প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মারাত্মক ছোঁয়াচে। এর ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি আরো সঙ্কটাপন্ন হয়েছে। তাই কেউ আক্রান্ত হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগের উপসর্গের দিকে নজর দেওয়া। এর মানে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াটাই এখন একমাত্র উপায়।

doctor treating an infected patientআক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হলে প্রথম ঠিক কোন উপসর্গটি দেখা দিবে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি গবেষকরা। তবে ভাইরাসের প্রকোপ যত বাড়তে থাকে তত বেশি উপশম দেখা দেয়। আক্রান্তদের মধ্যে আক্রান্তদের সর্দি, হাঁচি-কাশি, জ্বর, গলাব্যথাসহ সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেও এসব এখন আর মোটেই হেলাফেলা করা যাবে না।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, কারো দেহে লক্ষণ দেখা দিলে সে যেন ক্যালেন্ডারে ওই দিনটি দাগ কেটে রাখে। সেইসঙ্গে নিজের শরীরের তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে নেয়া। মরণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কি না তা জানতে এই দুটো পরিমাপ করা অতীব জরুরি।

ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টার সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক আইলান স্কয়ার্জ বলেন, সংক্রমিত বেশিরভাগ রোগীই এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে সেরে ওঠেন। প্রাথমিক লক্ষণগুলো কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে। যাদের অবস্থা গুরুতর হয় তারা দ্বিতীয় দফায় ভয়ানক অসুস্থবোধ করেন।

সবার একই রকম উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে প্রথম লক্ষণ দেখা দেয়ার পরের পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা ভোগাতে পারে রোগীকে। যাদের বয়স বেশি এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা ও ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এ সময়টিতে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

যাদের বয়স তুলনামূলক কম তাদের দেহে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক জটিলতা ১০ থেকে ১২ দিন অর্থাৎ একটু পরেই দেখা দেয়।

sample collection from infectedসন্দেহজনক সংক্রমিত থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে

১৪ দিন পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি সামান্য অস্বস্তি ও ক্লান্তি বোধ করে এবং কোনো উপসর্গ গুরুতর আকার ধারণ করে না তাদের সুস্থ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

এর মধ্যে একটি সতর্কতা সূচক বিষয় আছে, যারা সাত দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তারা ভেবে নেন সুস্থ হয়ে গেছেন। অধিকাংশ মানুষ এই ভুলটি করে। তারা ভুলেই যায় যে দ্বিতীয় দফায় তাদের অসুস্থ হওয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ ৫-৬ দিন পরই ভাইরাসের কারণে তারা অসুস্থতা বোধ করতে পারেন।

কোনো সংক্রমিত রোগীর জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই এ সময় নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অক্সিজেনের বেশ ঘাটতিও তাদের শরীরে লক্ষ করা যায়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।

শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে ঘরে বসেও প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা করা সম্ভব। এ জন্য রোগীকে পেটের উপর ভর করে শুয়ে পড়তে হবে। চিত হয়ে শুয়ে থাকলে ফুসফুস ততটা সম্প্রসারিত হতে পারে না। তবে উপুড় করে শুয়ে থাকলে ফুসফুস সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া সহজ হয় রোগীর জন্য।

তবে সব সময় উপুর হয়ে শুয়ে না থাকলেও মাঝে মাঝে ডান ও বামে কাত হয়েও শোয়া যেতে পারে। কারণ সারাক্ষণ এক অবস্থানে শুয়ে থাকা ঠিক না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

টমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটির জরুরি ওষুধ ও ক্লিনিক্যাল গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক আন্না মারি চ্যাংয়ও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। নিজ অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়ার নয়দিন পর শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ ৮৮ শতাংশে নেমে যায়। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন নেন। পরের চারদিন তাকে চিকিৎসকরা প্রায়ই উপর করে শুইয়ে দিতো। এতে করে শারীরিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে তার।

শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পালস অক্সিমিটার দিয়ে মাপা যায়। এ মেশিন না থাকলে তার বিকল্প পদ্ধতির কথাও জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়, সংক্রমিত ব্যক্তিকে একবার শ্বাস নিয়ে ৩০ পর্যন্ত গুনতে হবে। যদি ১০ গোনা পর্যন্ত আরেকবার শ্বাস নেওয়ার উপক্রম হয় তাহলে বুঝতে হবে শরীরে ৯৫ শতাংশ অক্সিজেন আছে। যদি ৭ পর্যন্ত গুনতে ব্যর্থ হয় তাহলে ধরে নিতে হবে শরীরে ৯০ শতাংশেরও কম অক্সিজেন আছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে শরীরের ভাইরাস প্রবেশের দিন থেকে পরে ১৪ দিন পর্যন্ত কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা ধাপে ধাপে সাজিয়ে বলা হয়েছে।

newyork city empty roadলকডাউনে ফাঁকা নিউইয়র্কের রাস্তা

সংক্রমণের প্রথম তিন দিন

এ সময়ে গলা খুস খুস, কাশি, জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারো কারো বুকে সামান্য চাপ অনুভব করতে পারেন। সেইসঙ্গে স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি কাজ নাও করতে পারে। জ্বর ছাড়া বাকি সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

চতুর্থ-ষষ্ঠ দিন

এ সময় অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। অসুস্থতার মাত্রা খুব একটা বাড়ে না। যাদের আগের থেকে শারীরিক সমস্যা আছে তাদের অবস্থা গুরুতর হতে শুরু করে। এই পর্যায়ে তাদের দেহে লাগাতার জ্বর ও কাশি থাকে। শিশু ও তরুণদের দেহে এইসময়ে র‍্যাশের লক্ষণ দেখা দেয়।

সপ্তম-অষ্টম দিন

অনেকেই এই সময়ে সুস্থতা বোধ করেন। তবে কিছু রোগীর অসুস্থতা বেড়ে যায়।

অষ্টম-দ্বাদশ দিন

করোনাভাইরাসে কেউ সংক্রমিত হলে এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে কঠিন নজরদারিতে রাখতে হবে।

মাউন্ট সিনাই-ন্যাশনাল জিউইশ হেলথ রেসপিরেটরি ইনস্টিটিউটের পরিচালক চার্লস এ পাওয়েল বলেন, করোনাভাইরাসের তীব্র লক্ষণগুলো আট থেকে ১২ দিনের মাথায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যেই বোঝা যায় কে সুস্থ হওয়ার পথে আর কার অবস্থা আশঙ্কাজনক। যাদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায় তাদের শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়।

এই সময় কারো বাসায় থাকাটা নিরাপদ নয়। বাড়ির লোকদের পক্ষেও সব কিছু সামাল দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

১৩ থেকে ১৪ দিন

যারা ভাইরাসটিতে মৃদুভাবে সংক্রমিত হয় তাদের অধিকাংশই এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। যাদের অসুস্থতা বেশি ছিল এবং অক্সিজেন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল তাদেরও অনেকে সুস্থবোধ করতে পারেন। তবে যারা গুরুতর পর্যায়ে আছে তাদের অবস্থা এই সময়ের মধ্যে ঠিক নাও হতে পারে। এদের সেরে উঠতে আরো কিছুদিন সময় লাগে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.