শত অপমানের জবাব!

২০তম ওভারের চতুর্থ বলে ভারতের অভিষিক্ত ক্রিকেটার শিভাম দুবেকে কাভারের ওপর দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের সাত উইকেটের জয় নিশ্চিত করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মনে হচ্ছিল, একটা বাধভাঙ্গা উল্লাস হয়তো দেখা যাবে। কিন্তু কই, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে কোন উত্তেজনাই নেই।

ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের উল্লাস- ছবি ইন্টারনেট

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন, মুশফিক একটু আকাশের দিকে তাকালেন, এই এতোটুকুই। তারপর ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন, আর দশটা সাধারণ জয়ের পর যা হয় আর কি। বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা যেন বুঝাতে চাইলেন, ভারতকে হারিয়েছি, এ আর আহামরি কি!

অথচ অন্য যেকোন দলই হয়তো এমন জয় পেলে বাধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ত। ঘরের মাঠে সম্প্রতি অপ্রতিরোধ্য রূপ ধারণ করেছে ভারত। ভারতকে ভারতের মাটিতে হারাতে পারে, এমন বিশ্বএকাদশ বানানোর হুড়হুড়ি লেগে গেল কদিন আগে। কোন দলই যে ভারতে গিয়ে জিততে পারছে না।

তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের প্রথম জয়। আরও একটা উপলক্ষ্য ছিল, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটা ছিল ঠিক ১০০০তম ম্যাচ। একসাথে এতো কিছু জেতার পরও কাল মাঠে উল্লাস করল না বাংলাদেশ।

হয়তো নানান প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পন্থা ছিল এটা! সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশকে চরম ব্যঙ্গ করে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টস। ওই ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছিলেন ভারতের সাবেক তারকা ওপেনার বিরেন্দ্রন শেবাগ। বাংলাদেশ কাল টসে জিতলে ম্যাচ চলাকালেও আরেকটি ব্যঙ্গাত্মক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।

প্রথম বিজ্ঞাপনের মূল থিম ছিল, বিরাট কোহলিকে আউট করে উল্লাসে অস্থির বাংলাদেশ। তখন বিরেন্দ্রন শেবাগ ব্যঙ্গাত্বক সুরে বলছেন, ‘কোহলিকে আউট করেই এতো উল্লাস! জানি না, ম্যাচ জিতলে কী কী করবে!’ দ্বিতীয় বিজ্ঞাপনের থিম ছিল, টস জেতার পর উল্লাসে মত্ত্ব বাংলাদেশ। শেবাগ তখন বলছেন, ‘টস জিতেই এতো উল্লাস! জানি না, ম্যাচ জিতলে কী কী করবে।’

মুশফিক-মাহমুদুল্লাহরা কাল ভারতকে তাদের মাঠে বিধ্বস্ত করেও উল্লাস না করে নীরবে সেই জবাবটাই হয়তো দিতে চাইলেন। কদিন আগে গৌতম গম্ভিরও খোঁচা মেরেছিলেন।

ভারতীয় ওপেনার বলেন, ‘ভেবেছিলাম সিরিজটা একটু জমবে, কিন্তু সাকিব নিষিদ্ধ হওয়াতে সেই সম্ভাবনা শেষ। বাংলাদেশকে এক উইকেট কম নিয়ে খেলতে হবে। আর অপর দিকে মনে করতে হবে, ব্যাটিংয়ে নামার আগেই ভারত ৪০ রান পেয়ে গেছে!’

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ তিন বলে ১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হার্দিক পান্ডিয়ার পর পর দুই বলে আউট হয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম এই সমীকরণ মেলাতে পারেননি। পরে হার্দিক বলেছিলেন, মুশফিকের আবার বলে ছক্কা মারার ক্ষমতা নেই, সেটা আমি জানতাম!

কাল সেই মুশফিকই কচুকাটা করলেন ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে। ৪৩ বলে অপরাজিত ৬০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে অনেকটা একাই হারিয়ে দিলেন ভারতকে। হার্দিকদের জবাব দিতেই হয়তো কাল বিশাল জয়ের পর উল্লাস করল না বাংলাদেশ!