যেসব খাবার অবস্থান ভেদে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে খাবার খেতেই হবে। খাবারের মাধ্যমে মানব শরীর জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ও উপাদান পেয়ে থাকে। তবে একেক দেশের মানুষের খাদ্যাভাস একেক রকম। যেমন- বাঙালিরা ভাত, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম, শাক-সবজি খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে থাকে। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েক হাজার খাবারের মধ্যে এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ মনে হলেও অবস্থান ভেদে হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর। এমনকি কিছু খাবার বিশেষ ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
খাবার- প্রতীকী ছবি
তাই চলুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার মানবদেহের ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং কোন কোন অবস্থায় সেগুলো মোটেও খাওয়া উচিত নয়।
পটকা মাছ: বিশ্বের বহু দেশের মানুষের কাছে পাফার ফিস বা পটকা মাছ খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। কোরিয়া, চীন, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশের নদ-নদীতেও পাওয়া যায় বেলুনের মতো ফুলতে পারা এই মাছটি। এটি খেতে খুব সুস্বাদু হলেও যদি ঠিকমতো প্রক্রিয়াজাত না করা হয়, তাহলে এই মাছটিই হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। কারণ এ মাছটির শরীরে রয়েছে বিষাক্ত সায়ানাইডের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর টিউরোটক্সিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মরক্ষার্থে বেলুনের মতো ফুলতে পারা এই পটকা মাছ খাওয়ার আগে অবশ্যই খুবই দক্ষতার সঙ্গে এর শরীরের বিষাক্ত অংশটি কেটে ফেলে দিতে হয়। তা না হলে বিষাক্ত টিউরোটক্সিন পাকস্থলীতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে। এমনকি এতে মারাও যেতে পারেন ওই ব্যক্তি। তবে বিষাক্ত অংশটি ঠিকমতো কেটে ফেলে দিলে মাছটি স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া যায়।
পাফার ফিস বা পটকা মাছ- প্রতীকী ছবি
খেসারি ডাল: ডাল বাঙালিদের খাবার তালিকার যেনো অপরিহার্য একটি অংশ। আমাদের দেশে এমন অনেকে আছেন যারা ডাল ছাড়া একবেলা ভাতই খেতে পারেন না। স্বল্প মূল্যের এই খাবারটিতে প্রচুর পরিমাণ আমিষ রয়েছে। যার কারণে একে গরীবের প্রোটিনও বলা হয়ে থাকে। বাঙালিরা মসুর, মুগ, বুট ও খেসারি ডাল খেয়ে থাকে। তবে খেসারির ডালে থাকতে পারে 'বোয়া' নামের এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো এসিড। যা তৈরি করে বিষাক্ত নিউরোটক্সিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউরোটক্সিন মাবন শরীরে স্নায়বিক পঙ্গুতা তৈরি করতে পারে। যার কারণে পা অবশ হওয়া, হাঁটতে অসুবিধা বা অসহ্য যন্ত্রণা হতে পারে। তাই যারা দীর্ঘদিন ধরে খেসারির ডাল খাচ্ছেন তাদের এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাশরুম: পুষ্টিগুণে ভরপুর মাশরুম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই একটি জনপ্রিয় খাবার। সারা পৃথিবীজুড়ে কয়েক হাজার প্রজাতির মাশরুম পাওয়া যায়। যা মানুষের শরীরের রক্তচাপ, বহুমূত্র, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত-ব্যথার জন্য উপকারী। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও খুবই কার্যকর। তবে প্রকৃতিতে পাওয়া বেশ কিছু প্রজাতির মাশরুম মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বুনো মাশরুম ও খেসারির ডাল- প্রতীকি ছবি
বাংলাদেশে খাবার হিসেবে গ্রহণের জন্য ৮ থেকে ১০ প্রজাতির মাশরুম চাষ করা হয়। তবে এর বাইরেও এমন কিছু মাশরুম আমাদের দেশের প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, যা খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পুষ্টিবিদদের মতে, পরিচিত বা চাষ করা মাশরুমের বাইরে অন্য প্রজাতির মাশরুম খাওয়া কখনোই উচিত নয়। বিশেষ করে বুনো মাশরুম। আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত এ মাশরুমে রয়েছে এক ধরনের ছত্রাক। যা খেলে মানুষের কিডনি ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
আলু: যেকোনো তরকারিতে অনায়াসে ব্যবহার করা যায় এই বারোমাসী সবজিটি। একক তরকারি হিসেবেও এই সবজিটির কদর সবার উপরে। কিন্তু আলু রান্না করার আগে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শেকড় জন্মানো আলুতে থাকতে পারে বিষাক্ত উপাদান।
আলু- প্রতীকী ছবি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুতে শেকড় গজালে সেখানে তৈরি হয় গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামের এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান। বিশেষ করে যেসব আলু দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে শেকড় গজিয়ে লাল রঙের গাদ তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে এই উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে। এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড খেয়ে ফেললে মানুষের মাথাব্যথা ও ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। এ বিষাক্ত উপাদানটি যদি ৩-৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে কোমায় চলে যাওয়াসহ মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
এ ছাড়া আলুতে কারসিনোজেনিক নামের সবুজ রঙের একটি পদার্থ দেখা যায়। যা মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই আলু রান্না করার আগে ভালো করে দেখে নেওয়া উচিত।
তেতো কাজু বাদাম: কাজু বাদাম সাধারণত দুই জাতের হয়ে থাকে। একটি তেতো, অপরটি মিষ্টি। উভয় ধরনের কাজু বাদামই খুবই পুষ্টিকর। কিন্তু তেতো কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড। যা মানব শরীরে প্রবেশের পর হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করে। তাই কাঁচা অবস্থায় কোনোভাবেই তিতকুটে কাজু বাদাম খাওয়া উচিত নয়।
কাজু বাদাম- প্রতীকী ছবি
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাঁচা অবস্থায় প্রতিটি তিতকুটে কাজু বাদামের ভেতর হাইড্রোজেন সায়ানাইড উৎপাদনকারী ৬ মিলিগ্রাম সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড থাকে। সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য ১০০ মিলিগ্রাম সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইডই যথেষ্ট।
টমেটো: মানুষের পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর অ্যালকালাই রয়েছে টমেটো গাছের কাণ্ড ও পাতার ভেতর। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ক্ষতিকর উপাদনটি কাঁচা টমেটোতেও রয়েছে। তাই কাঁচা টমেটো অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁচা টমেটো রান্না না করে খাওয়া উচিত নয়। এটি কাঁচা অবস্থায় খেয়ে নাকি অনেকের প্রাণহানিও ঘটেছে। আর টমেটো গাছের পাতা তো কোনো অবস্থাতেই খাওয়া উচিত নয়।
কাঁচা টমেটো এবং আপেল- প্রতীকী ছবি
আপেল: বিষাক্ত রাসায়নিকের মধ্যে অন্যতম হলো সায়ানাইড। এটি এতটাই বিষাক্ত যে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। আর এই বিষাক্ত রাসায়নিকটিই সামান্য পরিমাণে রয়েছে আপেলের বিচির মধ্যে।
পুষ্টিবিদরা বলেন, অনেকে আপেলের জুস তৈরি করে পান করেন। এমন জুস তৈরি করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এতে বিচি না থেকে যায়। তা না হলে এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বিচি বাদে আপেল শরীরে জন্য খুবই উপকারী।
কাসাভা: আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কাসাভা খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হলেও বাংলাদেশের সব জেলার মানুষের কাছে এটি খুব একটা পরিচিত নয়। তবে দেশের কিছু কিছু স্থানে এখন এটি খাওয়ার চল শুরু হয়েছে এবং অল্প পরিমাণে চাষও করা হচ্ছে।
কাসাভা ও মধু- প্রতীকী ছবি
পুষ্টিবিদদের মতে, কাসাভার শেকড় ও পাতায় অধিক পরিমাণে বিষাক্ত সায়ানাইড থাকে। যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই কাসাভা ঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া উচিত। তা না হলে এটি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
কাঁচা মধু: কাঁচা মধুর মধ্যে গ্রায়ানোটক্সিন নামের এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদন থাকে। যার এক চামচ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলেই বমি, ঘোর ঘোর ভাব লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বল লাগাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর যদি এই উপাদান বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই মধু পানের আগে সেটিকে ভালো করে পাস্তুরিত বা প্রক্রিয়াজাত করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
শিমের বিচি ও মটরশুঁটি: সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার শিমের বিচি ও মটরশুঁটি। কিন্তু এই দুটি শষ্যদানাতেই রয়েছে ক্ষতিকর ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
শিমের বিচি ও মটরশুঁটি- প্রতীকী ছবি
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শিমের বিচি বা মটরশুঁটি রান্নার আগে অবশ্যই সেগুলোকে অন্তত ১৫ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। তারপর সিদ্ধ করা পানি ফেলে দিয়ে নতুন করে রান্না করতে হবে।
কচু: শাক এবং সবজি দুইভাবেই খাওয়া হয় কচু। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট। যা মানুষের শরীরে চুলকানি ও গলা ফুলে যাওয়ার মতো এলার্জির সৃষ্টি করে। এই এলার্জির পরিমাণ বেড়ে গেলে মানুষের প্রাণহানিও হতে পারে।
তাই পুষ্টিবিদদের মতে, কচু খেলে সঙ্গে লেবু খাওয়া উচিত। কারণ অক্সালেটের সঙ্গে লেবু সমন্বয়কের কাজ করে।
কচু ও কামরাঙ্গা- প্রতীকী ছবি
কামরাঙ্গা: ভিটামিন সি-তে ভরপুর এ মৌসুমি ফলটি আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায়ই পাওয়া যায়। শরীরে ভিটামিন সি'র ঘাটতি পূরণে পুষ্টিবিদরাও সাধারণ মানুষকে এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যাদের স্নায়ুরোগ বা কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য টক জাতীয় এ ফলটি একেবারেই মানা। কারণ এতে থাকা এসিড স্নায়ুরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
ডিম: পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবারটি মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু আধা সিদ্ধ বা কাঁচা ডিম মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, গর্ভবতী নারীদের জন্য কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম খুবই ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.