গত ২৫ আগস্ট ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্সেলোনাকে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তার দলবদল সিদ্ধান্ত তোলপাড় করে ফেলেছিল ফুটবল দুনিয়াকে। কয়েক দিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে শুক্রবার রাতে। মেসি থাকছেন বার্সাতেই। কিন্তু কেন বার্সা ছাড়তে চেয়েছেন মেসি? কেনই বা শেষ পর্যন্ত তার দলবদল হলো না। এসব বিষয় নিয়ে ‘স্পেন গোলে’র সঙ্গে কথা বলেছেন। মেসির সেই পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

dembele suraez and messi barcelona

নীরাবতা ভাঙার জন্য এই সময়টাকেই কেন বেছে নিয়েছেন?

মেসি: প্রথম কারণ, লিসবনে কঠিন হার (বায়ার্ন মিউনিখ ৮-২ বার্সেলোনা)। আমরা জানতাম বায়ার্ন মিউনিখ খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমরা এভাবে শেষ করতে চাইনি। ওই শহরে বার্সেলোনার বাজে একটা ছবি ফুটে উঠেছে। আমরা খুব বাজে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। এটা ঠিক নয়। এমনকিছু হবে এটা আমরা চাইনি। আমি সময় চেয়েছিলাম সবকিছু ঠিক করার জন্য।

বার্সাকে কেন বলেছেন যে আপনি চলে যেতে চান?

মেসি: আমি ক্লাব এবং প্রেসিডেন্টকে (হোসেপ মারিয়া বার্তেমিউ) বলেছিলাম আমি চলে যেতে চাই। সারা বছরই আমি এটা বলে আসছি। আমার মনে হয়েছে চলে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়। মনে হয়েছে ক্লাবে এখন আরো অনেক নতুন এবং তরুণ ফুটবলার দরকার। ভেবেছিলাম বার্সায় আমার সময় শেষ। আমার খুব খারাপ লেগেছিল কারণ, আমি সবসময়ই বলেছিলাম এখানে থেকেই আমি ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই। এটা কঠিন একটা বছর ছিল। অনুশীলনে, ম্যাচে এবং ড্রেসিংরুমে আমাকে অনেক ভুগতে হয়েছে। আমার জন্য সবকিছু কঠিন হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্তটা কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের বিপেক্ষর ফলটার কারণে নয়। আমি অনেকদিন ধরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছিলাম। আমি প্রেসিডেন্টকে বলেছি কিন্তু প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছেন, মৌসুম শেষে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি থাকব নাকি চলে যাবো।

নিজেকে কি একা মনে হয়েছে কখনো?

মেসি: না, আমি কখনোই একা ছিলাম না। সবসময়ই আমার পাশে কেউ না কেউ ছিলেন। এটা যথেষ্ঠ এবং আমাকে শক্তি জোগাত। কিন্তু আমার কাছে খারাপ লাগত যখন মানুষ, সাংবাদিকরা বার্সেলোনায় আমার নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করতেন। আমি এসবের প্রাপ্য ছিলাম না। সত্যিকারের মানুষ চিনতে এটা আমাকে সহায়তা করেছে। এই পৃথিবীর ফুটবল খুব কঠিন এবং অনেক মিথ্যে মানুষ রয়েছে। মিথ্যা মানুষকে চিহ্নিত করতে এসব ঘটনা আমাকে সহায়তা করেছে। খুব কষ্ট পেয়েছি যখন ক্লাবের প্রতি আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যাহোক, এটা ব্যাপার না আমি কতদিন থাকব বা চলে যাবো। কিন্তু বার্সেলোনার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনোই পাল্টাবে না।

বার্সায় ২০ বছরে আপনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে কোন ব্যাপারটা?

মেসি: আমার বন্ধু, টাকা-পয়সা এবং অনেককিছুই আমাকে একটু আধটু কষ্ট দিয়েছে। আমি সবসময় ক্লাবকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখি। কয়েকবারই আমার বার্সা ছাড়ার সম্ভাবনা ছিল। অর্থের কথা বলবেন? বার্সেলোনায় আমি প্রতিবছরই বেশি অর্থ আয় করি। আমি সবসময়ই বলি বার্সা আমার বাড়ি। এখানকার চেয়েও ভালোকিছু খোঁজার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। আমি ক্লাবকে পরির্বতন করতে চেয়েছিলাম নতুন লক্ষ্য এবং অন্যকিছুর মাধ্যমে।

দিন শেষে আপনি বার্সেলোনায় থাকছেন এবং আপনি এখনো বার্সেলোনাতেই। কিন্তু কখন আপনি ক্লাব বদলের সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন?

মেসি: অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়টা কঠিন ছিল। এটা বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচের ফল থেকে নেওয়া হয়নি। আরো অনেক কারণ ছিল। আমি সবসময়ই বলেছি আমি এখানে থেকেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই এখানেই থাকতে চাই। আমি ক্লাবের হয়ে আরো শিরোপা জিততে চেয়েছি। বার্সাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু সত্যিটা হলো অনেকদিন ধরেই এখানে কোনো লক্ষ্য নেই।

যখন পরিবারকে বার্সেলোনা ছাড়ার কথা বলেছিলেন তখন কী হয়েছিল?

মেসি: যখন আমি আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সিদ্ধান্তটা জানাই তখন একটা নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পুরো পরিবার কাঁদছিল। তারা চায়নি যে আমি বার্সেলোনা ছাড়ি। বাচ্চারা ওদের স্কুলও পরিবর্তন করতে চায়নি। আমি শুধু দূরটাই দেখছিলাম। চেয়েছিলাম সর্বেচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলতে শিরোপা জিততে। চ্যাম্পিয়নস লিগে লড়াই করতে চেয়েছিলাম। আপনি এখানে জিততে পারেন কিংবা হারতেও পারেন। কিন্তু আপনাকে লড়াই করতে হবে। যা খুব কঠিন ছিল। আমি অন্তত চেয়েছিলাম লিভারপুল, রোমের ঘটনা যাতে লিসবনে না ঘটে। এসবকিছু আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে।

আমি কাঁদতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল আমি মুক্ত হয়ে গেছি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছিলেন আমার চলে যাওয়ার একটাই উপায় আছে। তা হলো ৭০০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করা। যা অসম্ভব। আরেকটা উপায় ছিল আইনি লড়াই। কিন্তু আমি কখনোই বার্সার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারব না। কারণ এই ক্লাবটাকে আমি ভালোবাসি, আমি এখানে আসার পর থেকে তারা আমাকে সবকিছু দিয়েছে। এই ক্লাবটা আমার জীবন। আমি এখানে থেকেই আমার জীবন তৈরি করেছি। বার্সা আমাকে সবকিছু দিয়েছে এবং আমিও তাদের সবকিছু দিয়েছি। আমার মনে কখনো এমন ভাবনা আসেনি যে বার্সাকে আদালতে নেব।

বার্সায় কোন বিষয়টা আপনাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে?

মেসি: প্রচার করা হয়েছে যে আমি নিজের স্বার্থের জন্য বার্সার বিরুদ্ধে যাচ্ছি। এটা খুব কষ্ট দিয়েছে আমাকে। মানুষ না জেনেই এসব বলেছে। আমি কখনোই এমনকিছু ভাবিনি। আমি সুন্দর একটা বিদায় চেয়েছিলাম। কোনো ঝামেলা বা সংঘাত চাইনি। চুক্তিপত্রে লেখা ছিল আমি চলে যেতে পারবো। আমি চলে গেলে হয়তো অনেক মূল্য দিতে হতো। তবে সাম্প্রতিককালে আমি ক্লাবে সুখ খুঁজে পাইনি।

তাহলে সুখ ব্যাপারটাই কি আসল? আপনি বার্সাকে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন, পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন এবং কিছু বিষয় পাল্টাতে চেয়েছিলেন, এসব কি ঠিক?

মেসি: আমি বার্সায় খেলে যাবো এবং আচরণ কখনোই পাল্টাবে না। যদিও আমি বার্সা ছাড়তে চেয়েছিলাম। আমি আমার সেরাটাই দেব। আমি সবসময় জিততে চাই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। কোনো হারই আমি পছন্দ করি না। ড্রেসিংরুম এবং নিজের জন্য আমি সবসময়ই ক্লাবকে সেরা হিসেবে দেখতে চাই। একটা পর্যায়ে আমি বলেছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য কোনো সমর্থন পাইনি। সত্যি বলতে আমি জানি না কী হয়েছে। নতুন কোচ এসেছেন নতুন ভাবনা থাকবে তার। এটা ভালো। কিন্তু এই ভাবনা দলে কতটা কার্যকর প্রভাব রাখছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত আমি বলতে পারি আমি থাকছি, বার্সেলোনায় সেরাটা দিতে যাচ্ছি।

আপনার কী মনে হয়, কেন মানুষ ভেবেছে আপনি বার্সা ছাড়তে পারেন বা ক্লাবকে নিয়ে আপনি আর ভাবছেন না? এতে করে আপনার আবেগ বা ক্রোধ কোন পর্যায়ে ছিল?

মেসি: আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যখন বার্সেলোনায় আমার নিবেদন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। আমি বার্সেলোনাকে ভালোবাসি এবং এরচেয়ে ভালোকোনো জায়গা খুঁজতে যাইনি আমি। কিন্তু আমি এখনো বলব আমার সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল (বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত)। আমি নতুন লক্ষ্য এবং চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম। হয়তো আগামীকালই আমি ফিরে আসতাম। কারণ বার্সেলোনায় আমার সবকিছু। আমার ছেলেরা এবং পরিবার এখান থেকেই বেড়ে উঠেছে। আমি চলে যেতে চেয়েছি, এখানে ভুল কিছু দেখছি না। আমার এটার দরকার ছিল, ক্লাবেরও দরকার ছিল এবং এটা সবার জন্য ভালো হতো।

টিভি কিংবা পত্রিকায় খবর দেখে আপনার পরিবারের লোকজন আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন?

মেসি: সবসময় সবার জন্যই এটা কঠিন ছিল। আমি যা চেয়েছিলাম এটা পরিষ্কার ছিল খবরে। সবাই কষ্ট পাচ্ছিলেন আমার স্ত্রী, সমর্থকরা, সেটা বুঝতে পারছিলাম। মাতেও এখনো অনেক ছোট। ও কিছু বুঝতে পারছে না যে কী চলছে এসব। থিয়াগো আমার কাছে কান্নাকাটি করছিল এবং বলছিল তুমি যেও না। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা কঠিন ছিল।

আপনি বার্সায় থাকছেন এবং আবারো নেতৃত্ব দেবেন। বার্সা সমর্থকদের জন্য ভবিষ্যতের কোনো বার্তা দেবেন আপনি?

মেসি: স্বভাবতই আমি সেরাটা দিতে যাচ্ছি। আমি জানি এই বছরটা সমর্থকদের জন্য বাজে কেটেছে, আমার জন্যও। করোনাভাইরাস বাজে একটা সময় নিয়ে এসেছে। মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, অনেকে অনেককিছু হারিয়েছেন। আশা করছি আমি আমার সেরাটা দিতে পারব এবং জয়ের জন্য আমার নিবেদনে কোনো ঘাটতি থাকবে না। মানুষ বাজে সময় কাটিয়েছে, আমরা তা ভুলিয়ে দিতে চেষ্টা করব। অবশ্যই চেষ্টা করব এই ভাইরাস থেকে বেরিয়ে আসার এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার।

আপনি কেন ব্যুরোফ্যাক্সকে সিদ্ধান্ত জানানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন?

মেসি: ব্যুরোফ্যাক্সে আনুষ্ঠানিক একটা ব্যাপার কাজ করে। যদিও সারা বছর আমি প্রেসিডেন্টকে ক্লাব ছাড়ার কথা বলে আসছি। তিনি আমাকে বলতেন, ‘‘আমরা এটা নিয়ে কথা বলব, কিন্তু এখন নয়’’। এরবেশি কিছু হয়নি। প্রেসিডেন্ট কী চান সেটার ইঙ্গিত তিনি কখনো আমাকে দেননি। ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি, আমি চলে যেতে চাই। আমি চলে যাওয়ার জন্য এটা ব্যবহার করিনি। আমি আসলেই চলে যেতে চেয়েছিলাম।

তার মানে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আপনি ব্যুরোফ্যাক্স ব্যবহার করেছেন?

মেসি: হ্যাঁ, বিষয়টা পরিষ্কার জন্য। আমি যদি ব্যুরোফ্যাক্স ব্যবহার না করতাম তাহলে তেমনকিছু হতো না। আমি একটা ঐচ্ছিকতা রাখতে চেয়েছিলাম। মৌসুমের মাঝপথেও বলেছিলাম, যদিও ওটা সঠিক সময় ছিল না। প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছিলেন মৌসুম শেষ হলে আপনি থাকবেন না চলে যাবেন তখন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে। কিন্তু তিনি কখনোই নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলেননি আমাকে। তিনি তার কথা রাখেননি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.