ধীরে ধীরে এক জটিল সময়ে প্রবেশ করছে বিশ্ব। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীজুড়ে আট হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দুই লাখের বেশি। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যতোটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারপরও নিশ্চয় বাসার বাইরে যেতে হয়। প্রাণ বাঁচানোর জন্য খাবার সংগ্রহ বা ওষুধ কেনার জন্য বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এমন সময়ে বাসার বাইরে যদি যেতেই হয় তবে এই ১০টি বিষয় খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।

stay safe during coronavirus

স্বাস্থ্য বিষেশজ্ঞরা বলছেন যতো বেশি সম্ভব হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে, যাতে হাতের মাধ্যমে নাক-মুখ বা চোখের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস দেহে প্রবেশ করতে না পারে। এ ছাড়া এন-নাইনটি ফাইভ ফেস মাস্কও ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সব পরামর্শ যতোটা মেনে চলা যাবে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ততোটাই ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুতরাং সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে এবং একটু সাবধানতা অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে রাখতে পারে অনেক বড় ভূমিকা। এই লেখায় এমন কিছু বিষয়ের কথা আলোচনা করা হয়েছে, বাসার বাইরে অবস্থানের সময় এগুলো খেয়াল রাখলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে।

১. আঙুলের টিপ কমিয়ে হাঁটু, পা, কনুই বা আঙুলের গিঁট ব্যবহার বাড়ান

লিফটের বাটন টিপতে এখনো কি আঙুলের সাহায্য নিচ্ছেন? অনুগ্রহ করে এখনই এই অভ্যাস বন্ধ করুন। যখন কোনো দরজা খোলার দরকার পড়ে, বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে, দরজা ধাক্কা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে, তখন আঙুলের বদলে কনুই ব্যবহারের চেষ্টা করুন বা আঙুল ভাঁজ করে গিঁট দিয়ে চেষ্টা করুন।

এটিএম বুথে আঙুল দিয়ে পিন কোড দেওয়ার বদলে আঙুলের গিঁট ব্যবহার করুন। কোনো কাচের দরজা পার হতে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিন। এতে করে দরজার হাতলে কোনো জীবাণু থাকলে তা আপনার দেহে প্রবেশের আশঙ্কা কমে যাবে।

কোনো সিঙ্কের কল চালু করতে হাতের কবজি বা এলবো ব্যবহার করুন। আর কল যদি ঘুরিয়ে চালু ও বন্ধ করতে হয় আপনার জামার কোনো অংশে হাত পেচিয়ে নেন। মুহূর্তের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নিজের ত্বককে বিপদে না ফেলে জামায় ঝুঁকি নেওয়াটা আসলেই কম ঝুঁকিপূর্ণ। বাসায় ফেরার যতো দ্রুত সম্ভব জামা ধুয়ে ফেলুন।

২. যতো বেশি সম্ভব স্বয়ংক্রিয় সুবিধা খুঁজুন

বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ ধরনের সুবিধা পাওয়া কঠিন। উন্নত বিশ্বে বেশির ভাগ শপিংমলের সামনের কাচের দরজা স্বয়ংক্রিয়। ফলে হাত দিয়ে খোলার বা বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না, যা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।

stay safe while pushing lift button

বাংলাদেশে এই সুবিধা বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। তারপরও বিকল্প আছে কি না দেখে নিন। বিকল্প থাকলে সেটা গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন- এই সময়ে বাসার জন্য যদি হ্যান্ড ওয়াশ ক্রয়ের কথা ভাবেন, তাহলে অটোমেটিক কোনো হ্যান্ড ওয়াশ ডিসপেনসার পাওয়া যায় কি না, দেখুন। এতে ডিসপেনসার বারবার স্পর্শ করার কারণে যে ঝুঁকি তৈরি হয়, তা থাকবে না।

৩. আপনার ফোন কোথায় রাখছেন, খেয়াল করুন

এই সময়ে অনেকের মধ্যে ফোন নিয়ে বাথরুমে যাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। তো ফোনটা বাথরুমে নিয়ে আপনি কোথায় রাখছেন? ওই জায়গা জীবাণুমুক্ত? এটা জানা কিন্তু কঠিন। সুতরাং ভালো হয় যদি ফোন এমন কোনো জায়গায় না রাখা যায়, যেখানে জীবাণু থাকার আশঙ্কা অনেক বেশি।

একই সাথে বাসার বাইরে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় টেবিলে ফোন রাখা অনুচিত। এত ফোন থেকে আপনার শরীরে ভাইরাস প্রবেশের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফোন এমন কোথাও রাখা যাবে না যেখানে অন্য মানুষের স্পর্শ আছে।

৪. ব্যক্তিগত শপিং ব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টা করুন

সুপার শপের ট্রলি ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখুন। এই ট্রলি প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করার নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ সুপার শপ এই নিয়ম মানে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। সুতরাং ঝুঁকি কমাতে নিজের শপিং ব্যাগ ব্যবহার করুন। এতে কিছুটা হলেও জীবাণুর সংস্পর্শ কমানো যাবে।

৫. অন্য কারো সাথে কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রাখুন

এখন যেহেতু ভাইরাস সংক্রমণের অত্যন্ত বাজে সময়, সুতরাং যখন কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়বে, অন্তত দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। যার সাথে কথা বলছেন, তাকে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করুন যে দূরত্ব এই মুহূর্তে কেনো জরুরি। অবশ্য এই ধরনের দূরত্ব সব সময়ই বজায় রাখা উচিত।

keep your phone safe during corona virus

এর কারণ হলো কথা বলার সময় কখনো কখনো মুখ থেকে থুথু বেরিয়ে পড়ে। এই থুথু আপনার মুখে বা শরীরে এসে পড়তে পারে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া কথা বলার মুখ থেকে দৃশ্যমাণ নয় এমন লালার কণাও বেরিয়ে আসতে পারে। দূরে দাঁড়ালে এই থুথু আপনার শরীরে লাগবে না এবং ঝুঁকি কম থাকবে। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন কোভিড-১৯ গোত্রের ভাইরাস বাতাসে খুব সামান্য সময় ভেসে থাকে এবং বাসাতে এদিক ওদিক যেতে পারে না। ফলে কারো মুখ থেকে ভাইরাস বাতাসে ছড়ালেও ঝুঁকি কম থাকবে যদি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়।

৬. সম্ভাষণ করুন সাবধানে

বাংলাদেশে বন্ধুর সাথে দেখা হলে হ্যান্ডশেক করা বা জড়িয়ে ধরা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু এই অভ্যাস বদলে ফেলার সময় এসেছে। স্পর্শ না করে সম্ভাষণপর্ব সারুন। হ্যান্ডশেক তো বাদই, ফিস্ট বাম্প বা এলবো বাম্পও ঝুঁকিপূর্ণ এখন।

৭. নগদ টাকা স্পর্শ করা কমিয়ে দিন

বিশ্বের অনেক দেশে নগদ টাকার ব্যবহার সীমিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে নগদ টাকার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে, এ জন্য নগদ টাকার স্পর্শ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? হ্যা, বাংলাদেশে বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। তারপরও চেষ্টা করে দেখুন। বর্তমানে শহরে তো বটে, গ্রামে-গঞ্জেও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে টাকা পরিশোধ করা যায়। কিংবা বিকাশ, রকেট বা নগদের মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবাও এখন খুবই সহজলভ্য। চেষ্টা করে দেখুন টাকার স্পর্শ কমিয়ে এই সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারেন কি না।

৮. পকেটে এক্সট্রা টিস্যু রাখুন

ধরুন আপনি অফিসে প্রবেশ করছেন। আপনার ঠিক আগে আপনারই এক সহকর্মী কাশি দিলেন এবং এরপর হাত দিয়ে দরজা খুলে অফিসে প্রবেশ করলেন। এবার আপনি দরজাটা খুলবেন। তো সরাসরি হাত দিয়ে খুলবেন? না, অবশ্যই এই কাজ করতে যাবেন না।

এই সময়ের জন্য সাথে আলাদা টিস্যু রাখুন সেই টিস্যু হাতে জড়িয়ে দরজা খুলুন। বাংলাদেশের বাজারে হ্যান্ড টিস্যু পাওয়া যায় খুব কম মূল্যে। জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ ভেজা টিস্যুও সহজলভ্য। সুতরাং এখন থেকে এই ধরনের জিনিস নিজের সাথে রাখার অভ্যাস করুন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর সারা পৃথিবীর অভ্যাস বদলে যাবে বলে যে বার্তা দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তা হয়তো সত্যিই হবে।

৯. জীবাণু লেগে থাকতে পারে এমন জিনিস নিরাপদ করে নিন, মনে রাখুন ৯ দিনের কথা

করোনা ভাইরাসের জীবাণু কোথাও লেগে থাকলে নয় দিন পর্যন্ত আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সুতরাং যে জুতা পরে বাইরে যাচ্ছেন, কাঁধে যে ব্যাগ রাখছেন বা গায়ে যে টি-শার্ট, তাও জীবাণুমুক্ত করে রাখুন। জীবাণুমুক্ত করার জন্য যদি কোনো কিছু ভেজাতে বা ধুতে না চান, তাহলে নয় দিন এমন জায়গায় রেখে দিন যেখানে জিনিসগুলো কেউ স্পর্শ করবে না। তাহলে নয় দিন পর এমনিতেই আপনার জুতা, ব্যাগ বা জামা-কাপড় জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে।

১০. বাসায় ফিরে সবার আগে অতি অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলুন

বাসার বাইরে আপনি কী কী স্পর্শ করেছেন, তা আপনি নিজেই জানেন না। সুতরাং বাসায় প্রবেশের পরপরই সবার আগে হাত ধুয়ে ফেলুন। হাত ধোয়ার জন্য হ্যান্ড ওয়াশ ও জীবাণুনাশক ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন, বাসার বাইরে যতোই সাবধান হোন না কেনো, বাসায় এসে হাত না ধুয়ে বাসার অন্য লোকদের সংস্পর্শে এলে আপনার কারণে সবাই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

(এই লেখাটি কেবলই তথ্য শেয়ারের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে। এই লেখাকে কোনো মেডিকেল পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। আপনার যে কোনো রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.