যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে আসলে কী ঘটেছিল

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে জিতে বাংলাদেশ দল যখন উদযাপন করতে যায় তখনই বেধে যায় বিপত্তি, নাকি ঘটনার শুরু আরো আগে? সূত্র বলছে, ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে। এর পর পুরো ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশ দলকে নাকি গালিগালাজ করা হয়েছে। আর ম্যাচ শেষে ভারতের ক্রিকেটাররা একটু ক্ষেপে যায়। এক পর্যায়ের বাংলাদেশের পতাকা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা এবং ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

মাঠে থাকা বেশ কিছু ক্যামেরায় গতকালের ওই ঘটনার ভিডিও ধরা পড়েছে। তাতে দেখা যায়, খেলায় হেরে বাংলাদেশের উদযাপন সহ্য করতে না পেরে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এক ভারতীয় খেলোয়াড়। তিনি বাংলাদেশি ক্রিকেটারের কাছ থেকে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে নেন! জাতীয় পতাকার এমন অবমাননা ক্রিকেট মাঠে একেবারেই বিরল ঘটনা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির জুনিয়র নির্বাচক কমিটির সদস্য হাসিবুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, পুরো ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আজে-বাজে ভাষায় স্লেজিং করে গেছে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এমনকি বাপ-মা তুলে গালি দেওয়া হয়েছে। পরে বাংলাদেশের ছেলেরা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করতে যায়। এতেই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।

জানা গেছে, ম্যাচের পর ভারতীয়রা ভদ্রতাসূচক করমর্দনও করেনি। পরে অবশ্য পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আনুষ্ঠানিকতা মেনে করমর্দন করেন দুই দলের ক্রিকেটাররা।

এদিকে, বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি দুঃখ প্রকাশ করলেও ভারতীয় অধিনায়ক কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। তারা বাংলাদেশের ওপর দোষ চাপিয়েই দায় সাড়ে।

এ ব্যাপারে আকবর বলেন, 'যা হয়েছে তা দুঃখজনক। এমনটা হওয়া উচিত ছিল না। আমি জানি না ঠিক কী হয়েছে। আমি জিজ্ঞেসও করিনি কী হচ্ছে। তবে এ তো জানাই, ফাইনালে আবেগ একটু বেশি থাকে। ছেলেরাও একটু বেশি উত্তেজিত থাকে, আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তবে তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে এমনটা হওয়া উচিত নয়। যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো আচরণে আমাদের উচিত প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখানো। খেলাটার প্রতিও শ্রদ্ধা থাকা দরকার।'

বাংলাদেশ অধিনায়ক আরো বলেন, 'ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা হিসেবেই পরিচিত। তাই আমি বলছি, আমার দলের পক্ষ থেকেই বলছি, আমি দুঃখিত।'

অপরদিকে, ভারতীয় অধিনায়ক প্রিয়ম গার্গ পুরো ঘটনার জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরই দোষ দিয়েছেন। বলেছেন, 'আমরা স্বাভাবিকই ছিলাম। আপনি কোনো দিন জিতবেন, কোনো দিন হারবেন- এটাই তো খেলার স্বাভাবিক নিয়ম। তবে ওদের প্রতিক্রিয়া কদর্য ছিল। এমনটা হওয়া উচিত ছিল না। যা-ই হোক, এটি বড় কিছু না।'

আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ সময় গতকাল রোববার দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই ম্যাচে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ভারতীয় ওপেনারকে ভয় ধরিয়ে দেন তানজীম হাসান সাকিব। এর রেশ থেকে যায় ম্যাচ শেষ অব্দি।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং প্রান্তে সাকিব, ব্যাটিং প্রান্তে সাক্সেনা। ব্যাট সোজাসুজি চালানোয় বোলার সাকিবের হাতেই জমা পড়ে। সাকিব বল নিয়েই ‘আগ্রাসীভাবে’ স্টাম্প লক্ষ্য করে থ্রো করেন, সাক্সেনা সরে না গেলে তার মাথায় লাগতে পারতো। তখন থেকেই ঘটনার শুরু।

এর পর বাংলাদেশ যখন ভারতকে হারিয়ে উৎসবে মেতেছিল তখন এক যুবার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ভারতের ক্রিকেটাররা। যা রূপ নেয় ধাক্কাধাক্কিতে। মুহূর্তের মধ্যে দুই দলের কিছু সংখ্যক খেলোয়াড় জড়ো হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারকে হস্তক্ষেপ করতে হয় ।

এদিকে, গতকালের এই ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমেছে আইসিসি। আজ বিকালেই এ বিষয়ে রিপোর্ট দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।