আপনি পড়ছেন

ইসলাম ধর্মে ব্যভিচার এবং অশ্লীলতাকে কবিরা গুনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওয়ালা তাকরাবুজজিনা।’ যার অর্থ- ওহে, তোমরা জিনার কাছেও যেও না। ইসলামী রাষ্ট্রে জিনা-ব্যভিচার এবং অশ্লীলতার দিকে মানুষের মনকে নিয়ে যায় এমনসব কাজকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। নারীর সম্ভ্রমহানির শাস্তির বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা কি? আসুন কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তা জেনে নিই।

al quran

১. নারীর সম্ভ্রম মানুষের জীবনের মতোই পবিত্র এবং দামি

নারীর সম্ভ্রমকে ইসলাম জীবনের মতোই নিরাপদ এবং পবিত্র বলে ঘোষণা করেছে। ড. আহমদ আলী ইসলামের শাস্তি আইন বইয়ে উল্লেখ করেছেন, হজরত ওমর (রা.) এর সময়ে এক ব্যক্তি একজন নারীর সম্ভ্রমহানি করার চেষ্টা করলে ওই নারীর স্বামী লম্পট ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেন। এই ঘটনা শুনে খলিফা ওমর (রা.) বলেন, আমি হত্যাকারীকে কোনো শাস্তি দিতে পারবো না। কেননা সে তার স্ত্রীর সতীত্ব রক্ষা করতে গিয়ে একজন লম্পটকে হত্যা করেছে।

২. নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করা ফরজ

ড. আহমদ আলী তাঁর বইয়ে এ বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইসলামী আইন মতে নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করা সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার, ব্যক্তির ওপর ফরজ। কোন নারীর সম্ভ্রমের ওপর আঘাত আসলে যথাসাধ্য শক্তি নিয়ে তা প্রতিহত করা সবার দায়িত্ব। এর ফলে যদি সম্ভ্রমহানি করতে আসা লম্পটের মৃত্যু ঘটে তাহলে ইসলামি শরীয়ত মতে লম্পটকে হত্যার জন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং নারীর সম্ভ্রম বাঁচাতে যারা লড়াই করেছে তাদেরকে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না।

৩. ঘটনার পর আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না

মনে রাখতে হবে, লম্পট ব্যক্তি বা তার দল যদি আপসে ধরা দেয় বা আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাকে আঘাত করা কিংবা তার ওপর নির্যাতন চালানো আইন হাতে তুলে নেওয়ার শামিল হবে। লম্পট ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নির্যাতিতা নারী কিংবা তার পক্ষের কেউ তখনই সংঘর্ষ জড়াতে পারবে যখন লম্পট ব্যক্তি বা দল নারী কিংবা নারীপক্ষের লোকের ওপর চড়াও হবে। শুরুতে যদি লম্পট আত্মসমর্পণ করে ফেলে তাহলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করে দিতে হবে। রাষ্ট্র তার বিচার করবে।

৪. ধর্ষণ এবং ব্যভিচারের শাস্তি এক

ইসলামি স্কলাররা এ বিষয়ে একমত যে, ধর্ষণ এবং ব্যভিচারের শাস্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ব্যভিচার করার কারণে যে ধরনের শাস্তি ইসলামে নির্ধারণ করা আছে, ধর্ষণের বেলায়ও একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

goldsmith teaches the holy Quran

৫.  ধর্ষণের শাস্তি শুধু পুরুষের হবে, নারীর নয়

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতালা ব্যভিচারের শাস্তি বর্ণনা করতে গিয়ে নারী এবং পুরুষের শাস্তি দুটোই একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইসলামী স্কলাররা বলেছেন, ব্যভিচার এবং ধর্ষণের মাঝে বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। ব্যাভিচার হয় দুজনের সম্মতি ক্রমে আর ধর্ষণ হয় একজনের বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। ধর্ষণে যেহেতু নারীর ওপর বল প্রয়োগ করা হয় তাই ইসলামী স্কলাররা এক্ষেত্রে নারীকে মজলুম বা নির্যাতিতা বলেছেন এবং ব্যভিচারের শাস্তি শুধু পুরুষের জন্য প্রযোজ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

৭. অবিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত

পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াতের আলোকে ধর্ষণ যদি অবিবাহিত পুরুষ কর্তৃক হয়ে থাকে তাহলে তার শাস্তি হবে প্রকাশ্যে একশ বেত্রাঘাত। বিচারক যদি মনে করেন এই শাস্তির পাশাপাশি তাকে আরো অন্য কোনো শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।

৭. বিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

সূরা নূরের দুই নম্বর আয়াতের আলোকে ধর্ষক যদি বিবাহিত হয় তাহলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ি এবংআহমদ ইবনে হাম্বলের মত এটা। তবে ইমাম মালেক (রহ.) এর মতে ধর্ষক বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত যেমনই হোক তাকে নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে।

৮. কোরআনে ধর্ষকের শাস্তি

ক. যারা বলেন অবিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং বিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড তাদের দলিল হলো সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, 

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّـهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿٢﴾ الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: প্রত্যেক ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে (ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে) একশত বেত মারবে। আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাকলে এ বিধান কার্যকর করতে গিয়ে আবেগ বা দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে। আর ওদের শাস্তি দেয়ার সময় যেন বিশ্বাসীদের একটি দল উপস্থিত থাকে।

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) বিবাহিত ব্যভিচারীকে বেত্রাঘাত করেননি, পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছিলেন। ফলে ফকিহরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

খ. ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ধর্ষণ আর ব্যভিচার এক নয়। ধর্ষণ হলো সমাজে এক ধরনের ত্রাস সৃষ্টি করা। তাই তাকে সমাজে লুন্ঠণ-লুটতরাজ করার শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। ধর্ষক বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হোক না কেনো তার জন্য এ শাস্তিই প্রযোজ্য। ইমাম মালেকের দলিল হলো সূরা মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াত। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের প্রাপ্য শাস্তি হচ্ছে, হত্যা বা শূলে  চড়ানো অথবা হাত-পা কেটে (পঙ্গু বা ক্ষমতাহীন করে) দেয়া বা নির্বাসিত করা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.