বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারে বৃষ্টি

সময়ের হিসেবে ১৯ বছর। ম্যাচের হিসেবে ১১৫টি টেস্ট। লাল বলের ক্রিকেটে এতো দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটা সেশনও আধিপত্য দেখাতে পারল না বাংলাদেশ। টাইগাররা প্রমাণ করতে চলেছে এই ফরমেটে আফগানরা নয়, নিজেরাই শিশু। বছর এবং ম্যাচের হিসেবটা যেন শুধুই কয়েকটা সংখ্যা মাত্র।

ধৈর্য্য, দক্ষতা, সামর্থ্য কিংবা পারফরম্যান্স- চলমান চট্টগ্রাম টেস্টে আফগানদের চেয়ে সবকিছুতেই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। হয়তো উইকেট প্রত্যাশা মাফিক হয়নি, তাই বলে এমন বিপর্যয় দেখতে হবে হোম কন্ডিশনে? প্রশ্ন তুলছে টাইগার ক্রিকেটারদের মানসিকতাও নিয়েও। সেখানে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে আফগানরা বুঝিয়ে দিল টেস্টে অভিজ্ঞতাই শেষ কথা নয়।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে আফগানিস্তান ওপেনার ইব্রাহিম জাদ্রান জানিয়েছিলেন নিজেদের শঙ্কার কথা। জয়ের পথে ৭০ শতাংশ এগিয়ে গেলেও তাদের স্বপ্নে জল ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু কার্যত বাংলাদেশের বন্ধু হয়েই এসেছে। চতুর্থ দিন কয়েক দফা ম্যাচে বিঘ্ন ঘটিয়েছে বৃষ্টি। প্রকৃতির কান্নায় আজকের খেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা দশ মিনিট পর। বৃষ্টির কারণে দিনের খেলা শেষও হয়েছে নির্ধারিত সময়ে পৌনে এক ঘণ্টা আগে।

বৃষ্টি শেষে বল গড়িয়েছে মাঠে। শেষ দুই উইকেটে আজ ২৩ রান যোগ করেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের কাঁধে তখন ৩৯৭ রানের বোঝা। ইতিহাস বলছে টাইগারদের পরাজয় অবধারিত। কেননা ইতোমধ্যে ফিরতি ইনিংসে ছয় উইকেট খুইয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। জয় থেকে এখনো ২৬২ রান দূরে। তাই অলৌকিক কোনোকিছু না ঘটলে কিংবা বৃষ্টি না এলে আফগানদের স্বপ্নের জয় নিশ্চিত।

এমনিতেই দিনের খেলা শুরু হয়েছে দেরিতে। শুরুর পর ২২ ওভার খেলা হয়নি দুই দফা বৃষ্টির কারণে। সবমিলিয়ে আজ তিন ঘণ্টা ৪০ মিনিট খেলা হয়নি। এই সময়ে খেলা হলে চট্টগ্রাম টেস্ট এতক্ষণে ফল জানিয়ে দিতো এটা এক প্রকার নিশ্চিত। আজ না হোক, কাল বৃষ্টি না হলে ফল আসবেই। ছয় উইকেটে ১৩৬ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস কতদূর টানতে পারে সেটাই দেখার।

টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে কখনো ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ। সেখানে আজ সকালে হিমালয়তুল্য ৩৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছেন সাকিবরা। পাহাড়সম রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে শুরুটা একেবারে খারাপ করেনি টাইগাররা। উদ্বোধনী জুটিতে বিনা উইকেটে ৩০ রান তুলেছিল স্বাগতিকরা। এরপরই শুরু ছন্দের পতন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা।

৮২ রানে দলের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুমিনুল হক সাজঘরে ফেরার পর থেকেই পরাজয় চোখ রাঙাতে থাকে বাংলাদেশকে। ওপেনার লিটন দাস ৩০ বল খেলে পারেননি দুই অংক ছুঁতে। পাঁচে নেমে মুমিনুল আট বলে তিন রানে আউট হয়েছেন। ১৭ বলে ১২ রান করে বিদায় নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে মেজাজে খেলে সাজঘরে ফিরেছেন। ফেরার আগে চারটি চারে ২৫ বলে ২৩ রান করেছেন তিনি।

শুরুর এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে অধিনায়ক সাকিবকে নিয়ে বেশকিছুক্ষণ লড়েছিলেন তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয়জন রণেভঙ্গ দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ৪১ রানে সাজঘরে ফিরে গেছেন সাদমান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট হয়েছেন সাত রানে। দিন শেষে ৩৯ রানে টিকে থাকলেন সাকিব। কাল পঞ্চম ও শেষ দিনে তার সঙ্গী সৌম্য সরকার এখনো রানের খাতা খুলতে পারেননি।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেটের তিনটি নিয়েছেন রশিদ খান। দুটি শিকার জহির খানের। এক উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নবি।