করোনা ভাইরাস নিয়ে ছয় কল্পকথা: ভুলেও যা বিশ্বাস করবেন না
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের শেষ নেই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে পৃথিবীজুড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দেড় লাখের বেশি। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। বিশ্ব সংস্থা ইতোমধ্যে এই ভাইরাসকে মহামারী বলে ঘোষণা করেছে এবং পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাল্পনিক ও মিথ্যা তথ্যও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনের কল্যাণে। যাতে বলা হচ্ছে এটা করলে করোনা ভাইরাস হবে না, ওটা করলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে ইত্যাদি। এ রকম ছয়টি কাল্পনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে এই লেখা, যা ভুলেও বিশ্বাস করা যাবে না।
করোনা বা যে কোনো ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে কিছু অতিপ্রচলিত পদ্ধতি আছে, যেমন- হাত পরিষ্কার রাখা, ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখা, আবাসস্থান পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো প্রচারের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে কাল্পনিক তথ্যগুলোও। এরই এক পর্যায়ে ফেসবুককে বাধ্য হয়ে মিথ্যা ও ভুয়া সংবাদ যাতে কম ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
কাল্পনিক তথ্য এক: ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ করে রাখতে পারলেই বোঝা যাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি!
করোনা ভাইরাস যখন কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্য অত্যন্ত প্রবল প্রভাব বিস্তার করে, তখন ওই ব্যক্তির তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। এতে তার মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ করে রাখার পরও যদি ফুসফুস ঠিকঠাক কাজ করে এবং বুকের দিকটা শক্ত হয়ে না আসে; তাহলে বুঝতে হবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এটি একটি কাল্পনিক তথ্য। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকার প্রশ্নই আসে না।
এটি এতো সুন্দর একটি মিথ্যা যে তা খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় এবং ভাইরাসের ভয়ে ভীত মানুষ দ্রুতই তা বিশ্বাস করে নেয়। আমেরিকান অভিনেত্রী ডেবরা মেসিং ঠিক এই ভুলটাই করেছেন। নিজের ইনসটাগ্রামে এই তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। অথচ এটি বিরাট এক ভুল।
সত্য হলো: করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু বাড়িতে বসে মাত্র ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ করে করোনা পরীক্ষা করা অসম্ভব। আপনার যদি শ্বাসকষ্টের মতো কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়, দ্রুত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন ফেসবুক বা যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যগুলোর বেশির ভাগই নির্ভযোগ্য সূত্র থেকে আসে না।
কাল্পনিক তথ্য দুই: প্রচুর পানি পান করলেই করোনা ভাইরাস দূর হয়ে যাবে!
না, এটি সত্য নয়। কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হোক বা না হোক; পরিমিত পানি পান করা সব সময়ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে পানি পান করা মানেই ভাইরাস দূর করে ফেলা। এই কাল্পনিক তথ্য বলছে যে, ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করলে ভাইরাস গলা থেকে পাকস্থলীতে চলে যাবে এবং পাকস্থলীর এসিডে আর ভাইরাস টিকতে পারবে না।
একই সাথে এমন একটি তথ্যও অনলাইনে ঘুরছে যাতে বলা হচ্ছে গরম পানির সাথে লবন ও ভিনেগার দিয়ে কুলি করলেও ভাইরাস দূর হয়ে যাবে। এটিও সত্য তথ্য নয়।
সত্য হলো: করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে। প্রচুর পানি পান করা ভালো অভ্যাস হলেও তা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত এমন কোনো তথ্য নেই।
কাল্পনিক তথ্য তিন: গরম আবহাওয়ায় করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারবে না!
করোনা প্রতিরোধ চেষ্টার মধ্যে যে সব মিথ্যা অনেক বেশি ছড়িয়েছে, এটি তার মধ্যে একটি। গরম আবহাওয়ায় করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারবে না বলে জনসভায় মন্তব্য করেছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একবার নয়, একাধিকবার এমন কথা বলেছেন তিনি। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট তো আর মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন না, এমন ভেবে অনেকে তা বিশ্বাসও করে ফেলেছেন!
সত্য হলো: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে এবং অতিরিক্ত গরমসহ যে কোনো আবহাওয়ায় করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। গ্রীষ্ম ও বসন্তে তাপমাত্রা গরম থাকে বলেই যে করোনা ভাইরাস উত্তর গোলার্ধে প্রভাব বিস্তার লাভ করবে না, এমন তথ্য সঠিক নয়।
কাল্পনিক তথ্য চার: ফেস মাস্ক ব্যবহার করলেই করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে!
বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে হতাশার মনে হয় এই তথ্যটি যে ফেস মাস্কের ব্যবহার আসলে করোনার মতো ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরই বাংলাদেশে ফেস মাস্কের দাম বেড়ে গেছে এবং এক পর্যায়ে বাজারে শূন্যতাও সৃষ্টি হয়েছে।
সত্য হলো: ফেস মাস্ক মূলত রাস্তার ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাতের স্পর্শেও ছড়ায়। সুতরাং ফেস মাস্কের ব্যবহার নানা সুবিধা দিলেও তা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না। তবে এন-নাইনটিফাইভ ফেস মাস্ক কিছুটা হলেও কাজে লাগে এবং সেটা কেবলই আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যদি এন-নাইনটিফাইভ রেস্পিরেটর মাস্ক ব্যবহার করেন তাহলে তার হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় না।
কাল্পনিক তথ্য পাঁচ: রসুন ও ভেষজ ওষুধ করোনা থেকে বাঁচাতে পারে!
রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সত্যের উপর নির্ভর করেই অনলাইনে এমন কথা ছড়িয়ে পড়ছে যে রসুন খেলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা যাবে। এ রকম কিছু তথ্যও ছড়িয়ে পড়ছে যাতে বলা হচ্ছে রসুন সিদ্ধ করা পানি খেলেও করোনা ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব।
সত্য হলো: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে রসুন বা রসুন সিদ্ধ করা পানি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিন্তু তা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের জন্য উপযুক্ত কিছু নয়। না ভেষজ ওষুধ বা ভেষজ চায়ের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য।
কাল্পনিক তথ্য ছয়: অ্যালকোহল বা ব্লিচিং পাউডার শরীরে মাখলে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হবে না!
বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট দেখা দিয়েছে। এই পর্যায়ে লোকজন বিকল্প উপায়ে স্যানিটাইজার প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনলাইনে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে যে, অ্যালকোহল বা ব্লিচিং পাউডার শরীরে মেখে রাখলে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হবে না।
সত্য হলো: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অ্যালকোহল বা ব্লিচিং পাউডার শরীরে মাখলে কেবল ত্বকের ক্ষতি হবে, আর কিছু না। এই পদ্ধতি কোনোভাবেই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো বলেছে, অ্যালকোহল শরীরে মাখা বা ব্লিচিং পাউডার খাওয়া বা শরীরে মাখা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
(এই লেখাটি কেবলই তথ্য শেয়ারের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে। এই লেখায় কোনো মেডিকেল পরামর্শ নেই। আপনার যে কোনো রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.