হাত পুড়লে যা যা করবেন না

রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ফুটন্ত পানি পড়ে অথবা আগুনের ছ্যাঁকা খেয়ে হাতে পায়ে ফোসকা ফেলার অভিজ্ঞতা মোটামুটি সবারই আছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে বা ক্ষতস্থানে কি লাগাতে হবে তা অনেকেই জানেন না। অবার অনেকে প্রচলিত বিশ্বাসের বশে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে থাকেন। যা ক্ষতস্থানে মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে।

হাত পুড়লে যা যা করবেন না

ইমারজেন্সি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর স্টেফান অপারমানের মতে, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ক্ষতস্থানে বা ছ্যাঁক লাগার স্থানে কলের পানি ঢালা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কারণ কলের পানির তাপমাত্রা ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হয়ে থাকে। যার কারণে ক্ষতস্থান দ্রুত শীতল হয়ে ফোসকা পড়ার সম্ভাবনা কমায় এবং আরাম দেয়। কিন্তু এর থেকে বেশি শীতল পানি ঢাললে ক্ষতস্থানের টিস্যুর অবনতি হতে পারে।

অনেকেই এমন পরিস্থিতির শিকার হলে ক্ষতস্থানে জেল অথবা ক্রিম লাগিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার ঘরোয়া টোটকা হিসেবে টুথপেস্ট, তেল, মাখন, ময়দা অথবা মধু ব্যবহার করেন থাকেন। হাতের কাছে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে সেটার রসও লাগান অনেকে ভুক্তভোগী। ফোসকার হাত থেকে বাঁচাতে দইও নাকি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত কিছুটা ভিন্ন। প্রফেসর অপারমান বলেন, মাত্র সৃষ্টি হওয়া ক্ষতের ওপর জেল অথবা ক্রিম লাগানো উচিত নয়। কারণ এতে ক্ষতস্থানে ইনফেকশনও হতে পারে। যা আগে থেকে বোঝা যায় না। এছাড়া অন্যান্য ঘরোয়া টোটকা তো কোন কাজেই আসে না বরং মারাত্মক সংক্রামণ ঘটাতে পারে। তবে অ্যালোভেরা গাছের রস ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধ ও ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে খাঁটি অ্যালোভেরার রস লাগানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

অপারমান আরো বলেন, তারপরও যদি ক্ষতস্থানে ছোট ফোসকা পড়ে যায় তাহলে সেটি ধারালো কিছু দিয়ে নিজে নিজেই খোলার চেষ্টা করতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ক্ষত পুরোপুরি উন্মুক্ত না হলে সেখানে ত্বকের নিচে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। আর যদি এমনটা হয় তাহলে সেখানে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

তাই ফোসকা শুধু না ফাটিয়ে পুরো ত্বকটাই জীবাণুবিহীন পরিবেশে সরিয়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তা করা ভালো।

হাত পুড়লে যা যা করবেন না

এ বিষয়ে হামবুর্গের বার্ন সেন্টারের ড. ফ্রাংক বিসগোয়া বলেন, ফোসকার ভিতর থেকে প্রথম দুই-একদিন প্রচুর পরিমাণ ক্ষরণ হয়। তাই শুধু ফোসকা ফাটিয়ে দিলে কোন লাভ হয় না। বরং তাতে সাইটোটক্সিক হয়ে ক্ষতের নিচের কোষ মেরে ফেলে এবং ত্বকের দ্রুত সেরে ওঠা প্রতিরোধ করে। তাছাড়া আংশিকভাবে ফাটানো বা ত্বক সরানো ফোসকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।

ক্ষতের মুখ খুলে গেলে সেখানে অবশ্যই প্লাস্টার লাগানো উচিত বলে মনে করেন অপারমান। তিনি বলেন, ক্ষতস্থানে লাগানোর জন্য সিলভারস্টিমড ও স্বচ্ছ দুই ধরনের প্লাস্টারই উপযুক্ত। তবে পোড়া ক্ষতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্লাস্টারের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি। কারণ তাতে ক্ষতের ওপর আর্দ্র একটা স্তর সৃষ্টি হয়ে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। তাই সাধারণ জীবাণুবিহীন প্লাস্টার ব্যবহার ও নিয়মিত সেটি পরিবর্তনের পরামর্শ দেন অপারমান।

তবে কয়েক ধরনের ছ্যাঁকা বা পোড়ার ক্ষেত্রে প্লাস্টার কোন কাজে আসে না। তাই এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ড. বিসগোয়ার মতে, ক্ষতস্থান যত খারাপভাবে পুড়বে, ব্যথা তত কম হবে। কারণ ক্ষতস্থান যত বেশি পোড়ে তার আশেপাশের স্নায়ুও তত বেশি ধ্বংস হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো।