দাপুটে জয়ে নতুন শুরু বাংলাদেশের

ম্যাচটা অনেক দিক থেকে গুরুত্ববহ ছিল। আইসিসি ওয়ানডে লিগের অভিষেক ম্যাচ। সোয়া ১০ মাস পর বাংলাদেশের মাঠে ফেরা, মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বের ‍উত্তর-যুগের সূচনা, সাকিব আল হাসানের ‍পুনর্জন্মের ম্যাচ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন এক শুরুর। এতগুলো প্রেক্ষাপট যে ম্যাচ ঘিরে সেখানে প্রত্যাশার পারদ তো উঁচুতে থাকবেই।

সেটা চূড়াতে রেখেই প্রত্যাশিত বড় জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে টাইগাররা জিতল ছয় উইকেটে। প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের ১২২ রানে গুটিয়ে দিয়ে স্বাগতিকরা জিতল হেসেখেলেই। রাজসিক এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল। শুক্রবার একই মঞ্চে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

জয়ের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন বোলাররা। আরেকটু ছোট করে বললে সাকিব এবং অভিষিক্ত পেসার হাসান মাহমুদ। সাকিব ধস নামিয়েছেন সফরকারীদের মিডল অর্ডার। লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন হাসান। তাদের পথ দেখিয়েছেন মুস্তাফিজ রহমান; দুই ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস ও জসুয়া দা সিলভাকে ফেরান সাজঘরে। সাকিবের শিকার চারটি; ‍তিনটি হাসানের।

এই ত্রিমুখি তোপে ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতটাই যে, দলের সাতজন যেতে পারেননি দুই অংকে। তিনজন খুলতে পারেননি রানের খাতা। কিছুটা যা প্রতিরোধ গড়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ারস। ৪০ রানে তাকে লিটন দাশের ক্যাচে পরিণত করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এ ছাড়া রভম্যান পাওয়েল ২৮ এবং অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ১৭ রানে আউট হন।

লক্ষ্যটা হাতের মুঠোয়। সেটা আরো সহজ করে দেন অধিনায়ক তামিম। সাতটি চারে ৪৪ রান করে ফিরেছেন সাজঘরে। তার সঙ্গী লিটন দাস আউট হয়েছেন আরে আগেই। ফেরার আগে করেন ১৪ রান। তিন নম্বর পজিশন নিয়ে এত যে আলোচনা, সেই পজিশনে ব্যাট করতে এসে নাজমুল হোসেন শান্ত নয় বল খরচ করে আউট হলেন মোটে এক রানে।

চার-এ ব্যাট করতে এসে সাকিব খেললেন টেস্ট মেজাজে। আসলে আস্কিং রেটের চাপ না থাকলে যা হয় আর কী! ওভার প্রতি গড়ে করতে হতো এক রানেরও কম! কিন্তু মন্থর গতির ব্যাটিং করেও টিকে থাকতে পারেননি সাকিব। ৪৩ বলে ১৯ রানে ফিরে গেলেন ২২ গজ ছেড়ে। পরে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন মুশফিক রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩১ বলে ১৯ রানে অজেয় ছিলেন মুশি। নয় রানে অপরাজিত রিয়াদ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন নিঃশর্ত আত্মসমার্পণের আশঙ্কাটা আগে থেকেই ছিল। এদিন ছয়জন ক্রিকেটারের অভিষেক করিয়েছে তারা। নতুনদের দুজন অবশ্য খারাপ কারেননি। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন মেয়ারস। বোলার আকিল হোসেন নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান লিটন ও শান্তর উইকেট। তামিমকে ফেরান জেসন।

এর আগে ফুলেল মঞ্চে দাঁড়িয়ে সিরিজের উদ্বোধন করলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মাঠের নানা প্রান্ত থেকে ওড়ানো হলো বেলুন। সঙ্গে আতশবাজির আলোকছটা। কিন্তু এমন রঙিন শুরুর ম্যাচটা হলো নিষ্প্রাণ। ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে গেছে অল্পতেই। হওয়ারই কথা। তারকা খেলোয়াড়দের ছাড়া খেলতে এসে মান বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে উন্ডিজের।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরো একাদশের অভিজ্ঞতা ১০৫ ম্যাচের। আর বাংলাদেশের ১১১৫ ম্যাচ! অভিজ্ঞতার এই পার্থক্য বোঝা গেল দুই দলের পারফর‌ম্যান্সেই। ম্যাচ শুরুর আগে ভাগ্যও পাশে ছিল টাইগারদের। টস জিতে প্রতিপক্ষ জেসনের হাতে ব্যাট তুলে দেন তামিম। বৃষ্টিভেজা, মেঘে ঢাকা গুমোট পরিবেশ তথা বোলারদের আদর্শ কন্ডিশনে ভালোই করলেন বোলাররা। এর মধ্যে তৃতীয় ওভারে আসে ‍বৃষ্টি। ম্যাচ স্থগিত থাকে ঘণ্টা খানেক।

বৃষ্টিভেজা এই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। অভিষেক রাঙানো হাসান লম্বা ক্যারিয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তামিম বুঝিয়ে দিয়েছেন তার নেতৃত্বের সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। সবশেষ সাকিব মাঠে ফিরেই বুঝিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ বিরতি তার পারফরম্যান্সে মরচে ধরাতে পারেনি। বরং আরো শানিত হয়ে ফিরেছেন তিনি। এবার ছন্দটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। পরের ম্যাচেই সিরিজ জয়ের চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩২.২ ওভার, ১২২/১০

বাংলাদেশ: ৩৩.৫ ওভার, ১২৩/৪

ফল: বাংলাদেশ ছয় উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

টস: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে

দ্বিতীয় ওয়ানডে: ২২/০১/২০২১ (শুক্রবার)