লিভারপুলের জয়ে সালাহর মুক্তির আনন্দ

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি আসরে প্রায়সব দলকে হারিয়েছে লিভারপুল। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেরা ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়ে আটকে গিয়েছিল অল রেডরা। লিগে এই দলটাকেই কেবল হারাতে পারেনি ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। রোববার রাতে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে সেই হতাশা কিছুটা হলেও দূর করল লিভারপুল।

কাল রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ডেকে এনে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছেন সালাহ-ফন ডাইকরা। ফল দেখে মনে হতে পারে ম্যাচটা একপেশেভাবে জিতেছে ক্লপের দল। আদতে তা নয়। এদিন মার্সিসাইডে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই হয়েছে। ম্যাচের অন্তিম সময় পর্যন্ত লিভারপুলের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার ঠেকাতে পারেনি ওলে গানার সুলশারের দল। উল্টো ম্যাচের শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় গোল হজম করে বসে রেড ডেভিলসরা। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ম্যানইউর জাল কাঁপিয়ে জার্সি খুলে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন মোহাম্মদ সালাহ। তা লিভারপুল প্রাণভোমরার এমন আগ্রাসী উদযাপনের কারণ কী?

নেপথ্য কারণ চক্রপূরণের আরো কাছে চলে এসেছেন সালাহ। ইংলিশ লিগ অধ্যায়ে ২৪ দলের মুখোমুখি হয়ে ২২ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই গোল করেছেন তিনি। যে দুটি দল বাকি ছিল তার একটি ম্যানইউ। অবশেষে স্বস্তির গোল করেন মিশরীয় ফরওয়ার্ড; মেতে ওঠেন মুক্তির আনন্দে। বৃত্তপূরণ থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে আছেন সালাহ। এখন তার চোখ সোয়ানসি সিটির জালের দিকে।

ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় লিভারপুল। ১৪ মিনিটে ভার্জিল ফন ডাইকের গোলে লিড নেয় অল রেডরা। কিন্তু এগিয়ে থেকেও ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারছিল না স্বাগতিকরা। কেননা ম্যাচে ফিরতে লিভারপুলের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সমতায় ফিরতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি সুলশারের দল।

রেড ডেভিলসদের সব চেষ্টা মাটি করে দেয় লিভারপুলের রক্ষণবিভাগ। ব্রাজিলিয়ান ও বিশ্বসেরা গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারও যথেষ্ঠ হতাশ করেছেন ম্যানইউকে। ১২ মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো স্বাগতিকদের। কিন্তু রবার্তো ফিরমিনো যে গোলটা করেছেন সেটা ভিএআরের সহায়তা নিয়ে বাতিল করে দেন রেফারি।

টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান তারকার গোলের আগেই ম্যানইউ গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়াকে ফাউল করেছেন ফন ডাইক। সেটারই খেসারত দিতে হলো ফিরমিনোকে গোলবঞ্চিত হয়ে। সেই আক্ষেপ অবশ্য বাতাসে মিশে গেছে ম্যাচ শেষে। জর্ডান হেন্ডারসনেরও আফসোস থাকার কথা নয়। যদিও গোলবঞ্চিত হয়েছেন তিনিও।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে হেন্ডারসনের দারুণ শট ডি গিয়ার গ্লাভস ছুঁয়ে ম্যানইউর পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ভাগ্য বারবার বাঁচিয়ে দিচ্ছিল অতিথিদের। রেড ডেভিলসরাও সাহসী ফুটবল খেলতে থাকে। শুধু গোলটাই পাচ্ছিল না তারা। তবু পিছিয়ে থেকেও আগা-গোড়া চাপে রাখে স্বাগতিক লিভারপুলকে। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য ক্লপের দলকে কী আর ঠেকানো যায়!

গত অক্টোবর অবশ্য অল রেডদের ডেকে এনে রুখে দিয়েছিল ম্যানইউ। ওল্ড ট্রাফোর্ডে গতবারের রানার্সআপদের সঙ্গে ১-১ গোলে করে তারা। লিগের চলতি আসরে একমাত্র ওই ম্যাচটাতেই পয়েন্ট খুইয়েছে মার্সিসাইডের ক্লাবটি। এবার সেই ড্রয়ের উপযুক্ত জবাব দিল লিভারপুল। তুলে নিল দারুণ জয়। এই জয়ে শিরোপা জয়ের পথে আরেকধাপ এগিয়ে গেল তারা।

২২ ম্যাচে ২১ জয়ে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের পয়েন্ট এখন ৬৪। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১৬ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছে অল রেডরা। সালাহ-ফিরমিনোরা অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলেছে। দলটির প্রধান কোচ ম্যাচ শেষে এদিন ঘোষণা দিয়ে বসলেন, ‘লিভারপুল লিগ জিততে চলেছে।‘

ক্লপের কথাটা বাস্তবসম্মত এবং যৌক্তিক। অলৌকিক কিছু না ঘটলে এই মৌসুমেই ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে লিভারপুল সমর্থকদের। লিভারপুলের রাতে হোঁচট খেয়েছে তিনে থাকা লেস্টার সিটি। সাবেক চ্যাম্পিয়নদের ডেকে এনে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বার্নলি।

এই হারের পরও ২৩ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয়স্থানে অটুট আছে বার্নলি। চারে থাকা চেলসির পয়েন্ট ৩৯। তাদের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে পাঁচে নেমে গেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।