শান্তর শতকে ইতিহাস গড়ল খুলনা

আগের ইনিংসে শতক হাতছাড়া করেছেন ঢাকা প্লাটুন ওপেনার মুমিনুল হক সৌরভ। নয় রানের জন্য স্বপ্নের শতক পাননি তিনি। গতকাল একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। আজ সেই মুশি উচ্ছ্বাস করলেন। সেটা অবশ্য নিজের জন্য নয়। সতীর্থ নাজমুল হোসেন শান্তর শতক উদযাপন করলেন তিনিও!

তরুণ এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের অপরাজিত সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে সফল রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ল খুলনা টাইগার্স। ঢাকার ছুড়ে দেওয়া ২০৫ রানের চ্যালেঞ্জ খুলনা (২০৭/২) পেরিয়ে গেল ১১ বল ও আট উইকেট হাতে রেখেই। তাতেই হলো নতুন ইতিহাস। বিপিএলে দুই শোর্ধ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড যে এটাই প্রথম!

২০১৩ সালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সের দেওয়া ১৯৭ রানের চ্যালেঞ্জ জিতে নিয়েছিল সিলেট রয়্যালস। আজ একই মাঠে ঢাকা প্লাটুন রানের পাহাড় গড়ে খুলনাকে ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। সেখানেই বাজিমাত খুলনার। ইতিহাস গড়ার নায়ক শান্ত। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করলেন সেঞ্চুরি; টুর্নামেন্টে তিনি তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ান।

খুলনার পাহাড় ডিঙানোর ভিতটা গড়ে দিয়েছে উদ্বোধনী জুটি। সপ্তম ওভার শেষ হওয়ার আগেই স্কোর বোর্ডে ৭০ রান তুলে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও শান্ত। ২৫ বলে ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন মিরাজ। ইনিংসে সাতটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা। মিরাজের আউটে ভাঙে শুরুর জুটি।

ততক্ষণে শান্তর ব্যাট হয়ে উঠেছে উত্তাল। ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে ঢাকার বোলারদের কচুকাটা করেন খুলনা ওপেনার। ৫৭ বলে ১১৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে বীরদর্পে মাঠ ছেড়েছেন শান্ত। অজেয় ইনিংসে আটটি চারের সঙ্গে সাতটি ছক্কা। রাজসিক ইনিংসের সুবাধে অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন শান্ত।

এনিয়ে ১২ ম্যাচের আটটিতেই জিতল খুলনা টাইগার্স। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থেকেই রবিন লিগ রাউন্ড শেষ করল তারা। রাজশাহী রয়্যালস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেরও পয়েন্ট ১৬। তবে রানরেটে পিছিয়ে দুই ও তিনে নেমে গেছে তারা। তবে হারলেও ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চারের লড়াইয়ে থাকল মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা প্লাটুন।

মিরাজ সাজঘরে ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৮১ রান যোগ করেন শান্ত ও রাইলি রুশো। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ মোটে ২৩! ১৭ বলের ইনিংসে দুটি ছক্কা মেরে বিদায় নেন রুশো। মুশফিক অজেয় থাকলেন ১০ বলে ১৮ রান করে। ইনিংসে চারের মার তিনটি।

ম্যাচটা শুরুর আগেই একবার হেরে বসেছে ঢাকা প্লাটুন। মুশফিকের কাছে মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াইয়ে হারেন মাশরাফি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে নামে ঢাকা। আগে ব্যাট করতে নামা সাবেক চ্যাম্পিয়নদের শুরুটা হলো বাজে। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৩৫ রানে সাজঘরে ফিরে গেলেন তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয় ও জাকির আলি।

তিনজনের রান যথাক্রমে ১, ১০ ও ১৪। কঠিন বিপর্যয় থেকে ঢাকাকে টোনে তোলেন মুমিনুল ও মেহেদি হাসান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ১৫৩ রান। জুটি ভাঙে ১৯তম ওভারের শেষ বলে মুমিনুলের বিদায়ে। ঢাকা ওপেনার আউট হয়েছেন ৫৯ বলে ৯১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে। তার ইনিংসে সাতটি চারের সঙ্গে চারটি ছক্কার মার ছিল।

ঝড় উঠেছিল অন্য প্রান্তেও। মেহেদি ৩৬ বলে ৬৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অজেয় ছিলেন। বিষ্ফোরক ইনিংসটা তিনটি চার ও পাঁচ ছক্কায় সাজিয়েছেন মেহেদি। খুলনার হয়ে রান দেওয়ার হাফসেঞ্চুরি করেছেন শফিউল ইসলাম; নিয়েছেন এক উইকেট। শেষ দিকে দুই ওভারে ৩৭ রান দিয়েছেন তিনি। দুটি শিকার রবি ফ্রাইলিংকের। অন্য উইকেটটা মোহাম্মদ আমিরের।