হায়! রহমতের দশক শেষ হয়ে গেলো
- Details
- by রামাদান
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো মহিমান্বিত রমজানের প্রথম তথা রহমতের দশক। আজকে দিন শেষে শুরু হচ্ছে আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দশক মাগফিরাত তথা ক্ষমার দশক। এর পর আসবে নাজাতের দশক। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আসা এবারের মাহে রমজানের প্রথম দশকটা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি, তা চিন্তা করা দরকার। বিশেষ করে যখন আমরা এক ভয়ংকর মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ আনুগত্য স্বীকার করে তার পাঠানো রসুল মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সা.-এর অনুকরণে সিয়াম পালন করা দরকার। তাহলেই বর্ষিত হবে আল্লাহর রহমতের ফাল্গুধারা।
আল্লাহ বলেছেন, হে ঈমানের দাবিদারেরা, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা করা হয়েছিল পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেজকারী বা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। বাকারা-১৮৩।
তাহলে রোজা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য) করে দিয়ে মহান আল্লাহই এর উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন যে, এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে। আর আল্লাহর ভয়ের অর্থ হলো- তার দেওয়া বিধান অনুযায়ী যত খারাপ কাজ আছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে, বিপরীতে ভালো কাজগুলো করতে হবে। তাও আবার বিষয়টা বলা হচ্ছে ঈমানদারদের। তার মানে শুধু মুখে ঈমানের দাবি করলে হবে না, বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেটা প্রমাণ করতে হবে।
রমজানের প্রথম দশকে আমরা কতটা আল্লাহভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি। অর্থাৎ খারাপ কাজ, মিথ্যা কথা, সুদ, ঘুষ, অন্যকে ঠকানো, ওজনে কম দেওয়া, গিবত করা হত্যাদি কতটা ছাড়তে পেরেছি সেটা ভেবে দেখতে হবে। বিপরীতে কতটা কোরআন, হাদিস তথা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেছি- কারণ সঠিক জ্ঞানার্জন ছাড়া ঈমানের ওপর টিকে থাকা যায় না- সেটাও চিন্তা করতে হবে। এগুলো ঠিকভাবে করতে না পারলে বুঝতে হবে আমরা আল্লাহর রহমতের যোগ্য হতে পারিনি।
কারণ রসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ছাড়তে পারলো না, তার পানাহার পরিত্যাগে আল্লাহর কোনো যায় আসে না।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের (পর্যালোচনা) সঙ্গে রোজা রাখলো, আল্লাহ তার পেছনের জিন্দেগির গুনাহ মাফ করে দিবেন।
প্রিয় পাঠক, এসব গেল স্বাভাবিক অবস্থার কথা। কিন্তু এবারের রোজা এসেছে বিশেষ এক প্রেক্ষাপটে, সেটা আগেই উল্লেখ করেছি। ভয়ংকর করোনাভাইরাসের থাবায় গোটা বিশ্ব আজ থমকে গেছে। সবাই আজ অসহায়। কারো কিছুই করার নেই। যে জাতিগুলো এতদিন দম্ভ দেখিয়েছে, তাদের এত অস্ত্র, এত সম্পদ। ফুঁৎকারে সব নিভিয়ে দিতে পারে- এ রকম একটা ভাব। কিন্তু আজ তারা ঘরের কোণায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের আধুনিক সব উদ্ভাবন ও অর্থ-বিত্ত কিছুই কাজে আসছে না।
কিন্তু ওইসব জাতির কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যারা মুসলমান বা ঈমানদার হিসেবে দাবি করি, তারা কি আল্লাহর আনুগত্য মেনে নিতে পেরেছি। যদি পারতাম তাহলে তো এমন হওয়ার কথা না। গোটা উম্মত আজ চ্ছিন্নভিন্ন, নির্যাতিত, উপেক্ষিত, অমুসলিমদের খেলনার পাত্র।
এই অবস্থার মধ্যেই এসেছে করোনাভাইরাসের মহামারি। এগুলো আমাদের হাতের কামাই। আমরা আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই এই আজাব। আল্লাহ বলেন, কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের ওপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথব দ্বিপ্রহরে যখন তারা বিশ্রামরত ছিল। যখন আমার শাস্তি তাহাদের ওপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, ‘নিশ্চয় আমরা জালিম ছিলাম।’ সুরা আরাফ-৪-৫।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, আল্লাহর শাস্তি এমনি এমনি আসে না। আজ আমরা মুখে ঈমানের দাবি করলেও আল্লাহর বিধান মানার ক্ষেত্রে যেমন খুশি তেমন নীতিতে চলছি। আনুষ্ঠানিক কিছু ইসলামিক বিষয়কে দ্বীনের মূল বানিয়ে নিয়েছি। দ্বীনের মৌলিক যে শিক্ষা তার ধারের কাছেও নেই।
ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে আমাদের এখন তেমন কোনো কাজকর্ম নেই। অফিস-আদালত বন্ধ। শুধুই ঘরে থাকা। আল্লাহর দ্বীন জানা ও মানা এবং সে অনুযায়ী পরিবারকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা একটা বিরাট সুযোগ, একটা নেয়ামত। এই সুযোগে এবারের রোজাকে আরো সুন্দরভাবে পালন করা দরকার।
কিন্তু আমরা সেই সুযোগকে কতটা কাজে লাগাতে পারছি, সেটা ভেবে দেখা দরকার। নাকি আগের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন চ্যানেলে নানা সিরিয়াল দেখে কিংবা গল্প-গুজব করে সময় পার করছি। অথবা সুযোগ পেয়ে ইফতার ও সেহেরি নানা আইটেম তৈরিতে ব্যস্ত আছি। যেখানে আশপাশে অসংখ্য মানুষ সেহেরি বা ইফতার করার মতো অবস্থাতেও নেই।
রোজার প্রথম দশক যদি সেভাবে কাজে লাগাতে না পেরে থাকি, তাহলেও হতাশ হওয়া যাবে না। বরং এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দুই দশক তথা মাগফিরাত ও নাজাতে সেটা পুষিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ এই মুহূর্তেই নিতে হবে। মাগফিরাতের দশকে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে, যাতে আল্লাহ করোনার মহামারি তুলে নেন। পাশাপাশি আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে নাজাত তথা জান্নাতের পথ সুগম হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীন সঠিকভাবে বোঝা ও তার ওপর কায়েম থাকার তাওফিক দিন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.