রামাদানে ডায়াবেটিস রোগীর সতর্কতা
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ৩০ কোটিতে উপনীত হবে ২০২০ সালে। বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮ থেকে ২৫ শতাংশই মুসলমান। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থরাই সাধারণত রোজা রাখেন যার মধ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি ডায়াবেটিস রোগী। গবেষণা অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী এবং ৭৯ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী রমজান মাসে রোজা রাখেন।
রোজা পালনের নিয়ম হল ভোর রাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকা। পৃথীবির বিভিন্ন দেশে সিয়াম পালনের এই সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের দেশে এই সময়কাল সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা হয়।একজন ডায়াবেটিস রোগীর এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে বহু বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে পৃথিবীর অনেক মুসলিম ও অমুসলিম ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন, ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। পবিত্র কুরআনেও (সুরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৩-১৮৫) রোগাক্রান্তদের জন্য রোজাপালনে রেহাই দেয়া হয়েছে।
নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে ডায়াবেটিস নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের বিপর্যস্ত বিপাকীয় তন্ত্রের কারণে দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ডায়াবেটিস রোগী রমজান মাসে ধর্মীয় প্রচণ্ড আগ্রহের কারনে রোজা রাখতে চান এক্ষেত্রে তাঁকে নিষেধ করাও সম্ভব না। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডায়বেটিস রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে নিরুৎসাহীত করেন।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রোজা পালনের কারণে কি কি সমস্যা হতে পারে এবং তা থেকে কিভাবে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা যায় তা নিয়ে সম্যক ধারণা দেয়া হল-
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালনের যত ঝুঁকি
- দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমতে থাকে। একারণে রোজা রাখায় ডায়বেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ এতটাই কমে যেতে পারে যে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হতে পারে। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়াকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। টাইপ- ১ ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এরূপ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৪.৭ গুণ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ৭.৫ গুণ বেশি।
- রোজা রাখার কারণে টাইপ-১ ও টাইপ-২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কিছুটা ঝুঁকিটাও থাকে। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ থেকে জীবননাশেরও আশংকা দেখা দেয়।
- রোজা শুরুর আগে টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের গ্লুকোজ সঠিক মাত্রায় না থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়া বা কিটোনবড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা হতে পারে।
রোজা পালনের সময় দীর্ঘক্ষণ পানি বা পানীয় খাদ্য গ্রহণ না করার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা (ডিম্বইডেশন) দেখা দিতে পারে। গরম ও বেশি আদ্র আবহাওয়ায় পানিশূন্যতা আরও প্রবলভাবে দেখা দিতে পারে। রক্তে বেশিমাত্রায় গ্লুকোজ থাকলে শরীর থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যাওয়ার হার অনেক বেড়ে গিয়ে বসা বা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরে যেতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিয়েছে এমন ব্যক্তির এ সময় সহসা জ্ঞান হারানো, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার মত দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
কিভাবে সতর্ক থাকবেন
রোজা রাখা একান্তভাবেই ডায়াবেটিস রোগীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীই রোজা রাখলে কম বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যান। এক্ষেত্রে যা করবেন-
- প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সাথে এটি লক্ষ্য করতে হবে।
- প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিমান অন্যান্য সময়ের মতোই রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে ২০%-২৫% ডায়াবেটিস রোগীর দৈহিক ওজন এইসময় বাড়ে বা কমে। স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে হবে।
- ইফতারে চর্বিসমৃদ্ধ খাদ্য এবং তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর পরই যত দ্রুত সম্ভব রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সেহরির সময় খাওয়া জরুরি। সহজে হজম হয় এমন খাবার এবং প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে।
- এ সময় খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভাল। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কঠোর শ্রম বিকাল বেলায় একেবারেই নয়। তারাবি নামাজকে শারীরিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোন লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে যতটা সম্ভব দ্রুত গ্লুকোজ/চিনি/মিষ্টি কোন খাদ্য/সরবত ইত্যাদি যে কোন একটি খেয়ে নিতে হবে। যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে, তারা এটি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। বুক বড় ধড়ফরানি, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগা, ঘাম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা ঘোরা ইত্যাদির এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝবেন এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া। যারা ইনসুলিন, সালফুনাইন ইউরিয়া মেগ্লিটিনইড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা বেশি। রক্তের গ্লুকোজ ১৬৭ মিলিমোল/লিটার এর বেশি হলে রোজা রাখা সম্ভব হবে না।
যেসব ডায়াবেটিস রোগী ঝুকিঁ নিয়েও রোজা রাখতে চান, তাদের উচিত রোজা শুরুর কমপক্ষে ১ মাস আগে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেয়া। এর মধ্যে আছে খালি পেটে ও খাবার খেয়ে ২ বার পরীক্ষা করে জেনে নেয়া।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে ও সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে রোজা পালন করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
আপনি আরও পড়তে পারেন
যেভাবে রোজায় সুস্থ থাকবেন
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালন
ফলমূল কখন খাবেন, কয়টা খাবেন
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.