আফিফের ব্যাটে রোমাঞ্চকর জয়

জয়ের জন্য ১৮ ওভারে ১৪৫ রানের সমীকরণ। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী লক্ষ্যটা কঠিন। সেটা রীতিমতো হিমালয়তুল্য হয়ে উঠল টপ অর্ডারের ভয়াবহ ব্যাটিং ধসে। ২৯ রান তুলতেই চার উইকেট শেষ বাংলাদেশের। ৬০ রানের মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। শুরুর এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠল দুই তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আফিফ হোসেনের ব্যাটে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুজনই লড়লেন দাঁতে দাঁত চেপে। পাহাড়সম চাপের মুখ থেকে ম্যাচ বের করে আনেন এই দুই তরুণ। মোসাদ্দেক ও আফিফের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশ পেল রোমাঞ্চকর এক জয়। জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ টাইগাররা জয় করেছে দুই বল ও তিন উইকেট হাতে রেখেই (১৪৮/৭)। দারুণ এই জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে শুভ সূচনা হলো স্বাগতিকদের। আগামীকাল দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে ও আফিগানিস্তান।

দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিয়ে সাজঘরে ফিরে এসেছেন আফিফ। ২৬ বলে ৫২ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলায় অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। ইনিংসে আটটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন আফিফ। তবে আফিফ ফিরে গেলেও ম্যাচটা শেষ করে এসেছেন ২৪ বলে ৩০ রানে অজেয় থাকা মোসাদ্দেক। ইনিংসে দুটি ছক্কা মেরেছেন তিনি।

মোসাদ্দেক-আফিফ আসার আগে দলের পক্ষে ১৪ বলে সর্বোচ্চ ১৯ রান করেছেন ওপেনার লিটন দাস। পরের তিন ব্যাটসম্যান- সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর মিলে করেছেন পাঁচ রান। শেষের জন তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এমন বিপর্যয়ের ইনিংসে শুরুর ২.৫ ওভারে ২৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। লিটন সাজঘরে ফিরতেই শুরু ছন্দপতন।

বিপর্যয় থেকে দেলকে টেনে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান। কিন্তু দুজনই আউট হয়ে গেলেন উইকেটে থিতু হয়ে। সাব্বির ১৫ বলে ১৫ এবং রিয়াদ ১৬ বলে ১৪ রানে সাজঘরে ফিরেছে। তাদের প্রস্থানেই আস্কিং রেটের চাপটা চূড়ায় উঠে যায়। বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন তখন ভর করল ছোট্ট দুই কাঁধে! প্রায় নিশ্চিত হার থেকে মোসাদ্দেক ও আফিফ যেভাবে দলকে বাঁচালেন সেটার বিশেষণ এক কথায় হতে পারে অসাধারণ।

এর আগে টস হেরে আগে বল হাতেও দুর্দান্ত ‍সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। ১০ ওভারের মধ্যে ৬৩ রানে জিম্বাবুয়ের পাঁচ উইকেট ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ১২ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ৭০। কিন্তু বোলাররাও ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি। এরপরের গল্পটা শুধুই হতাশার। ঝড় ওঠে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান রায়ান বার্ল ও টিনোটেন্ডা মুতুম্বজির ব্যাটে।

দুজনের ঝড়ে বিঘ্ন ঘটালো আচমকা বিদ্যুৎ বিভ্রাট। লোড শেডিংয়ের কারণে অন্ধকার নেমে আসে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এ কারণে খেলা বন্ধ থাকল প্রায় আট মিনিট। ম্যাচ শুরুর পর ঝড়টা আর অব্যাহত রাখতে পারেননি সফরকারী দুই ব্যাটসম্যান। শেষ দুই ওভারে গতি কমে আসে জিম্বাবুয়ের রানের চাকার।

তবু শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে যা রান করেছিল তা নেহাৎ কম নয়। বৃষ্টির কারণে দেড় ঘণ্টা পর শুরু হওয়া ম্যাচের নির্ধারিত ১৮ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৪৪ রানের কঠিন সংগ্রহ তোলে অতিথিরা। সাকিব আল হাসান নিজের চতুর্থ ও জিম্বাবুয়ে ইনিংসের ১৬তম ওভারে অমন মার না খেলে লক্ষ্যটা হয়তো একেবারেই নাগালে থাকত।

দুঃস্বপ্নের ওই ওভারে সাকিব দিলেন ৩০ রান। চার ওভারে ৪৯। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এরচেয়ে বাজে বোলিং আর কখোনই করেননি। জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যান বার্লের বিরুদ্ধে তাকে হজম করতে হলো তিনটি করে চার-ছক্কা! উইকেটও পাননি তিনি। তবে বাংলাদেশের অন্য চার বোলারই (মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন) একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

জিম্বাবুয়েকে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দিয়েছেন বার্ল। আজ ৩২ বলে ৫৭ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেলে দলকে তিনি শুধু বিপর্যয় থেকেই টেনে তোলেননি, দলকে এনে দিয়েছেন লড়াই করার রসদ। বার্ল ইনিংসে মেরেছেন পাঁচটি চার ও ছক্কা তিনটি। একটি করে চার-ছক্কায় ২৬ বলে ২৭ রান এসেছে মুতুম্বজির ব্যাট থেকে। তবে দ্বিতীয় দলীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ও ওপেনার মাসাকাদজা। আউট হয়োর আগে ২৬ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় ৩৪ রান করেছেন তিনি।