কওমি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এবং আলেমদের ভাবনা
- Details
- by আল ফাতাহ মামুন
একসময় মাদরাসা ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে সেরা ব্যক্তিত্ব তৈরির কারখানা। গণিত, পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শিল্পকলা, সাহিত্য এক কথায় সব ক্ষেত্রেই মাদরাসা পড়ুয়ারা ছিলেন নেতৃত্বের আসনে। আজও ইবনে সিনা, জাবির হায়্যান, রাজি, গাজালি এসব মুসলিম ব্যক্তিত্বকে পড়েই আধুনিক বিজ্ঞানের সবক শুরু করেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞানীরা।
মাদরাসা-কলেজ বা অন্যকোনো ভাগে শিক্ষাব্যবস্থা বিভিক্ত ছিলো না। ফলে তখন সাধারণ জ্ঞাণী আর আলেম অর্থাৎ দুনিয়াবি আলেম, দ্বীনি আলেম নামে আলাদা কোনো পরিভাষা তৈরি হয়নি। গাজালি, রাজি, জাবির এরা সবাই ধর্মীয় ও জাগতিক জ্ঞানে বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, জ্ঞানের এমন কোনো শাখা ছিলো না যা ওই সময়ের মুসলিম জ্ঞানীরা আয়ত্ব করেননি।
তারপর এলো মুসলমানদের পরাজয় ও কুরআন বিমুখতার যুগ। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান (রহ.) বলেন, ইংরেজরা উপমহাদেশের মানুষকে হিন্দু-মুসলিম দুইভাগে বিভক্ত করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি, তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে মাদরাসা ও জেনারেলভাগে বিভিক্ত করে চিরপরাধীনতার জিঞ্জির মুসলমানদের গলায় পরিয়ে দিয়েছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার এ ফাটলের কারণে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, ১৯ শতকে মাদরাসায় ভর্তি হওয়া মানেই ছিলো চরম দারিদ্রতাকে বরণ করে নেওয়া। ফলে সাধারণ মুসলমানরা তাদের সন্তানদের মাদরাসায় পড়াতে চাইত না।
আজো মাদরাসা পড়ুয়ারা বিশেষ করে কওমি শিক্ষার্থীরা সামগ্রিকভাবে দারিদ্রতা মুক্ত শ্রেণি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। অবস্থা অনেকটাই পরিবর্তনের দিকে এগুচ্ছে।
ফরিদাবাদ মাদরাসার একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা একসময় বলতেন, সার্টিফিকেট নেওয়া গোনাহ। আমরাও সার্টিফিকেট নিতাম না। কিন্তু যখন দেখলাম এ ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দারিদ্রতাপূর্ণ লাঞ্চনার জীবন মেনে নেওয়া হচ্ছে, তখন অধিকাংশ কওমি শিক্ষার্থীই গোপনে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সার্টিফিকেট নিতে থাকে।’
সরকার কওমি শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি দিয়ে কওমি শিক্ষাব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক জাগরণের জোয়ার এনে দিয়েছে। এখন আর লুকোচুরি করে সার্টিফিকেট নিতে হবে না। আনন্দের ব্যাপার হলো, কওমি শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও শিক্ষামন্ত্রণালয় ভাবছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘দেশে ১৭ লাখ কওমি শিক্ষার্থী আছে। এদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগুতে চাই। একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে পড়ে থাকলে এদের এবং দেশের খুব একটা উন্নতি হবে না। আমরা চাচ্ছি তাদেরকে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। তারাও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা আমাদের সবার জন্যই ভালো।’
জানা গেছে, কওমি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব দূর করার কথা ভাবছে সরকার। এ লক্ষ্যে কওমি শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর মিফতাহুল উলুম বাড্ডা মাদরাসার শিক্ষক মুফতি আবদুল মজিদ বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিলো কোরআন সুন্নাহর সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন মানুষকে আল্লাহর প্রকৃত গোলাম হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যের সঙ্গে বিরোধ হবে না এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা হাসিমুখে মেনে নিতে প্রস্তুত।’
কওমি শিক্ষার্থীদের উন্নতি-অগ্রতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করে আসছেন আলেম সাংবাদিক এবং আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব। তিনি বলেন, ‘কওমি মাদরাসা দেশের স্বতন্ত্র একটি শিক্ষাধারা। দারুল উলুম দেওবন্দের আট মূলনীতি মেনে আলেমরা মাদরাসা পরিচালনা করেন। কওমি মাদারাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা আলহাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশ। কওমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে উন্নত ভাবনা ও কর্মমূখী শিক্ষার পরিকল্পনাকে স্বগত জানাই। তবে তা কোনোভাবেই হাইয়াতুল উলইয়ার বাইরে থেকে নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে হাইয়াতুল উলইয়া এবং বেফাকের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান। বেফাক এবং হাইয়্যাতুল উলইয়ার নেতৃত্বে চৌকষ এবং সচেতন একদল আলেম আছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং আলোচনা সাপেক্ষে কওমি মাদরাসায় কারিগরি কিংবা কর্মমূখী শিক্ষা সংযুক্ত হতে পারে।’
শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব এবং আলহাইয়্যাতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়্যার সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো আরবি জানেন। অনেকে দেশেই ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আরবি ব্যবহার হচ্ছে। আমি সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে কওমি শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হোক। এতে করে রেমিট্যান্স অর্জনের পাশাপাশি কওমি শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের সমস্যাও দূর হবে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.