মেসির ‘আনলাকি সেভেন’

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ হলো স্প্যানিশ লা লিগার মৌসুম। রোববার রাতে মাঠে গড়িয়েছে ৩৮তম তথা লিগের শেষ রাউন্ড। এক বছরেরও বেশি সময়ের এই অভিযানে শিরোপা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে লিওনেল মেসির বার্সেলোনা। জমজমাট এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তিন মৌসুম পর রাজত্বে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের দল।

লা লিগায় শিরোপা নিয়ে এমন রোমাঞ্চকর লড়াই অনেক বছর পরই দেখা গেল। লকডাউনের আগ পর্যন্ত রিয়াল-বার্সা লড়াই করেছিল সমান তালে। মৌসুমের দুই তৃতীয়াংশ সময়জুড়ে চলেছে এই শিরোপা দৌড়। বার্সার ছন্দপতন হয় করোনাভাইরাস বিরতিতে। ঠিক উল্টো চিত্র রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরে।

লকডাউনের পর টানা দশ জয় তুলে নিয়েছে রিয়াল। শেষ রাউন্ডে থেমেছে তাদের জয়যাত্রা। চ্যাম্পিয়ন রিয়ালকে কাল রাতে রুখে দিয়েছে অবনমন অঞ্চলে থাকা লেগানেস। কাল রাতে রিয়ালকে ২-২ গোলে রুখে দিয়েও দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গেছে তারা। আর আগেই শিরোপা খোয়ানো শেষ রাউন্ডে বার্সা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে।

দিপোর্তিভো অ্যালাভেসকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা। দলের বড় জয়ের নায়ক মেসি করেছেন দুই গোল। এ ছাড়া সতীর্থ আনসু ফাতিকে দিয়ে করিয়েছেন আরো একটি। গোল এবং অ্যাসিস্ট দুই বিভাগেই ইতিহাস গড়েছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন প্রাক্তন সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজকে।

লা লিগার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের রেকর্ড এখন শুধুই মেসির। এই মৌসুমে লিগে সতীর্থদের ২১টি গোলে অবদান রেখেছেন তিনি। নয় বছর আগে জাভি ২০টি অ্যাসিস্ট করে রেকর্ডটা এতদিন আগলে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত খেলেই এই কীর্তি গড়েছেন মেসি।

আগের রাউন্ডে জাভিকে ছোঁয়ার রাতে লিগের ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে এক মৌসুমে ২০টি গোল ও ২০টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন মেসি। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শীর্ষ পাঁচ লিগের হিসেবে এই কীর্তি হলো দ্বিতীয়বার। প্রথমবার ইংলিশ লিগে রেকর্ডটা গড়েছিলেন আর্সেনালের সাবেক ফরাসি ফরওয়ার্ড থিয়েরি অঁরি।

বার্সেলোনার ব্যর্থতার মৌসুমে নিজেকে ছাড়িয়ে আরো দূরে চলে গেলেন মেসি। সপ্তমবারের মতো লিগে সর্বোচ্চ গোল করে পিচিচি ট্রফি জিতলেন তিনি। এরমধ্যে আছে টানা চারবার সর্বোচ্চ গোলের নজির। ধারাবাহিকতা এবং সর্বোচ্চ পিচিচি ট্রফি জয়ের কীর্তি মেসিই প্রথম গড়লেন। কিন্তু বৃথা গেল মেসির আগুনঝরা পারফরম্যান্স।

কারণ শিরোপা জিততে পারেনি মেসির দল বার্সা। এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমেও সর্বোচ্চ গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নশিপ ঠেকাতে পারেননি মেসি। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে ২০১১-১২ মৌসুমে গোলের হাফসেঞ্চুরি করেও দলকে লিগ শিরোপা উপহার দিতে পারেননি মেসি। তবে সাতবারের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ২৫ গোল করে পিচিচি জিতলেন তিনি।

মেসির জন্য এটা তাই ‘আনলাকি সেভেনে’র মতোই। তার আগে সবশেষ পিচিচি ট্রফি জিতেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। ২০১৫-১৬ মৌসুমে লিগে সর্বোচ্চ ৪০ গোল করেছিলেন উরুগুয়েন স্ট্রাইকার। সুয়ারেজের আগের বছর ৪৮ গোল করেও রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। শিরোপা জেতে বার্সা।

এক নজরে মেসির পিচিচি ট্রফি জয়

মৌসুম গোল

২০১৯-২০ (২৫ গোল)

২০১৮-১৯ (৩৬ গোল)

২০১৭-১৮ (৩৪ গোল)

২০১৬-১৭ (৩৭ গোল)

২০১২-১৩ (৪৫ গোল)

২০১১-১২ (৫০ গোল)

২০০৯-১০ (৩৪ গোল)