বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মুষ্ঠিমেয় দেশগুলোর একটি নিউজিল্যান্ড। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটির ক্রিকেট। ক্রিকেটখেলুড়ে প্রায়সব দেশেই তৈরি হয়েছে কিউইদের সমর্থকগোষ্ঠী। প্রায়সবাই এখন ভালোবাসে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে। এই ভালোবাসা দিনে দিনান্তরে সৃষ্টি হয়নি। নির্দিষ্ট কোনো কারণেও হয়নি। নেপথ্য কারণ আছে অসংখ্য। কেন নিউজিল্যান্ডকে সবাই ভালোবাসে এর নেপথ্য বিশ্লেষণ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

new zeland cricket

নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন। এরচেয়ে বেশি লোকের বসবাস বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের রাজধানীতেও। রাগবির দেশটিতে ক্রিকেট কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। এখনো না। কিন্তু বাইরে এখন তারা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডে সাধারণ একটা খেলা হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তুমুল জনপ্রিয়। এ কারণেই এখানকার শিশু-কিশোররা সাকিব আল হাসান, বিরাট কোহলি, শহিদ আফ্রিদি হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

নিউজিল্যান্ডের শিশু-কিশোররাও স্বপ্ন দেখে একজন কেন উইলিয়ামসন হওয়ার। কিন্তু সংখ্যাটা খুব নগণ্য। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার শিশু-কিশোর-তরুণরা শুধু কোহলি-সাকিবই নয়, হতে চান উইলিয়ামসনও। এই সংখ্যাটা নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নাতুর সংখ্যাটার চেয়ে যোজন-যোজন বেশি। কেননা উইলিয়ামসনরা শুধু একেকজন ক্রিকেটারই নন, এই প্রজন্মের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে তারা আদর্শের এক নাম।

আইসিসি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দুটি ফাইনালসহ মোট দশটি সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু স্বপ্নটা শেষ অবধি অধরা হয়ে আছে তাদের কাছে। এই তো গেল বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে শিরোপা নিঃশ্বাস দূরত্বে রেখে আসতে হয়েছে তাদের। দায়টা অবশ্য উইলিয়ামসন-গাপটিল-টেলরদের নয়। ভাগ্য খেলেছে তাদের নিয়ে। আম্পায়ারদের কয়েকটা ভুল সিদ্ধান্তও গেছে কিউইদের বিরুদ্ধে। তবু প্রতিবাদী হয়নি দলটা।

লর্ডসের ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারেনি নিউজিল্যান্ড। সেদিন বরং কিউইদের কাছে হেরেছে ক্রিকেট ও চেতনা। দলীয় ইনিংস এবং সুপার ওভারে ইংলিশদের সমান রান করেও আইসিসির অদ্ভুত এক নিয়মের বলি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নটা। বাউন্ডারি বেশি মারায় ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয় শ্রেষ্ঠত্বের রাজদণ্ড। মহানাটকীয় ফাইনাল শেষে ইংলিশরা শিরোপা জিতেছে ঠিকই, কিন্তু নিউজিল্যান্ড হৃদয় জিতে নিয়েছে সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

কোহলি কিংবা সাকিবের মতো ক্রিকেটাররা আইসিসির ওই হাস্যকর নিয়ম মানতেন কিনা তা নিয়ে প্রবল সংশয় সবার। সেখানে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন! উইলিরা পরিচয় দিয়েছেন উদার মনের। তাদের এই মানসিকতা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। আসলে তারা জাতি হিসেবেই এমনই।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এক বছর আগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে এক সন্ত্রাসীর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে নিহত হন ৫০ জন নিষ্পাপ মুসলিম। ওই সময়ে দেশটির সর্বোচ্চ প্রশাসন যা দেখিয়েছে তা মানবিকতার চূড়ান্ত সীমা। দেশটির বিখ্যাত একজন চিত্রশিল্পী তাদের পতাকার ছবিটাই পাল্টে দিয়েছিলেন! সারিবদ্ধ পাতার জায়গায় এঁকে দিয়েছেন নামাজরত মুসল্লিদের দাঁড়ানো ছবি! ওই ছবিটা সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়েছিল।

সে যাত্রায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে গোটা বাংলাদেশ দল। সফর অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে এসেছে টাইগাররা। কোহলিরা অবশ্য কদিন আগে রাগবির দেশ থেকে ধবলধোলাই হওয়ার তিক্ত স্বাদ নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। নিউজিল্যান্ডও পাল্টা ভারত সফরে এসেছে নতুন বছরের শুরুর দিকে। কিন্তু এই হোম সিরিজটাকে কিউইদের বিপক্ষে ‘প্রতিশোধে’র সুযোগ হিসেবে দেখেননি ভারতের সর্বাধিনায়ক কোহলি।

অন্য দলগুলোর বেলায় ‘প্রতিশোধ’ শব্দটায় হয়তো অমন আপত্তি করতেন না তিনি। দলটা নিউজিল্যান্ড এবং প্রতিপক্ষ বন্ধুবৎসল উইলিয়ামসনরা বিধায় কোহলি বলেছিলেন, ‘আপনি এখানে প্রতিশোধের কথা ভাবতেই পারেন না। কারণ যাদের বিরুদ্ধে খেলবেন তারা চমৎকার মানুষ।’

রাগবির দেশের মানুষরা কেমন সেটা বোঝাতে আরেকটা ঘটনা সামনে আসতে পারে। ২০১৪ সালে শন অ্যাবটের বাউন্সারের আঘাতে শেষ পর্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিল হিউজের। ওই মৃত্যুটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ক্রিকেট মানচিত্রকে। ওই সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ ছিল নিউজিল্যান্ডের। হিউজের সম্মানার্থে ওই টেস্টে একটি বারের জন্যও উইকেট নেওয়ার আনন্দে উদযাপন করেননি উইলিয়ামসনরা।

সাফল্যের নিরিখে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পরাশক্তির নাম অস্ট্রেলিয়া। এই দলটা বরাবরই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলতে চায়। সেটা শুধু পার্শ্ববর্তী দেশ বলেই নয়। এই দলটা আক্রমণাত্মক নয়। বরং বন্ধুসুলভ। এতটাই বন্ধুসুলভ যারা প্রাপ্যটা বঞ্চিত হলেও কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি জানায় না। ক্রিকেট যে ‘ভদ্রলোকের খেলা’ সেটা অনেক সময় বেমালুম ভুলিয়ে দেন ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু নিউজিল্যান্ড যেন এই প্রবাদটার স্বার্থকতা ধরে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে।

বলতে গেলে এই তো সেদিন, বিশ্বকাপ ফাইনালের আট মাস পর আরো একটা সুপারওভার নাটকে হেরেছে নিউজিল্যান্ড। এই হারটা অবশ্য ভারতের বিরুদ্ধে। থ্রিলার ওই ম্যাচে কোহলিরা যতটা আগ্রাসী ছিলেন ততটাই শান্ত ছিলেন উইলিয়ামসনরা। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে প্রসঙ্গটা উঠল। পরপর দুটি সুপারওভারে জিততে না পারার অনুভূতিটা কেমন?

উত্তরে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক যেন বিনয়ের অবতার, ‘এটা একটা বিনোদন।’ আসলে ক্রিকেট কিংবা খেলাধুলাকে নিউজিল্যান্ড এভাবেই দেখে। বৈরিতা কিংবা সাংঘার্ষিক কোনো ব্যাপার নেই উইলিদের মধ্যে। উইলির মতো ভাবনাটা একই রকম রস টেলর, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, জিমি নিশাম, মার্টিন গাপটিলদেরও।

এমন না যে তারাই শুধু এমন। তাদের বেলায় পুরনো প্রবাদটাই সামনে আসছে, ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন…আমরাও হব বরণীয়।’ মার্টিন ক্রু, স্টিফেন ফ্লেমিং, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, স্কট স্টাইরিস, শেন বন্ডরা যে পথে হেঁটেছেন উইলিয়ামসরাও তাদের পদাঙ্ক অনুকরণ করে চলেছেন। এসব ক্রিকেটারদের তো লোকজন অনুসরণ করবেই। তাদের প্রতি ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালোবাসা তো বাড়বেই!

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.