নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস মহামারিতে যথেষ্ঠ ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। মহামরি উপেক্ষা করে কয়েকটা দল মাঠে নামলেও অপেক্ষা বেড়েই চলছিল টাইগারদের প্রতীক্ষা। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটল। সুদীর্ঘ ১০ মাস ১০ দিন পর আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হচ্ছে ক্যারিবীয়দের সঙ্গে টাইগারদের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এটা শুধুই আট-দশটার সিরিজের মতো না। সিরিজের প্রেক্ষাপট বেশ গুরুত্ববহ। এই সিরিজ দিয়েই ওয়ানডে সুপার লিগ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। স্বাগতিক ভারত ও লিগের শীর্ষ সাত দল পাবে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট।

দুই দলের লক্ষ্য তাই একই। সিরিজ জয়। এ ছাড়া স্বাগতিকদের আরেকটা লক্ষ্য আছে। এই সিরিজ দিয়ে বিশ্বকাপের দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। দলে আছেন কয়েকজন নতুন মুখ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরেও তাই। ক্যারিবীয়দের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। করোনা ঝুঁকির কারণে টেস্ট ও ওয়ানডের নিয়মিত দুই অধিনায়কসহ মূল দলের ১০-১২ জনই আসেননি বাংলাদেশে।

অগত্যা কচিকাঁচার দল নিয়ে সফরে এসেছে ক্যারিবীয়রা। স্বাভাবিকভাবেই সিরিজে আন্ডারডগ তারা। এর কারণ সবশেষ সফরে পূর্ণ দল নিয়ে এসেই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল উইন্ডিজ। সেই তুলনায় এবারের প্রতিপক্ষ তো খর্বশক্তির। যদিও ক্যারিবীয়দের আন্ডারডগ ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ। প্রত্যাশার চাপমুক্ত থাকতেই প্রতিপক্ষকে যথেষ্ঠ সমীহ করছে টাইগাররা।

এই সিরিজ দিয়ে নতুন একটা যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। এনিয়ে অবশ্য মন খারাপ তার। তবে বাস্তবতা মানছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের জন্য পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার। কালকেই তো ফেসবুকে টাইগারদের শুভ কামনা জানিয়েছেন তিনি।

মাশরাফির বদলে একদিনের ক্রিকেটে আজ থেকে টস করবেন তামিম ইকবাল। দলের নতুন ভারমুক্ত অধিনায়ক তিনি। নেতৃত্ব পেয়েছেন তিনি প্রায় সাড়ে ১০ মাস আগেই। ক্রিকেটের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসে নেতৃত্ব পাওয়ার পর কোনো অধিনায়ককে টস করার জন্য এতটা লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়নি! স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে তামিমকে।

অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে সাকিব আল হাসানেরও। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে এক বছর নির্বাসনে ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগেই ফেরা হয়েছে তার। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পুনর্জন্ম হচ্ছে। ফেরার সিরিজে সাকিবের ব্যাটিং অর্ডারে আসছে পরিবর্তন। দলের প্রয়োজনে তিনের বদলে চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করবেন তিনি। সৌম্য সরকারকে দেখা যেতে পারে লোয়ার অর্ডারে।

করোনা উপেক্ষা করে কয়েকটা দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও বাংলাদেশ ভুগছিল অস্থিরতায়। সেটা কিছুটা হলেও কেটেছে ঘরোয়া দুটি টুর্নামেন্ট প্রেসিডেন্টস কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নিয়ে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে টাইগাররা। জৈব সুরক্ষা বলয়ে হয়েছে তাদের ম্যাচ ও অনুশীলন। এভাবেই চলবে আজ থেকে শুরু হওয়া পুরো সিরিজ।

ঘরোয়া ক্রিকেটের মতো এই সিরিজেও গ্যালারিতে থাকছেন না কোনো দর্শক। তবে আমন্ত্রিত কিছু অতিথি থাকবেন। দর্শকবিহীন মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথমবার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। আরো একটা অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে টাইগারদের। খেলতে হচ্ছে দুপুরের আগেই। রাতের শিশির ও কুয়াশার প্রভাব কমাতে ব্রডকাস্টারদের চাওয়াতে এমন ‍সূচি করা হয়েছে।

নতুন মুখ, নতুন পরিকল্পনা, নতুন অধিনায়ক-সবমিলিয়ে বাংলাদেশের নতুন দিনের শুরু হতে যাচ্ছে। গতকাল ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিমের কথাতেও মিলেছে এর প্রতিফলন। তার ভাষায়, ‘আমি মনে করি না আমাদের অন্য কাউকে অনুসরণ করার দরকার আছে। আমরা হয়তো ক্যারিবিয়ানদের মতো শক্তিশালী নই, অস্ট্রেলিয়ানদের মতো সুগঠিত নই। তবে দল হিসেবে আমাদের যে ‍সুবিধা আছে তা অন্যদের নেই।’

২০২৩ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের এত পরিকল্পনা ও আয়োজন। ওয়ানডে লিগের শীর্ষ সাতের মধ্যে থাকতে না পারলে খেলতে হবে বাছাইপর্ব। বাংলাদেশ অবশ্য ওই ঝামেলায় যেতে নারাজ। সামনের প্রতিটি ম্যাচকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে দল। তাদের কাজ কিছুটা হলেও সহজ করে দিতে পারে এই সিরিজ। কারণ প্রতিপক্ষ উইন্ডিজের বিরুদ্ধে সবশেষ পাঁচটি ওয়ানডেতেই জিতেছ বাংলাদেশ।

এই সময়ে ঘরের মাঠ তো আছেই, ক্যারিবীয়দের মাঠেও সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। তাই বাংলাদেশের জয় প্রত্যাশিতই। সেটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে অনভিজ্ঞ প্রতিপক্ষের কারণে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ অন্তত পাঁচজন ক্রিকেটারের অভিষেক করাবে উইন্ডিজ। যার নেতৃত্বে খেলবে সফরকারীরা সেই জেসন মোহাম্মদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন আড়াই বছর পর! তারকারা সফর থেকে নিজেদের গুটিয়ে না দিলে হয়তো দলেই সুযোগ পেতেন না তিনি!