ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্বে ফাটল

মার্কিন বাহিনীর ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলায়মানি নিহত হওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চায় না বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। খবর বিজনেস ইনসাইডার।

স্থানীয় সময় রোববার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার বেন ওয়ালেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ২০১০ সালে একটি যৌথ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে দু'দেশ পারস্পরিক সহযোগিতায় কাজ করে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বিস্তারে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী একত্রে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সে সাথে দু'দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একে অপরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করবে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট সেই সিদ্ধান্ত থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। দু'দেশের মতপার্থ্যকও সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে যুক্তরাজ্য।

এ প্রসঙ্গে বেন ওয়ালেস আরো বলেন, যুক্তরাজ্য এখন নতুন মিত্র খুঁজছে যারা যুক্তরাজ্যকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সে মিত্র হবে আগের যেকোন মিত্র থেকে শক্তিশালী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে নেতৃত্বদান করছে ট্রাম্প তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। যুক্তরাজ্য ইরান বিষয়ে তাদেরকে আগেই সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তারা সে পরামর্শ না মেনে কাশেম সোলায়মানিকে হত্যা করে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে কলুষিত করেছে। দু'দেশের সম্পর্কে ফাটলের সৃষ্টি করেছে।

বেন ওয়ালেস বলেন, চীনের হুয়াই কোম্পানি যুক্তরাজ্যে ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা কোম্পানির সাথে কাজ করলে যুক্তরাজ্যের সাথে যুক্তরাষ্টের যৌথ গোয়েন্দা স্থগিত করার হুমকি দেন। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন থেকে বারবার এ বিষয়ে হুমকি এসেছে। বন্ধু রাষ্ট্র থেকে এধরনের হুমকি অগ্রহণযোগ্য।

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এক মুখপাত্র দেশটির অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ইরান ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনা উড়িয়ে দেয়ার যে হুমকি দিয়েছেন যা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী এবং যুদ্ধাপরাধ সমপর্যায়ের। এ ইস্যুতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পাশে অবস্থান করতে পারছি না।

গত সপ্তাহে কাশেম সোলায়মানি হত্যার পরপরই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র‍্যাব হত্যাকাণ্ডটিকে 'ভয়ঙ্কর' বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে হামলা চালানো হয়ছে। এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে। সহিংসতা বাড়লে সেখানকার উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা সুবিধায় থাকবে।

বিজনেস ইনসাইডার তাদের প্রতিবেদনে আরো জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান যুক্তরাজ্যকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যুক্তরাজ্যের পরামর্শকে প্রাধান্য না দেওয়া সে কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করেছে। তাছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগিদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বুঝা যাচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা ভঙ্গ করে নতুন মিত্র খুঁজার পথে ধাবিত হচ্ছে।