লজ্জিত নন, তবে হতাশ সাকিব

টেস্ট ক্রিকেটের নবজাতক আফগানিস্তান। মাত্র দুই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন রশিদ-নবিরা। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টে তারা যেভাবে খেলেছেন তাতে বোঝার উপায় ছিল না এই ফরমেটে একেবারেই নতুন আফগানিস্তান। বরং বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন জাগে। ১৯ বছর ও ১১৪ টেস্ট কী টাইগারদের জন্য শুধুই একটা সংখ্যা?

দুদিন ধরে চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল আফগানিস্তান। স্বপ্ন পূরণে বৃষ্টি যে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই দুশ্চিন্তা আগে থেকেই ছিল। সাতসকালে সেই প্রকৃতিই আফগানদের ইতিহাস জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম সেশন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর বল যখন মাঠে গড়ালো তখন খেলা হলো মাত্র ২.১ ওভার।

বাংলাদেশকে তখন চোখ রাঙাচ্ছিল বিব্রতকর এক হার। এই লজ্জা এড়াতে আরেক দফা বৃষ্টির সহায়তা পেয়েছিল তারা। টেস্ট বাঁচাতে টাইগারদের পক্ষে আসল কাজটাই করে দিয়েছিল বৃষ্টি। কিন্তু প্রকৃতি যে অতটা বেরসিক নয়! আফগানদের ইতিহাস গড়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে দল হিসেবে বাংলাদেশ প্রায় দুই দশকে কী শিখেছে সেটাও হয়তো দেখেছিল।

বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে আফগানরা নয়, বরং বাংলাদেশই এই ফরমেটের ‘নবজাতক’। আজ শেষ বিকেলে ১৮.৩ ওভার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ ছিল সাকিবদের। কুড়ি বল আগে থাকতেই সেই চ্যালেঞ্জে হেরে গেছেন তারা; দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছেন ১৭৩ রানে। প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৩২ রান কম।

২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে এই হার দলের জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এই হারে লজ্জিত নন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসন। তবে হতাশ তিনি। আজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘(এই হার) মেনে নেওয়া অবশ্যই কষ্টকর। লজ্জার কিছু নেই। তবে এটা খুবই হতাশাজনক ব্যাপার। যেহেতু চার উইকেট ছিল, এক ঘন্টা দশ মিনিট খেলতে হতো।’

শেষ বিকেলের চ্যালেঞ্জটা আরো কঠিন করে দিয়ে গেছেন সাকিব। শেষ বিকেলের ‘প্রথম’ বলেই রশিদের বলে উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। বাকিরাও আর পারেননি। দলপতি হিসেবে নিজের দায়ও দেখছেন সাকিব, ‘আমি আমারটা বলতে পারি- বাকিদেরটা বলা কঠিন। যেহেতু আমি প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছি, ফলে দলের জন্য কাজটা আরও কঠিন হয়ে গেছে। দায়টা আমার উপরই পড়ে। আমি নিজেও নার্ভাস ছিলাম। তাই চাপমুক্ত হওয়ার জন্য শট খেলেছিলাম।’

এভাবে আউট হয়ে সাকিব যে দলের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সেটা মানছেন তিনি, ‘এভাবে কাট শটটা খেলা উচিত হয়নি আমার। ওটাতেই দলে অনেক বেশি চাপে পড়ে গেছে। আমি যেহেতু অপরাজিত ছিলাম, আমারই উচিত ছিল আসল ভূমিকা রাখা। এটা যদি করতে পারতাম, তাহলে সাজঘর অনেক বেশি স্বস্তিতে থাকতো। হয়তো আমরা ম্যাচটা ড্র করতে পারতাম। সর্বোপরি আমরা খুব বাজে খেলেছি, আফগানিস্তান খুব ভালো খেলেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই প্রসঙ্গটা উঠল। ৭০ মিনিট টিকে থাকার সামর্থ্যও কি দলের নেই? উত্তরে সাকিব বলেছেন, ‘ফল দেখে তো বলতেই হবে, অবশ্যই নেই। কারন সেই সামর্থ্য থাকলে আরও ভালোকিছু দেখাতে পারতাম। তাইজুলেরটা আউট ছিল না। মিরাজ আগে ভুল রিভিউ নিয়ে নষ্ট করেছে। এটা যে একদিন ক্রিকেট খেলেছে সেও বুঝবে। স্বাভাবিক ভাবে ও (মিরাজ) যদি রিভিওটা না নিতো, সেটা তাইজুল নিতে পারতো।’

সাকিব আরো বলেছেন, ‘মিরাজ এটা না করলে হয়তো আমাদের জন্য একটু ভালো হতো। কারন তাইজুল আগের ইনিংসে ভালো ব্যাটিংই করেছিল। এই ধরনের ভুল-ভ্রান্তিগুলো হয়। সৌম্য যখন সিঙ্গেল নিয়ে মাথায় হাত দিচ্ছে, বুঝতে পারছে না আসলে ওর কাজটা কী, কী করা উচিত। এই জিনিসগুলোতে অনেককিছু শেখার আছে, অনেক কিছু বোঝার আছে। কতোদিন যে লাগবে শিখতে, সেটা একটা বড় ব্যাপার।’

বাংলাদেশ আসলে শেখে না কিছুই। অথচ এই টেস্ট ও বিপর্যয় থেকে অনেককিছুই শেখার আছে। এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে টাইগাররা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। কার্যত এই টেস্ট ভুলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে চোখ দিচ্ছেন সাকিব।

সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জেতা জরুরি। তাহলে হয়তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, সিরিজ শুরু হওয়ার আগে খুব বেশি সময় নেই। এই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই হয়তো টি-টোয়েন্টি খেলবে। সবার মানসিকতা বদলে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পারফরম্যান্স করতে হবে। কাজটা আমাদের জন্য কঠিন।’