আর্জেন্টাইনকে লাথি: মুখ খুললেন বেকহ্যাম

খুব সম্ভবত ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে আধুনিক খেলোয়াড় ছিলেন ডেভিড বেকহ্যাম। বেশ কয়েক বছর আগে অবসর নিলেও ইংলিশ কিংবদন্তির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। এই বেকহ্যামই ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রিটিশদের কাছে খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। ম্যাচে দেখেন লাল কার্ড; ১০ জনের ইংল্যান্ডও ছিটকে যায় বিশ্বকাপ থেকে।

শেষ ষোলোর সেই ম্যাচে অতিরিক্তি সময়ের খেলা শেষে ২-২ গোলে অমীমাংসিত থেকে। পরে টাইব্রেকে ইংরেজদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। ফেভারিট ইংল্যান্ড স্বপ্নপূরণের পথেও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। সব শেষ হয়ে গেছে বেকহ্যামের একটা ভুলে।

ম্যাচে আর্জেন্টিনা ফুটবলার ডিয়েগো সিমন (বর্তমানে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের প্রধান কোচ) ফাউল করেন বেকহ্যামকে। মাটিতে পড়ে যান ইংলিশ সেনসেশন। তার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন সিমন। তখনই মাটিতে শোয়া অবস্থাতেই পা তুলে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারকে লাথি মেরে বসেন তিনি। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সিমনকে হলুদ কার্ড দেন রেফারি।

আর বেকহ্যাম দেখলেন সরাসরি লাল কার্ড। ওই ম্যাচ শেষে ইংলিশদের চোখে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন স্টাইলিশ মিডফিল্ডার। ক্ষুব্ধ জনতার কেউ তাকে হত্যারও হুমকি দেন। ব্রিটিশ মিডিয়া তো রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছিল বেকহ্যামকে। পরদিন ডেইলি মিরর শিরোনাম করে, ’১০ জন সিংহ পুরুষ ও একজন বেকুব।’ বেকহ্যামকে যে ‘বেকুব’ বলা হয়েছে তা পরিষ্কার।

দীর্ঘ ২২ বছর পর ওই লাল কার্ড ও ফাউল নিয়ে কথা বললেন বেকহ্যাম। জানালেন সিমনকে লাথি দেওয়াটা তার ভুল ছিল। সেই দুঃস্বপ্ন ঘুচিয়ে বেকহ্যাম ফিরেও এসেছিলেন। মন জয় করে নেন ইংলিশদের। বেকহ্যাম নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। তার মতে ওই সময় সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে হয়তো তখনই ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতেন তিনি।

সোমবার রাতে বেকহ্যাম বলেছেন, ‘১৯৯৮ সালে আমি একটা ভুল করেছিলাম। এর প্রতিক্রিয়া খুব নিষ্ঠুর ছিল। তখন যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকতো তাহলে তাহলে আমাকে ছুড়ে ফেলা হতো। পুরো গল্পটা অন্যরকম হতো পারতো। কিন্তু আমি ভাগ্যবান ছিলাম। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, কোচ (স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন) এবং অবশ্যই পরিবার।‘

বেকহ্যাম আরো বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গেছে। তখন কারোর কাছে যখন সাহায্য চাইতাম, সবাই না বলতো। কারণ ওই যুগটা অন্যরকম ছিল। এরপর আমি বুঝতে পেরেছি এটা (কঠিন সময়) আমাকেই কেবল মোকাবেলা করতে হবে। অথচ এখন আমার বাচ্চাদের এবং অন্য বাচ্চাদের এটার গুরুত্ব নিয়ে বলতে হচ্ছে।’

বেকহ্যাম মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথাই বলছেন। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। বর্তমান এভারটন কোচ কার্লো আনচেলত্তির সহায়তায় মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠেন বেকহ্যাম। তার মতো অনেকা ফুটবলারেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। হয়তো প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে একজন ফুটবলারের যে মানসিক সহায়তা দরকার সেটার গুরুত্ব বোঝালেন বেকহ্যাম।

তিনি বলেছেন, ‘নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এটা খুব কম খেলোয়াড়ের বেলাতে ঘটে। যখন সে আপনার কাছে এসে বলবে মানসিকভাবে আমি ভালো নেই। গত কয়েক বছর ধরে এটাতে পরিবর্তন এসেছে। আশা করছি এই পরিবর্তনটা চলতে থাকবে। একজন ফুটবলার যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে এবং কোনো সমস্যা ছাড়াই চলতে পারে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’