চান্দিকা হাথুরুসিংহে: আইপিএল মুস্তাফিজকে পরিণত করছে

কোনো রকম বিতর্ক ছাড়াই বাংলাদেশের সেরা কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে। তিনি কোচ হয়ে আসার পর বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বদলের ধারাটা অবশ্য আগে থেকেই ছিলো। কোচ আসার পর সেটা পেয়েছে পূর্ণতা। আপাতত ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা হাথুরুসিংহে সম্প্রতি ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিককে ফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএল খেলা এবং আরো নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

মুস্তাফিজকে নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় আছেন? আইপিএলে খেলার মাধ্যমে তো তাকে সবাই দেখে ফেলছে?

এ রকম তো সব বোলারের ক্ষেত্রেই হয়। কেউ যতো খেলবে, তার সম্পর্কে মানুষ ততো জানবে। খেলার মধ্যে এ রকম হবেই। অসুবিধাটা হলো ব্যাটসম্যানরা তাকে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে একটা লাভও কিন্তু আছে। সেটা হলো মুস্তাফিজ আরো পরিণত হয়ে উঠছে। ব্যাটসম্যানরা তাকে কিভাবে খেলছে, তা চিন্তা করে মুস্তাফিজ এখন ওর বৈচিত্রগুলো আরো বিবেচনা করে ব্যবহা করতে পারে। সে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, তাও মূল্যবান।

তামিম ইকবাল একবার বলেছিলেন, মুস্তাফিজ যেভাবে নিয়মিত ইয়র্কার দেয়, সেটা দারুণ ব্যাপার। আইপিএলে ওর পারফরম্যান্সে আপনি কি বিস্মিত?

না। আমি একদমই বিস্মিত নই। ইয়র্কার করার সহজাত ক্ষমতাটা মুস্তাফিজের সব সময়ই ছিলো। জাতীয় দলে সে খুব বেশি এটা ব্যবহার করে না। হয়তো এটা ওর ব্যক্তিগত কৌশলের ব্যাপার। ভারতে ইয়র্কারটা সে বেশি করছে কন্ডিশন এবং উইকেটের কারণে। বিশ্বকাপে যে বলে ও স্টিভেন স্মিথকে বোল্ড করেছিলো, সেটা ছিলো দারুণ এক কৌশল। কখন কী করতে হবে এটা টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনা থেকে নির্ধারিত হয়।

একদম শুরু থেকেই মুস্তাফিজের নানা রকম দক্ষতা আছে। আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, জাতীয় দলে নতুন বলে সে একটু আলাদাভাবে বোলিং করে। পরে বল পুরোনো হয়ে আসলে বদলে যায় তার বোলিংয়ে ধরনও। পুরোনো বলে তার বৈচিত্র দেখাতে শুরু করে। মুস্তাফিজের ব্যাপারে একটা কথা বলতেই হয়, সে খুব বেশি বিচক্ষণ একজন বোলার। ওর মতো দ্রুত শিখতে পারা কোনো বোলার আমি এখনো দেখিনি। ও এ রকম একজন বোলার, যে দ্রুত শিখতে পারে এবং তা মাঠে প্রয়োগ করতে পারে।

বিগব্যাশে মুস্তাফিজের খেলার ব্যাপারে কথা হচ্ছে। অন্যান্য টি-টোয়েন্টি লিগও তাকে চাইতে পারে। কোচ হিসেবে এই তুমুল চাহিদার ব্যাপারটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

এই ব্যাপারটা নির্ভর করে মুস্তাফিজের সুস্থ- সবল থাকার উপর। এটা সত্য যে, পৃথিবীজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে ও এক বড় সম্পদ। তবে ওর বোলিংয়ে যাতে সবাই অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। প্রচুর খেলা যদি ও স্বাস্থে প্রভাব ফেলে, তাহলে আমি বলবো ওকে বিশ্রাম দিতে। কারণ স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আবার ওকে খেলা থেকে বিরত রাখাও ঠিক হবে না। আসলে এই ব্যাপারটা ভারসাম্য বজায় রেখে চিন্তা করতে হবে।

মুস্তাফিজের সাসেক্সে খেলার ব্যাপারে কী ভাবছেন?

আইপিএল শেষে মুস্তাফিজ কতোটা ঠিকঠাক থাকে, তার উপর নির্ভর করছে সব কিছু। আমি সাসেক্সের চুক্তির বিষয়ে জানি এবং ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগও আছে। আমরা নানা বিষয়ে আলোচনা করছি। মুস্তাফিজ যদি ফিট থাকে এবং কোনো ইনজুরি সমস্যা না থাকে, তবে সাসেক্সের হয়ে খেলতে পারলে ভালোই হবে। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সেখানকার উইকেট সম্পর্কে ও ভালো ধারণা পাবে।

টেস্টে বোলিংয়ের ক্ষেত্রে মুস্তাফিজের নতুন কোনো কৌশল রপ্ত করা উচিত বলে মনে করেন কি? যেমন বল সুইং করানো বা এ ধরনের কিছু?

শেখাটা আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা শুধু মুস্তাফিজ নয়, বরং সব বোলারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। খেলতে খেলতে দক্ষতার উন্নতি করতে হবে। তারপরও ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকশনের কারণে বোলারদের সীমাবদ্ধতা থাকে। কেউ কেউ সুইং করাতে পারে, কারো আবার গতিটাই শক্তি। সুইং ও গতি দুইটাই আছে, এ রকম বোলার আপনি সহজে খুঁজে পাবেন না। কারণ এখানে নানা ব্যাপার থাকে। এক সিরিজে আপনি প্রয়োজন অনুসারে সুইং করাবেন, পরে নজর দিবেন গতিতে; এ রকম করাটা খুব কঠিন ব্যাপার। মুস্তাফিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের দক্ষতা সম্পর্কে আরো জানা এবং কন্ডিশনের ভিন্নতায় তা কাজে লাগানো।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মুস্তাফিজ বলেছেন তিনি সব ফরম্যাটের খেলাই ভালোবাসেন। তবে বেশি পছন্দ করেন একদিনে শেষ হয় এমন খেলা। ব্যাপারটা কি আপনাকে চিন্তায় ফেলেছে?

সাক্ষাৎকারটা বাংলায় ছিলো নাকি ইংরেজিতে?

একটি ভারতীয় ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। সম্ভবত বাংলায় নিয়ে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে।

এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আপনি তাকে বাংলায় কিছু জিজ্ঞেস করলে, তার কাছ থেকে কথা বের করা খুব কঠিন। আর ইংরেজিতে, অসম্ভব!

তবে এটা সত্য, সবারই একটা বিশেষ পছন্দ থাকে। তবে আমি মনে করি, তিন ফরম্যাটে খেলার মতোই যোগ্যতা আছে ওর। তরুণ বয়সে সেটাই পছন্দ হয়, যেখানে সফলতা বেশি আসে। আর মুস্তাফিজ তো সবে মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছে।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কি ফলো করছেন?

আমি ফলো করছি। কখনো কখনো তো বল বাই বলও খেয়াল রাখছি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলছি। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট হচ্ছে। উইকেটগুলো স্পোর্টিংড। লিগের পর জাতীয় দল নিয়ে ম্যাচ পরিস্থিতির উপর অনুশীলন করবো। গত দুই বছরে যেভাবে হয়েছে, অনেকটা সেভাবেই অনুশীলন হবে।

আপনি দুই বছর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করলেন। খুব সম্ভবত চুক্তি নবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখছেন?

দুঃখিত। এ ব্যাপারে বাংলাদেশে না এসে কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হলে বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে।

আপনি আরো পড়তে পারেন

সাকিবের সমস্যা কোথায়?

এবার দাঁড়াতেই পারলেন না সাকিবরা

আপনার ‘ভোট’টি মুস্তাফিজকেই দিন

মুস্তাফিজের নতুন কীর্তিতে প্লে অফে হায়দরাবাদ