আপনি পড়ছেন

যে ধরনের অপবিত্রতার কারণে গোসল ফরজ হয় না, অজু করাই যথেষ্ট- এমন অবস্থায় কোরআন স্পর্শ না করে দেখে অথবা মুখস্থ তেলাওয়াত করা সব ইসলামী বিশেষজ্ঞের মতে জায়েজ। প্রখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ইমাম ইয়াহইয়া আন-নববী (রহ.) বলেন, ‘মুসলমানদের ইজমা হলো, ছোট অপবিত্রতা অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ, তবে উত্তম হলো পবিত্র হয়ে নেওয়া।’ শরহে মুহাজজাব, ভলিউম ২, ৭১ পৃষ্ঠা।

al quran

ফকিহরা যেসব হাদিসের ওপর গবেষণা করে এ মাসআলাটি বের করেছেন সে হাদিসগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

মূলত মুসলিম শরিফে হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসকে ভিত্তি করে আলেমরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। হাদিসটি হলো, আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকিরে থাকতেন।’

হাদিসে জিকির শব্দটি আম তথা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের একটি নাম হল জিকির। তাই আয়শার (রা.) বলা জিকির শব্দের মধ্যে কোরআনও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আরো স্পষ্ট করে ছোট অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াতের বৈধতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসটি আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ এবং মুসনাদে আহমাদে বর্নিত হয়েছে।

আলী (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বের হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং আমাদের সঙ্গে মাংস খেতেন। বড় অপবিত্রতা তথা গোসল ফরজ না হলে অন্য কোনো কারণেই তিনি কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকতেন না।’

ইমাম তিরমিজি এ হাদিসটির শেষে অতিরিক্ত এতটুকু যোগ করেছেন যে, ‘নবী (সা.) এর সাহাবি, তাবেয়িরা বলেন- ‘আমাদের লোকেরা অজু ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত করে এবং পবিত্র না থাকলে মাসহাফ অর্থাৎ কোরআনের কপি থেকে তেলাওয়াত করে না। ইমাম তিরমিজি এ হাদিসকে হাসান সহি বলেছেন।’

এ হাদিস প্রমাণ করে যে, ছোট অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা সম্পূর্ণ জায়েজ এবং রাসুল (সা.) নিজে এই আমল করেছেন। সাহাবিরা এবং তাবেয়িরাও এমনটি করতেন।

অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের মতে তিরমিজির বর্ণিত হাদিসটি বিশুদ্ধ। তবে এই হাদিসটি ভুল হওয়ার সম্ভাবানও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোনো কোনো মুহাদ্দিস এ হাদিসটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। যেহেতু এটি ‘হাসান হাদিস’, আর হাসান হাদিসের রাবির স্মরণ শক্তি দুর্বল থাকে, এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

আলবানি হাদিসটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেছেন। অন্য দিকে ইবনে হাজার আসকালানি বলেছেন, হাদিসটি ভালোভাবেই গ্রহণ করা যেতে পারে। মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ-শাওকানি, নাইলুল আওতার, ভলিউম ১, ২৮৩; নাসিরুদ্দিন আলবানি, ইরওয়াউল গালিল, ভলিউম ২, পৃষ্ঠা ২৪৫।

আমরা এই গভীর বিশ্লেষণে এ ধরনের বিতর্কিত হাদিসকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই না। বরং এরচেয়েও আরো বেশি শক্তিশালী একটি হাদিস আমরা উপস্থান করছি। এটি সহি বুখারিতে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।

al quaran

ইবনে আব্বাস বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুল (সা.) এর স্ত্রী এবং আমার মামী মাইমুনা (রা.) ঘরে ছিলাম। গভীর রাতে রাসুল (সা.) ঘুম থেকে উঠলেন। তিনি চোখ রগড়ে ঘুম দূর করলেন। তারপর সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। তেলাওয়াত শেষে তিনি বিছানা থেকে উঠে অজুর জন্য চলে গেলেন। অজু করে এসে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন।’

এই হাদিস থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিনা অজুতে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ। তবে বিশেষজ্ঞ আল-মুনির মনে করেন, এ হাদিসটিও দলিল হিসেবে গ্রহণ হতে পারে না। আল মুনিরের যুক্তি হলো, সাধারণ মানুষ ঘুমালে অজু ভেঙে যায় ঠিকই, কিন্তু রাসুল (সা.) এর ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। কেননা, বুখারির বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি ঘুমালেও আমার চেতনা-আত্মা-হৃদয় ঘুমায় না।’

ইবনে হাজার আসকালানির কাছে আল-মুনিরের যুক্তিগুলো শক্তিশালী মনে হয়েছে। যারা মনে করেন, অজু ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ নেই, তাদের জন্য এ ধরনের যুক্তিগুলো চমকপ্রদ।

কিন্তু এ হাদিসটির দিকে সরাসরি তাকালে দেখা যায়, নবীজি (সা.) ঘুম থেকে জেগে তেলাওয়াত করেছেন এবং নামাজের জন্য অজু করেছেন। আমাদের জানার কোনো উপায় নেই, কোনো উপায়ে ঘুমের ভেতরই নবী (সা.) অজু করেছেন কি না? তাছাড়া অধিকাংশ স্কলারের মতে অজু ছাড়া মুখস্ত কোরআন তেলাওয়াত জায়েজ। এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে বলেও উদ্ধৃতি দিয়েছি।

হজরত আয়শা এবং ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত এ দুটো হাদিস আমাদের পক্ষে শক্তিশালী দলিল। তবে এ ব্যাপারে এখানেই কথা শেষ নয়। সুনানে আবু দাউদ এবং মুসনাদে আহমাদে একটি শক্তিশালী হাদিস রয়েছে, যা থেকে মনে হতে পারে আমাদের দলিলগুলো যথেষ্ট নয়।

হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে সাহাবি মুহাজির ইবনে কানফিদ (রা.) থেকে। তিনি বলেন, ‘একদিন আমি রাসুল (সা.) কে সালাম দিলাম। তখন তিনি অজু করছিলেন। সালামের উত্তরের আশায় আমি নবীজির (সা.) দিকে তাকিয়ে রইলাম। উত্তর পেলাম না। এর মধ্যে নবীজির (সা.) অজু শেষ হয়ে গেলো।

রাসুল (সা.) আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ভেবো না আমি তোমার প্রতি রাগ করেছি তাই সালামের উত্তর দেইনি। আসলে আমি অপবিত্র অবস্থায় আমার প্রভুর জিকির করাকে পছন্দ করি না।’

এমনভিাবে বুখারি ও মুসলিমে আবু জাহম আল হারেস থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) বীরে জামাল থেকে ফেরার সময় এক ব্যক্তি হজরতের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। লোকটি রাসুল (সা.) কে সালাম বলল। কিন্তু রাসুল (সা.) সালামের উত্তর দেননি।

যখন রাসুল (রা.) একটি দেয়ালের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন তিনি দেয়ালে হাত স্পর্শ করে তায়ামুম্ম করলেন এবং সালামের উত্তর বললেন।’

এ দুটি হাদিস প্রমাণ করে ছোট অপবিত্র অবস্থায়ও আল্লাহর ‘জিকির’ করা নিষেধ। আর এ নিষেধ আরো বেশি কার্যকর হবে কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে।

এ হাদিসগুলো সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের সিদ্ধান্ত হলো, হজরত আয়শা এবং ইবনে আব্বাসের হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, অজু ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েজ। আর মুহাজির ইবনে কানফিদ এবং আবু জাহাম ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, অজুসহ আল্লাহর জিকির, তেলাওয়াত করা মুসতাহাব বা ভালো।

প্রখ্যাত ইংরেজ ইসলামিক স্কলার  ড.জামাল আল দ্বীন এম. জারাবোজের বিখ্যাত গ্রন্থ হাউ টু অ্যাপ্রোচ অ্যান্ড অ্যান্ডারাস্ট্যান্ড দ্য কোরআন গ্রন্থের দ্য রিকয়ারমেন্ট অব তাহারা রিসেটিং অ্যান্ড টাচিং দ্য কোরআন অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.