২০০৬ সালের কথা, ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সির ১৯ বছর বয়সী এক তরুণের খেলা দেখে হতবাক গোটা রিয়াল মাদ্রিদ। তখনই তৎকালীন রিয়াল প্রেসিডেন্ট র‌্যামোন ক্যালডেরন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আমন্ত্রণ জানান সেই বিস্ময় বালককে। জবাবে উঠতি তারকা বলেছিলেন, ‘(রিয়াল) মাদ্রিদে খেলার জন্য আমি ব্রাজিল থেকে স্পেনে হেঁটে যেতে রাজি আছি।' রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি ওই খেলোয়াড়ের ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু তা বলা কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। অন্য কেউ নন, সাম্বা বিউটি মার্সেলো ভিয়েরা দা সিলভা জুনিয়রের কথাই বলা হচ্ছে।

marcelo play 500 match for real madrid

ফুটবলারদের জন্য রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে জায়গা পাওয়া নিঃসন্দেহে অনেক বড় ব্যাপার, কিন্তু মার্সেলোর জন্য এটি ছিল বিশেষ কিছু। কারণ তার আইডল রবার্তো কার্লোস যে রিয়াল মাদ্রিদেই খেলতেন! এ জন্যই হয়তো মাদ্রিদের প্রতি তার ভালোবাসা এত বেশি ছিল। শুধু আবেগ নয়, মাঠেও দারুণ কার্যকর এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। একাদশে মার্সেলো মানেই মাঠজুড়ে তার বিচরণ। রক্ষণ থেকে আক্রমণ ভাগ মাঝখানে মধ্যমাঠ তিন জায়গাতেই প্রতিপক্ষের আতঙ্ক হয়ে ওঠেন এই তারকা।

যদিও রিয়াল মাদ্রিদ মার্সেলোকে দলে এনেছিল ব্রাজিলিয়ান ‘আয়রনম্যান’ কার্লোসের উত্তরসূরি হিসেবে। কিন্তু শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি তার। ২০০৭-০৮ মৌসুমে আসা নতুন কোচ ব্রেন্ড সুস্টারের দলে জায়গা পাননি মার্সেলো। মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেও কার্লোসের উত্তরসূরি হওয়ার যে একটা চাপ সেটা নিতে পারেনি। যার প্রভাব পড়ে পারফরম্যান্সে, মাসুল দিতে হয় তাকে। নীরবে সহ্য করতে হয়েছিল বার্নাব্যু দর্শকদের বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি মার্সেলো। নিজের মতো করেই লড়াই চালিয়ে গেছেন সদা হাস্যোজ্জ্বল মার্সেলো।

marcelo in 2007

খারাপ সময়েও মার্সেলো হাল ছাড়েননি। কঠোর পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে রিয়ালের লেফট ব্যাক পজিশনে জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন তিনি। ২০০৭-০৮ মৌসুমের শেষ ১৬ ম্যাচের ১১টিতেই প্রথম একাদশে ছিলেন মার্সেলো। এরপর ২০০৯-১০ মৌসুমে ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি আসেন রিয়ালের নতুন কোচ হয়ে। চিলিয়ান কোচের হাত ধরেই আকাশে ওড়ার স্বাধীনতা পান মার্সেলো।

পেলেগ্রিনি এসেই রিয়ালের রক্ষণভাগের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন মার্সেলোকে। সেই মৌসুমে রিয়ালের রক্ষণে অসাধারণ উন্নতি হয়। কিন্তু আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা থেকে নিজেকে বের করতে পারননি তিনি। এর সবচেয় বড় উদাহরণ হচ্ছে মৌসুম শেষে স্ট্রাইকার রোনালদো এবং কাকার পরেই সব থেকে বেশি এসিস্ট ছিল ডিফেন্ডার মার্সেলোর!

কোনো ফুটবলপ্রেমীকে যদি প্রশ্ন করা হয় ২০১৪ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গোল করেছেন কে কে? উত্তরে সবার আগে নাম আসবে মার্সেলোর। রোমাঞ্চকর মাদ্রিদ ডার্বি ও শিরোপা নির্ধরাণী ম্যাচে রিয়ালের হয়ে গোল করেছেন আরো তিনজন। কিন্তু একটা ফ্যানব্যাজ আছে এখনও। ক্যামেরার সবকটি এঙ্গেল থেকে দেখানো হয়েছে সেই গোল। রিয়াল কিংবদন্তি হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গোল করার চেয়ে বড় আর কী হতে পারে!

marcelo ronaldo in real madrid

রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন এসেছে। জায়গা ধরে রাখার প্রতিযোগিতা বেড়েছে। কিন্তু সাপে-নেউলের এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবার মার্সেলোই জিতেছেন। নিজের হাশিখুশি ব্যক্তিত্ব দিয়ে মন জয় করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সব সতীর্থের। পুরস্কার হিসেবে ২০১৫-১৬ মৌসুমে রিয়ালের ভাইস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পান তিনি। মার্সেলোকে বর্তমান কোচ জিদানের অন্যতম সেরা হাতিয়ার বললেও ভুল হবে না। কারণ আক্রমণ এবং রক্ষণ দুই বিভাগেই সমান পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তিনি।

বাঁ পাশ থেকে রোনালদো-মার্সেলো জুটি ছিল একটা ত্রাস। মার্সেলোর নিখুঁত ক্রস থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর করা গোলগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখতো ফুটবল দুনিয়া। পর্তুগিজ উইঙ্গার মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাওয়া মানুষটার নাম মার্সেলো বললে বোধহয় ভুল হবে না।

marcelo winning cup

২০০৭ থেকে ২০২০, মাঝে কেটে গেছে একযুগেরও বেশি সময়। এর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে মার্সেলো খেলেছেন ৫০০টি ম্যাচ। বৃহস্পতিবার স্প্যানিশ কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাইলফলকটি ছুঁয়েছেন মার্সেলো। রিয়ালের বিদেশি ফুটবলার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আর ২৭ ম্যাচ খেললেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন স্বদেশি কিংবদন্তি রবার্তো কার্লোসকে (৫২৭)। রিয়ালের হয়ে ১৩ বছরের স্বপ্নযাত্রায় ৩৪৫টি ম্যাচ জিতেছেন মার্সেলো; গোল করেছেন ৩৬টি। চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগসহ সর্বমোট ২১টি ট্রফি জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.