে- সিয়াম পালন করবে ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে।

ঈমান: ইসলামের ভিত্তি ঈমান। শিরক, মুনাফেকী ও ফাসেকী মুক্ত ঈমানই আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলা গ্রহণ করেন।

ইহতিসাব: ইহতিসাব শব্দের অর্থ হিসাব, বিবেচনা, মূল্যায়ন, পরিতৃপ্তি, সংযম ইত্যাদি। ইহতিসাব সহকারে সিয়াম পালনের তাৎপর্য হলো- আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মযাচাই বা আত্মসমালোচনাসহ সিয়াম পালন করা।

রসুল সা. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও সে মাফিক কাজ ছাড়তে পারল না তার খানা-পিনা ছেড়ে দেয়াতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’’ (বুখারী)। অপর বর্ণনায় এসেছে, এ ধরনের রোজাদার উপবাসের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না। রমজান প্রত্যেক সিয়াম পালনকারীর কাছে দাবি করে যে, রোজার উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হলো তা সে যাচাই করে দেখবে। এমতাবস্থায় আমাদের আত্মসমালোচনা করে দেখা দরকার-

# আল্লাহর প্রতি ঈমানে আমি কতটুকু আন্তরিক: শিরক, কুফর, মুনাফেকী বা ফাসেকী আচরণ কি আমি সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে পেরেছি? কতটুকু আন্তরিকভাবে আমি আমার স্রষ্টা, মালিক ও প্রতিপালকের ইবাদত করছি, তাঁর হুকুম পালন করছি। কার সন্তুষ্টিকে আমি গুরুত্ব দেই- আমার মহান রব, যিনি আমাকে অস্তিত্ব দান করেছেন, সব ধরনের রিযিক দিচ্ছেন, কিয়ামতের দিন যাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আমার সব কাজের হিসাব দিতে হবে তাঁর- নাকি আমার নফস, প্রবৃত্তি, পরিবার-পরিজন বা সমাজের পছন্দ-অপছন্দ? অথবা কোনো ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক নেতার পছন্দ-অপছন্দ? বস্তুত: আমি যার কথা মেনে চলাকে গুরুত্ব দিচ্ছি, যার পছন্দ-অপছন্দকে পড়োয়া করছি, তাকেই আমার রব বা প্রভু বানিয়ে নিচ্ছি (সুরা তওবা ৯: ২৪)। ইহতিসাব করে দেখি আমি কাকে রব মানি?

# মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা ওয়াদা, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়-জুলুম কতটুকু ত্যাগ করতে পারলাম?

# ভেজাল কারবার, বিষাক্ত ফরমালিন, কার্বাইড বা কীটনাশকযুক্ত খানার কারবার কতটুকু ছাড়লাম?

# রমজান ও মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে মুনাফাখোরী ছাড়তে পারছি কি?

# আমরা রোজাদার হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মা-বোনেরা মোহরানা বা সম্পত্তির হক কেন পাচ্ছেন না? যৌতুক হারাম হওয়া সত্ত্বেও কেন মা-বোনদের প্রতিনিয়ত এর জন্য নির্যাতিত হতে হচ্ছে? খুন হতে হচ্ছে? নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা কেন দিন দিন বেড়ে চলছে। কেন বাড়ছে শিশুদের প্রতি নৃশংস আচরণ? অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, উগ্র চলাফেরা, কথা-বার্তা কমছে কি? এসব কাজ কি রোজার শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

# শ্রমজীবী মানুষ, গৃহভৃত্য, গৃহপরিচারিকাদের কেন আমরা আমাদের মতো মানুষ বিবেচনা করতে পারছি না? কেন তাদের নির্মম আচরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে?

# সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কেনই বা দিন দিন বেড়েই চলছে- ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরীব আরো গরীব? সন্ত্রাস, গুম, খুন, ছিনতাই, রাহাজানি থেকে কেন আমরা মুক্ত হতে পারছি না?

# কেন আমাদের অনেকেই ভিন্ন মতাবম্বী বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সহ্য করতে পারেন না? আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সুরক্ষা না দিয়ে কেন মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? আবার ভিন্ন মতের নামে কেউ কেউ সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দিতে চাইছে? অন্যদিকে, পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম দ্বীন ইসলামের নামকে উগ্রতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে?

# কুরআন-সুন্নাহ জানা ও মানা, ইবাদত-বন্দেগী সঠিকভাবে আদায়, হালাল-হারাম মেনে চলা, শালীনতার সাথে ও পর্দা-পুশীদা মাফিক জীবন যাপনে আমাদের আগ্রহ বাড়ছে কি?

# রমজান মাসে যেভাবে প্রাণবন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আগ্রহ ও সতর্কতার সাথে আল্লাহর হুকুমে খানাপিনা ছেড়ে দিলাম, তারাবী আদায় করলাম, সেই আমি রমজান ও বছরের বাকি সময়ে আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলার বাকি হুকুম-আহকামের সাথে কী রূপ আচরণ করছি?

# গুনাহর কাজ থেকে নিজেকে কতটুকু মুক্ত করতে পারলাম- তা আমাদের প্রতিটি রোজাদারের গভীরভাবে আত্মসমালোচনা করা দরকার। বড় বড় ইফতার পার্টি, ইফতার মাহফিল আর চমক সৃষ্টিকারী ইফতার দিয়ে ওপরে উল্লিখিত কঠিন গুনাহগুলি থেকে তো মাফ পাওয়া যাবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে আমরা কী জবাব দিব? রসুল সা. কি আমাদের হাউজে কাউছারের পানি পান করাবেন? নাকি আমাদেরকে- হাদিসে যেভাবে বলা হয়েছে যে, ‘দূর হও, দূর হও’ বলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে দেয়া হবে?

এ কথাগুলি গভীরভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন। গুনাহর কাজগুলি বর্জন করা এবং ভালো কাজগুলি আমলে নিয়ে আসা দরকার। এভাবে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের প্রকৃত মুসলিম ও আল্লাহওয়ালা মানুষ হিসেবে গড়া এবং সেই সাথে ইসলামী পরিবার ও জাতি গঠনের প্রোগ্রাম নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে উপস্থিত। আসুন, সে পথে সকলে অগ্রসর হই। আল্লাহর ওয়াদাকৃত দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির পথে এগিয়ে যাই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.