আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় লিখন

যুব দলের গণ্ডি পেরিয়েই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান জোবায়ের হোসেন লিখন। এরপর একে একে অভিষেক হয় তিন ফরম্যাটেই। কিন্তু যুতসই পারফর্ম না করতে পারায় আবার বাদও পড়েন খুব তাড়াতাড়ি। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে সর্বশেষ খেলেছেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। তবে দমে যাননি। নিজেকে প্রমাণ করতে তাই আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন জামালপুরের এই লেগ স্পিনার।

জোবায়ের হোসেন লিখন

ক্রিকেটে নিজেদের উত্থানের পর একে একে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মোর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের মতো ক্রিকেটার পেয়েছে বাংলাদেশ। যারা বিশ্বের দরবারে প্রতিনিয়তই ৪৮ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্রটিকে তুলে ধরছেন। এতোসব নামজাদা ব্যাটসম্যান, অলরাউন্ডার কিংবা পেসারদের ভিড়ে একজন বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার যেন দূর আকাশের চাঁদ হয়েই ছিল।

অবশেষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে অভিষেক হয় দেশের প্রথম বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার লিখনের। পরবর্তীতে ওই একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক পথচলা শুরু হয় তার। এখন পর্যন্ত ৬ টেস্ট এবং ৩ ওয়ানডে খেলেছেন এই বোলার। যেখানে সংগ্রহ যথাক্রমে ১৬ ও ৪ উইকেট। অন্যদিকে একমাত্র কুড়ি ওভারের ম্যাচ থেকে লিখনের শিকার ২ উইকেট।

২০১৫ সালের শেষদিকে নিজের টি-টোয়েন্টি অভিষেকই হয়ে আছে লিখনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। তবে আশা ছাড়েননি এই লেগি। এখনও স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে ফেরার। আর সেই সুযোগটা পেলে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। দেখাতে চান এখনও দেশকে অনেক কিছুই দেওয়ার আছে তার।

সম্প্রতি টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিখন বলেন, ‘দেশকে অনেক কিছুই দেওয়ার আছে আমার। নিজের লক্ষ্যেই আছি। নিয়মিত প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছি। আমার বয়স মাত্র ২৫ বছর। অনেকে ৪০ বছর পর্যন্তও খেলে। সে হিসেবে এখনও অনেক সময় আছে খেলার। তাই আমি হাল ছাড়িনি। শুধু আরেকটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আশাকরি সুযোগটা পেলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব।’

দলে ফিরতে ফিটনেসটা খুবই জরুরি। তাই বসে নেই এই বোলার। লকডাউনে সবাই যখন ঘরে বন্দি থেকেছে ঠিক তখন অনেকটা নিরবেই ফিটনেসের কাজ করে গেছেন লিখন, ‘ফিটনেসের বিকল্প নেই। তাই ব্যক্তি উদ্যোগেই রানিং, জিমের কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি ডে বাই ডে ইমপ্রুভ করার।’

অভিষেকের পরই সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রশংসা কুড়াতে থাকেন লিখন। অল্পতেই সবাই তাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করে। সাকিব তো সাংবাদিক সম্মেলনে বলেই বসেন, টেস্টে ৩০০-৪০০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে তার। অথচ সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। প্রত্যাশা না মেটাতে পারায় এখন দলের বাইরে এই তরুণ লেগ স্পিনার।

এজন্য কি নিজেকে দোষী মনে হয়? লিখনের সরল স্বীকারোক্তি, কিছু ভুল ছিল আমার। তবে এখন ওসব থেকে বের হয়ে এসেছি, ‘মানুষ পারেনা এমন কিছু নেই। আমার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে। হয়তো তখন বয়সটা কম ছিল। তাই অনেক কিছুই বুঝতে পারেনি। ভুল হয়ে যেতো। এখন এগুলো নিয়েই কাজ করছি। ভুল মানুষেরই হয়। তবে আশা করছি এসব ভুল পুনরায় আর হবেনা।’

তবে জাতীয় দলে ফেরাটা যে এত সহজ হবেনা সেটাও মানছেন লিখন। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা। কিন্তু সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) খেলেন ২০১৮ সালে মোহামেডানের হয়ে। সে আসরে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়। জাতীয় লিগেও অনিয়মিত। তাই এতোকিছুর ভিড়ে কিছুটা কষ্ট আছে তার। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে তার একটাই চাওয়া, নিয়মিত যেন তাকে ঘরোয়া লিগে সুযোগ দেওয়া হয়।

এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি যদি একটা বছর পুরোপুরি ঘরোয়া লিগে খেলতে পারি তাহলে আবার ভালোভাবে ফিরে আসতে পারবো। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে। নিয়মিত পরিশ্রমও করে যাচ্ছি। তাই বিসিবির কাছে অনুরোধ থাকবে আমাকে যেন ঘরোয়া লিগে সুযোগ দেওয়া হয়।’