স্টার্টআপ ব্যবসায় ৯৪ বছরের বৃদ্ধা!

যে বয়সে মানুষ বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন, সেই বয়সেই কিনা এক বৃদ্ধা নিজের স্টার্টআপ ব্যবসা শুরু করলেন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি! ঘটনাটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের চণ্ডীগড় জেলার। সেখানকার বাসিন্দা ৯৪ বছরের বৃদ্ধা হরভজন কৌর। যিনি গত চার বছর ধরে নিজ হাতে মিষ্টি বানিয়ে সেগুলো বাজারে বিক্রি করছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার এই বৃদ্ধাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উঠে আসে তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। তিনি এখন চণ্ডীগড়ে তার মেয়ে রবিনার কাছে থাকেন। মেয়ে, জামাই ও নাতনিকে ঘিরেই তার সুখী পরিবার।

মেয়ে রবিনা বলেন, চার বছর আগে একদিন মায়ের সঙ্গে গল্প করছিলেন। কথার প্রসঙ্গে মায়ের কী করতে ভাল লাগে? ৯০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর জীবনটাকে কীভাবে উপভোগ করেন? জীবনে কোনো আক্ষেপ আছে কিনা? এইসব কথা উঠে আসে।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মাথা নেড়ে মা জানায়, জীবনে কখনও উপার্জন করতে পারেননি তিনি। এটাই তার সারাজীবনের আক্ষেপ।

সেদিন বৃদ্ধা মায়ের কাছে গল্পটা শেষ হয়ে গেলেও মেয়ের কাছে শেষ হয়নি। তারপর থেকেই মায়ের জন্য কিছু একটা করার তাড়না কাজ করতে থাকে। কিন্তু কি করবেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

তখন হঠাৎ করেই মনে পড়লো মা খুব ভালো রান্না করতে পারেন। বাড়ির কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে দোকান থেকে কখনও মিষ্টি আনা লাগতো না। বাড়িতেই মিষ্টি বানাতেন মা। নানারকম সুস্বাদু আচারও বানাতেন তিনি, যোগ করেন মেয়ে রবিনা।

তিনি বলেন, ছোটবেলায় মায়ের রান্না খেয়ে অতিথিরা খুব প্রশংসা করতেন। কিন্তু ভীষণ লাজুক থাকায় মা কখনো লজ্জায় অতিথিদের সামনে আসতেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় ওই রান্নাঘরেই কাটিয়ে দিতেন।

যেই ভাবা সেই কাজ। তখন মায়ের কাছে গিয়ে নিজের স্টার্টআপ ব্যবসা শুরুর প্রস্তাব রাখেন তিনি। ব্যবসার কথা শুনে প্রথমে চমকে যান বৃদ্ধা হরভজন কৌর। পরে নাতনি এবং মেয়ে রবিনার জোরাজুরিতে ৯০ বছর বয়সেই নিজের ব্যবসা শুরু করলেন।

ব্যবসা শুরুর প্রথমদিকে একদিন বেসনের বরফি এবং বিভিন্ন ধরনের আচার বানিয়ে কাছের একটি অর্গানিক বাজারে বিক্রি করেছিলেন। ওইদিনই সবগুলো বিক্রিও হয়ে গিয়েছিল। হাতে ২০০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আর এটাই ছিল হরভজন কৌরের ৯০ বছরের জীবনের প্রথম উপার্জন।

মেয়ে রবিনা বলেন, সেদিন মায়ের চোখে-মুখে ছিল প্রচুর আত্মবিশ্বাস। তারপর থেকে আর কখনোই ওনাকে জোর করতে হয়নি। তিনি নিজেই কাস্টমারদের থেকে অর্ডার নেন এবং বেসনের বরফি বানিয়ে সেগুলো দোকানে পাঠিয়ে দেন। প্যাকিংয়ের কাজে সাহায্য করেন তার নাতনি।

জানা যায়, গত চার বছর ধরে একই রকম উৎসাহ নিয়ে ‘হরভজনস বচপন ইয়াদ আজায়ে’ নামে নিচের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন হরভজন কৌর। তার প্রতি কেজি বেসনের বরফির দাম ৮৫০ টাকা। এই চার বছরে মোট ৫০০ কেজি বরফি বিক্রি করেছেন তিনি। নাতনির বিয়েতেও অতিথিদের এই মিষ্টি খাইয়েছেন।

এখন ভালো করে হাঁটতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিও আগের চেয়ে ঝাপসা হয়ে গেছে। এতদিন ব্যবসার সবকিছু তিনি একাই করতেন। তবে এবার লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করতে চান মা, বলেন মেয়ে রবিনা।