আপনি পড়ছেন

যাকাত শব্দের অর্থ শুচিতা ও পবিত্রতা, শুদ্ধি ও বৃদ্ধি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো।’ সুরা বাকারা, আয়াত ৪৩। অন্য অয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ৫৫।

zakat header 6001 1

যাকাত আদায় না করার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে এবং সেগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সুখবর শোনাও। যেদিন তাদের জমানো স্বর্ণ ও রূপা জাহান্নামের আগুনে গরম করে তাদের কপালে, পাশে ও পিঠে ছ্যাঁকা দেয়া হবে, সেদিন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা জমা করেছিলে তার মজা ভোগ করো। সুরা তওবা, আয়াত ৩৪ ও ৩৫।

ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। একজনের হাতে বিপুল অর্থ-সম্পদ জমে থাকবে এটা ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করুক। তাই দরিদ্রের প্রতি লক্ষ করে যাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে।

অধ্যাপক বেনহাম বলেন, যে রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাই কল্যাণ রাষ্ট্র। আর সামাজিক নিরাপত্তা বলতে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের ন্যূনতম অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের নিশ্চয়তাকেই বোঝায়। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামের যাকাত ব্যবস্থার বিকল্প নেই । পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ধনীদের করুণার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ইসলাম ধনীর সম্পদে গরীবের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যাকাতকে ফরজ করেছে। যাকাত আদায় না করলে পুঁজিপতিকে ইসলামের গন্ডির বাইরে মনে করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

নবীজি (সা.) মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করে সেখানে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তিনি অল্প কয়দিনেই দারিদ্র্যমুক্ত সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) বলেছেন, ‘যারা একটি উটের রশি পরিমাণ সম্পদও যাকাত দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৩১২। তার এ ভাষণের মর্মার্থই ছিল দরিদ্রের অধিকার নিশ্চিত করা এবং পুঁজিপতির বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেছেন, যাকাত দেয়ার সময় মনে রাখতে হবে, আমার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর গরিবের হক আছে। আমি সে হক আদায় করছি মাত্র। বিষয়টি এমন, যাকাতদাতা হচ্ছেন দেনাদার আর গ্রহীতা হচ্ছেন পাওনাদার। পাওনাদারকে যেভাবে সম্মানের সঙ্গে অর্থ পরিশোধ করতে হয়, ঠিক তেমনিভাবেই যাকাতের অর্থও দরিদ্রকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের অধিকাংশ ধনীরা যাকাত দেয় না। যাকাত দিলেও সঠিক হিসাব করে সঠিক লোককে দেয় না। আর যারা যাকাত দেয় তাদের অধিকাংশই লোক দেখানো প্রচার সর্বস্ব দান করে। কোরআন মতে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যাকাত আদায় এবং বণ্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করার কথা। কিন্তু কোনো রাষ্ট্র যদি ইসলামি রাষ্ট্র না হয়, তা হলে সেখানকার যাকাতদাতরা নিজ উদ্যোগে তার উদ্বৃত্ত সম্পদের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।

কর্মঠ গরিবদের আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করে স্বাবলম্বী করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমেই দারিদ্র্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবে। দ্বীনের প্রসারে ও দ্বীনি শিক্ষার বিস্তারেও যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়। যথার্থ কারণে ঋণগ্রস্ত এবং ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়লে তাদের ঋণমুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যাবে। মুসাফির যদি আর্থিক অসুবিধায় পড়েন, তবে তাকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যাবে, যদিও তার বাড়ির অবস্থা ভালো থাকে।

যাকাত আর্থসামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য দূর করে ভ্রাতৃত্ব ও ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থার নাম আর্থসামাজিক উন্নয়ন। যে সমাজ আজ আমাদের কাছে স্বপ্নের সোনার হরিণ, আধুনিক ধনতান্ত্রিক বিশ্ব যে সমাজের কথা কল্পনাও করতে পারে না, আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে বৈষম্যপূর্ণ সে সমাজ উপহার দিয়েছিলো ইসলাম।

রাহাজানি, হত্যা-কলহ, সুদ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অন্যায়-অবিচার, অনৈতিকতা, শ্রেণিবৈষম্য, ব্যভিচার, হত্যাসহ সব ধরনের অন্যায় অসামাজিক কাজ ছিল যে সমাজের অলংকার, সে শতধাবিভক্ত জাহেলি সমাজকে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) স্বপ্নের সোনালি সমাজে পরিণত করেছিলেন ইসলাম নামক শান্তির ঝর্ণাধারার মাধ্যমে।

যাকাত ছিল সে সমাজের সব আর্থসামাজিক উন্নয়নের রূপকার। সোনালি শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এমন এক সময় ছিল যখন যাকাত নেয়ার মতো লোক পাওয়া যেত না। তখন মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি সব নাগরিক বৈষম্যহীন সামজের গর্বিত সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতো। শাসকবর্গ যাকাতের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা রাখতেন। এখনো সে পরিবেশ আসতে পারে, যদি যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি এবং সুষম বণ্টননীতি নিশ্চিত করা যায়।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.