মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত কি শুরু হলো?
- Details
- by রওশন প্রধান
বেশ কিছু দিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মূলত ‘অবাধ্য’ ইরানকে ‘শিক্ষা’ দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে আসছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ইরান সমর্থিত ইরাকের আধা-সামরিক বাহিনী হাশদ-আশ-শাবের কয়েকটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এতে অন্তত ৩০ জন প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হয়, আহতও হয় অনেকে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইরাকে মার্কিন দূতাবাস ঘিরে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ইরাকিরা। সেইসঙ্গে মার্কিন দূতাবাস অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে অবশ্য ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তারা সেখান থেকে সরে যান। তবে ট্রাম্প দূতাবাসে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার হুকমি দেন।
তার পর দিনই অর্থাৎ শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের এলিট ফোর্স রেভ্যলুশনারি গার্ড বাহিনীর বিশেষ শাখা আল কুদসের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলায়মানি এবং হাশদ-আশ-শাবের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে হত্যা করে।
ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকারও করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন।
কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন বলেছে, সম্প্রতি বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলার পেছনে এই জেনারেল সোলায়মানির উস্কানি ছিল। তাই ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) মার্কিন স্বার্থে যেন ইরান আঘাত হানার সাহস না পায় সেজন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ দাবি করলেও পেছনের ঘটনা বলছে অন্য কথা। আর তা হলো- এর আগে গত আশুরায় ইরানেই জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যার চেষ্টা করে আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরব। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার দাবি করে তেহরান।
শুধু তাই নয়, তার আগে নাকি আমেরিকা ও ইসরায়েল দুই দুই বার জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যার সুযোগ পেয়েও করেনি। তার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো জানায়, জেনারেল সোলায়মানি ইরানের এবং বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর সামরিক কমান্ডার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরান তো বটেই, সেইসঙ্গে ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ অন্তত ১৫-২০টি দেশে ইরান সমর্থিত প্রতিরোধ যোদ্ধা তৈরি করেছেন। তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষে ছায়াযুদ্ধ তথা মার্কিন ও তার মিত্রদের স্বার্থে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
তাছাড়া জেনারেল সোলায়মানি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও প্রিয়। এমনকি নিজের কাজ-কর্মের জন্য তিনি সরাসরি সর্বোচ্চ নেতার কাছে জবাবদিহি করতেন। জেনারেল সোলায়মানির ওপর হামলাকে নিজের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করেন ইরানের সুপ্রিম লিডার। তাই জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যার অর্থ হলো মৌচাকে ঢিল দেওয়ার মতো। কারণ সোলায়মানির ওপর হামলা মানে গোটা মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অঞ্চলেও মার্কিন স্বার্থ হুমকির মুখে পড়া। সুতরাং সেই চিন্তা থেকেই নাকি সুযোগ পেয়েও এই জেনারেলকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকে আমেরিকা ও ইসরায়েল।
কিন্তু অবশেষে সেই মৌচাকেই ঢিল দিলো ট্রাম্প প্রশাসন।
তেহরান দাবি করছে, বিগত কয়েক বছরে ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস সৃষ্টিতে মদদ দিয়েছে আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরব। আর জেনারেল সোলায়মানি আইএস নির্মূলে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। আর সে কারণেই তাকে হত্যা করেছে মার্কিন বাহিনী।
এদিকে, নিজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জেনারেলের হত্যাকাণ্ড হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। বলেছেন, যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে জেনারেল সোলায়মানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য কঠোর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। এ ঘটনায় ইরানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন তিনি।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ক্ষণিকের আনন্দ-উল্লাস শোকে পরিণত হবে।
তিনি বলেছেন, আইআরজিসি, জনগণ এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিরোধ ফ্রন্ট জেনারেল সুলাইমানির রক্তের বদলা নেবে। আজ থেকে আইআরজিসি ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের নয়া অধ্যায়ের সূচনা হবে এবং জেনারেল সুলাইমানির গড়ে তোলা যোগ্য ও সাহসী সংগ্রামীরা তার লক্ষ্য-আদর্শকে বাস্তবায়ন করবে।
ইতোমধ্যে জেনারেল কাসেম সুলাইমানির পদে নিয়োগ পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়ানি। কুদস ফোর্সের প্রধান তাকে নিয়োগ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঝাণ্ডাবাহী কমান্ডার লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে আমেরিকা। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন একটি ভয়ঙ্কর, কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমেরিকার এই ঔদ্ধত্বপূর্ণ ও হঠকারী হামলার যেকোনো পরিণতির দায় ওয়াশিংটনকে বহন করতে হবে।
অন্যদিকে, জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করার পরিণামে ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে আমেরিকার প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল-মাহদি।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রী এ হামলাকে তার দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে মনে করেন। এ আগ্রাসন ইরাকের রাষ্ট্র, সরকার এবং জনগণের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে।
জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যার প্রতিবাদে ইরানে কোটি মানুষ বিক্ষোভ করেছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নাগরিকদের দ্রুত ইরাক ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। বাগদাদে দূতাবাসে যোগাযোগ না করে সরাসরি তাদের ইরাক ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিমানে যাওয়া সম্ভব না হলে সড়ক পথে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ইরাকসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকে মনে করছেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ ইরান তথা জেনারেল সোলায়মানির গড়া প্রতিরোধ ফ্রন্ট তাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.