আপনি পড়ছেন

সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পবিত্র কোরআনের ২৬টি আয়াত আপত্তিজনক আখ্যা দিয়ে পরিবর্তনের রিট করেছেন শিয়া ওয়কফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি। এর আগে তিনি বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখনিতে এসব আয়াতের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এবার সরাসরি আইনি লড়াইয়ে নামলেন তিনি।

al quran

ওয়াসিম রিজভি যে ছাব্বিশটি আয়াত পরিবর্তনের রিট করেছেন সে আয়াতগুলোর বিষয়বস্তু জিহাদ বা সামরিক নির্দেশসম্বলিত। তার এই কর্মকান্ডে মুসলিম বিশ্বে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে কী আছে ওই ২৬ আয়াতে। চলুন তাহলে ২৬টি আয়াতের পরিবর্তন চেয়ে রিট করা হয়েছে তার বাংলা অনুবাদ জেনে নিই।

১. যারা আমার বিধান মানতে অস্বীকার করবে তারা আগুনে পুড়বেই। ত্বক একবার পুড়ে গেলে আবার নতুন ত্বক সৃষ্টি করা হবে। আবার তা পুড়বে। এভাবেই তারা পুরোমাত্রার শাস্তি ভোগ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। সুরা নিসা, আয়াত ৫৬।

২. ওরা চায় যে, ওরা যেমন সত্য অস্বীকার করেছে, তোমরাও একইভাবে সত্য অস্বীকার করো। তোমাদেরকে ওরা ওদের কাতারে শামিল করতে চায়। সাবধান! অসত্যের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে আল্লাহর পথে হিজরত না করা পর্যন্ত ওদের কাউকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। আর যদি ওরা প্রকাশ্য শত্রুতায় নামে তবে ওদের মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে পাকড়াও করবে এবং খতম করবে। ওদের মধ্য থেকে কাউকেই বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করবে না। সুরা নিসা, আয়াত ৮৯।

৩. সত্য অস্বীকারকারীদের তরফ থেকে কোনো বিপদের আশঙ্কা করলে সফরকালে নামাজ সংক্ষিপ্ত করার মধ্যে কোনো দোষ নেই। আসলে সত্য অস্বীকারকারীরা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু । সুরা নিসা, আয়াত ১০১।

৪. যারা বলে ‘আমরা খ্রিষ্টান’, আমি একইভাবে তাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তাদের যে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তার একাংশ তারা ভুলে গেছে। পরিণামে তাদের মধ্যে স্থায়ী বিদ্বেষ ও শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছে, যা অব্যাহত থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। তারা যা করেছে সময় এলে আল্লাহ তা তাদের বুঝিয়ে দেবেন। সুরা মায়েদাহ, আয়াত ১৪।

৫. যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের প্রাপ্য শাস্তি হচ্ছে, হত্যা বা শূলে চড়ানো অথবা হাত-পা কেটে (পঙ্গু বা ক্ষমতাহীন করে) দেয়া বা নির্বাসিত করা। পৃথিবীতে এ লাঞ্ছনার পরও পরকালে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিনতম শাস্তি। সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৩৩।

the holy quran

৬. হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা কখনো (বিরোধী ভাবাপন্ন) ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে আন্তরিক মিত্র হিসেবে গ্রহণ কোরো না। তারা একে অপরের মিত্র। (ঐতিহ্যগতভাবেই ইহুদিরা ইহুদি ছাড়া এবং খ্র্রিষ্টানরা খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য কারো সাথে সত্যিকার মিত্রতা করে না।) অতএব তোমাদের মধ্যে যে-কেউ তাদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করবে; সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ জালেমদের হেদায়েত থেকে বঞ্চিত করেন। সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৫১।

৭. হে বিশ্বাসীগণ! পূর্ববর্তী কিতাবিদের মধ্যে যারা তোমাদের ধর্ম নিয়ে হাসিতামাশা ও ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে, তাদেরকে এবং সত্য অস্বীকারকারীদের কখনো আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (কারণ তারা আসলে তোমাদের সাথে বন্ধুত্বে আন্তরিক নয়) আর সবসময় আল্লাহ-সচেতন থেকো, যদি তোমরা সত্যিকার বিশ্বাসী হও। সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৫৭।

৮. স্মরণ করো! তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, (বিশ্বাসীদের অন্তরে আমার এ বাণী পৌঁছে দাও যে) ‘আমি তোমাদের সাথে আছি।’ তিনি ফেরেশতাদের আরো নির্দেশ দিলেন, বিশ্বাসীদের অন্তরে (আমার একথা দিয়ে) শক্তি সাহস যোগাও যে, ‘আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের অন্তরে আতঙ্ক সৃষ্টি করবেন। অতএব তোমরা আঘাত হানো ওদের ঘাড়ে ও গিঁটে গিঁটে।’ সুরা আনফাল, আয়াত ১২।

৯. হে নবী! বিশ্বাসীদেরকে রণে (মৃত্যুভয়কে জয় করতে) উদ্বুদ্ধ করো। তাহলে চূড়ান্ত প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যশীল ও প্রত্যয়ী ২০ জন ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হতে পারবে। আর ১০০ জন বিজয়ী হবে হাজার জন সত্য অস্বীকারকারীর ওপর। আর সত্য অস্বীকারকারীরা এ বাস্তবতাকে কখনো বুঝতে পারবে না। সুরা আনফাণ, আয়াত, ৬৫।

১০. গনিমতের মালকে তোমরা হালাল ও উত্তম হিসেবে ভোগ করো। সবসময় আল্লাহ-সচেতন থেকো। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু। সুরা আনফাণ, আয়াত, ৬৯।

১১. (প্রচলিত রীতি অনুযায়ী) সংঘাত নিষিদ্ধ মাসসমূহ পার হওয়ার পর (বিবদমান) শরিককারীদের যেখানে পাও, সেখানে ওদের বিনাশ করো। সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানে ওত পেতে থেকে (বিবদমান) শরিককারীদের পাকড়াও করো, অবরুদ্ধ করো। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, তবে তাদের মুক্ত করে দাও। মনে রেখো, আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু। সুরা তাওবাহ, আয়াত ৫।

১২. ওদের বিরুদ্ধে (নির্দ্বিধায়) লড়াই করো। তোমাদের হাত দিয়েই আল্লাহ ওদের শাস্তি দেবেন, ওদের অপদস্থ করবেন। আল্লাহ তোমাদের বিজয়ী করবেন, বিশ্বাসীদের চিত্তকে প্রশান্ত করবেন, ক্ষোভ ও ক্রোধ প্রশমিত করবেন। সুরা তাওবাহ, আয়াত ১৪।

turkey quran distribution

১৩. হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইয়েরা যদি বিশ্বাস অপেক্ষা সত্য অস্বীকারকেই অধিক শ্রেয় মনে করে, তবে ওদেরকে কখনোই মিত্র বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা ওদেরকে মিত্র বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা নিঃসন্দেহে জালেম। সুরা তাওবাহ, আয়াত, ২৩।

১৪. হে বিশ্বাসীগণ! শরিককারীরা (ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে অন্তরে) অপবিত্র। তাই এ বছরের পর ওরা যেন কাবাঘরের কাছেও আসতে না পারে। আর তোমরা যদি (এর ফলে) অভাব-অনটনের আশঙ্কা করো তবে জেনে রাখো, আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তোমাদেরকে তাঁর নেয়ামতে সমৃদ্ধ, অভাবমুক্ত করতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সুরা তাওবাহ, আয়াত ২৮।

১৫. (হে বিশ্বাসীগণ!) যাদের ওপর ইতঃপূর্বে কিতাব নাজিল হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না, পরকালেও বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তাঁর রসুল তাদের জন্যে যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে না এবং সত্যধর্ম অনুসরণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জিজিয়া অর্থাৎ ‘অব্যাহতি কর’ প্রদান করে শান্তিস্থাপনে সম্মত না হয়। সুরা তাওবাহ, আয়াত ২৯।

১৬. মাস পিছিয়ে দেয়া ওদের দিক থেকে সত্য অস্বীকার করার আরেকটি উদাহরণ। এ প্রক্রিয়ায় সত্য অস্বীকারকারীরা আরো বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয়। ওরা একবছর একটি মাসকে নিষিদ্ধ করে আবার আরেক বছর একে বৈধ করে। ওদের উদ্দেশ্য একটাই। তা হচ্ছে, আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন, তাকে যেন ওরা বৈধ করতে পারে। এভাবে মাস গণনা হলো আবার নিষিদ্ধ মাস বৈধও হলো। ওদের মন্দ কাজগুলোও ওদের কাছে আকর্ষণীয় ও চাকচিক্যময় হয়ে ওঠে। আসলে আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের সৎপথ প্রদর্শন করেন না। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৩৭।

১৭. ওদের মধ্যে এমন মানুষ রয়েছে, যারা সদকা হিসেবে পাওয়া দান বিতরণের ব্যাপারে (হে নবী!) তোমার ভুল খোঁজার চেষ্টা করে। প্রাপ্ত দান থেকে ওদেরকে কিছু দেয়া হলে খুব খুশি হয়। কিন্তু কিছু না পেলে ক্ষোভ তাদের সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৫৮।

১৮. হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের কাছাকাছি অবস্থানরত সত্য অস্বীকারকারীদের দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করো, ওরা যেন তোমাদের অটল অনড় মনোভাব দেখে (বিচলিত হয়)। আর জেনে রাখো, আল্লাহ-সচেতনদের সাথেই আল্লাহ রয়েছেন। সুরা তাওবাহ, আয়াত ১২৩।

silk fabric quran

১৯. নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তাই তারা নির্দ্বিধায় আল্লাহর পথে সর্বাত্মক সংগ্রাম করে, কখনো শত্রু নিধন করে, কখনো শহিদ হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে এই বিশ্বাসীদের জন্যে তিনি সুস্পষ্টভাবে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ওয়াদাপালনকারী আর কে হতে পারে? অতএব (হে বিশ্বাসীরা!) আল্লাহর সাথে যে লেনদেন করেছো (বায়াত হয়েছো) সেজন্যে আনন্দে উদ্বেলিত হও। নিঃসন্দেহে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। সুরা তাওবাহ, আয়াত, ১১১।

২০. তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের তোমরা উপাসনা করেছ, সবাইকে জাহান্নামের ইন্ধন বানানো হবে। তোমরা সেখানেই প্রবেশ করবে। সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৮।

২১. প্রতিপালকের বাণী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর যে ব্যক্তি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কে হতে পারে? যারা এভাবে পাপে নিমজ্জিত হয় তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তি পাবে। সূরা সাজদাহ, আয়াত ২২।

২২. অভিশপ্ত অবস্থায় ওদের যেখানেই পাওয়া যাবে, পাকড়াও ও বিনাশ করা হবে। সুরা আহজাব, আয়াত ৬১।

২৩. যারা এভাবে সত্য অস্বীকারে লিপ্ত, আমি অবশ্যই তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করব আর তাদের সকল অপকর্মের পূর্ণ প্রতিফল প্রদান করব। সুরা হামিম সাজদাহ, আয়াত ২৭। 

২৪. জাহান্নামই হবে আল্লাহর (সত্যবাণীর) বিরুদ্ধাচারীদের ঠিকানা। আমার বাণী ও দিক-নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করার প্রতিফলস্বরূপ ওরা সেখানে থাকবে চিরকাল। সুরা হামিম সাজদাহ, আয়াত ২৮।

২৫. (হে বিশ্বাসীগণ!) আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—তোমরা যুদ্ধে বিজয় ও বিপুল সম্পদের অধিকারী হবে। তিনি তোমাদের বিজয় ত্বরান্বিত করবেন। তিনি শত্রুর হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন, যাতে অনাগত বিশ্বাসীদের জন্যে এটি হয় এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আল্লাহ সবসময়ই তোমাদের সাফল্যের সরলপথে পরিচালিত করেন। সুরা ফাতাহ. আয়ত ২০।  

২৬. অতএব হে নবী! সত্য অস্বীকারকারী ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম করো এবং ওদের ব্যাপারে দৃঢ় হও। (অনুশোচনা না করলে) ওদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। আর চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে তা কতই না নিকৃষ্ট! সুরা তহারিম, আয়াত ৯।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.