লেজ দিয়ে লড়ছে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে হতাশ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আজ দ্বিতীয় দিন শেষেও ছবিটা বদলাল না। বরং আরো চাপে থাকল টাইগাররা। আফগানিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ৩৪২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর স্বাগতিকরা দিনের খেলা শেষ করেছে আট উইকেটে ১৯৪ রানে। সফরকারীদের চেয়ে এখনো ১৪৮ রান পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে টাইগারদের হাতে আপাতত আছে দুই উইকেট। স্বাগতিকরা তো ফলোঅনেরও শঙ্কায় পড়েছিল। মুমিনুল হকের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি ও শেষ বিকেলে মেহেদি হাসান মিরাজ-মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সৌজন্যে বড় ধরনের লজ্জা থেকে রেহাই পেয়েছে বাংলাদেশ।

ফলোঅন পেরোনোর পর মিরাজ আউট হয়ে গেছেন ব্যক্তিগত ১১ রানে। ১৪৬ রানে বাংলাদেশের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন মিরাজ। এরপর ‘নাইট ওয়াচম্যান’ খ্যাত তাইজুল ইসলামকে নিয়ে লেজের লড়াই চালাতে থাকেন মোসাদ্দেক। দলকে বাঁচিয়েছেন অলআউটের শঙ্কা থেকেও।

মোসাদ্দেক ৪৪ ও তাইজুল ১৪ রানে অজেয় থেকে আজকের মতো বাইশ গজ ছেড়ে এসেছেন। শনিবার তৃতীয় দিন এই দুজনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। দল তাকিয়ে ছিল মুমিনুলের ব্যাটের দিকেও। কিন্তু এক প্রান্তে যেভাবে উইকেট বৃষ্টি হলো তাতে দেড়শ'র মধ্যে অল আউট হওয়ার দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা।

অবস্থা বেগতিক বুঝে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন মুমিনুল। পরিণতিটা ভালো হয়নি। ৫২ রানে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে এসেছেন তিনি। মিডল ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই আফগানিস্তান বোলারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ৮৮ রানে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেট হারানোর যে ভয়টা জেগেছিল সেটা মুমিনুলের ব্যাটেই দূর হয়েছে।

প্রথম দিনের ন্যায় আজ সকালেও ভালো সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে সাড়ে তিনশ'র আগে থামিয়ে দিয়েছেন সাকিবরা। কিন্তু দ্রুত আফগানদের গুটিয়ে দিলেও আনন্দটা বাতাসে মিলিয়ে গেছে ব্যাটিং শুরুর বিপর্যয়ে। রশিদ খানের তোপে ইনিংসের শুরু থেকেই কাঁপতে থাকে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে স্বাগতিকরা।

তিন উইকেটে ৮৮ রান থাকা বাংলাদেশ জোড়া ধাক্কা খেয়েছে এরপরই। এক ওভারেই ফিরে গেলেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয়জনের বিদায়টা হয়েছে অপ্রত্যাশিত। প্রশ্ন রেখেছে তার আউটের ধরনও। রশিদের বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছেন মুশফিক। বল তার পায়ের অগ্রভাগে পড়ে যায় শর্ট লেগে ফিল্ডারের হাতে। ক্যাচের আবেদন জানায় সফরকারীরা। তৃতীয় আম্পায়ার ডাকেন ফিল্ডার আম্পায়ার। যদিও আউটে তার সফট সিগন্যাল ছিল। সেটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু রিভিউতেও শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেল না মুশফিক আউট কি না। মাটিতে নাকি মুশফিকের বুটে কোন অংশে লেগে বল শর্ট লেগে যায়, উইকেটে পর্যাপ্ত ধুলোবালির কারণে ক্যামেরাতে একেক দিক থেকে একেক রকম মনে হচ্ছিল। এমন দ্বিধার পর তৃতীয় আম্পায়ার মুশফিককে আউট দেন। তার আগে একই ওভারে রশিদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন সাকিব।

এক প্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দল ফলোঅন এড়িয়েছে ঠিকই; কিন্তু অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাটা ঠিকই আছে। ওয়ানডে মেজাজে খেলতে যাওয়া মুমিনুল ব্যক্তিগত ৫২ রানে আউট হয়ে গেছেন। তার আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রশিদের বলে বোল্ড হয়েছেন ব্যক্তিগত সাত রানে।

মধ্যাহ্ন ভোজের পর চা বিরতির আগে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে পঞ্চম উইকেট। স্কোর বোর্ডে জমা পড়েছে মাত্র ৮৮ রান। আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের তিনজনই সাজঘরে ফিরেছেন উইকেটে থিতু হওয়ার পর। সৌম্য সরকার ১৭, লিটন দাস ৩৩ এবং অধিনায়ক সাকিব ফিরেছেন ১১ রানে। মুশফিক ও সাদমান দুজনের একজনও রানের খাতা খুলতে পারেননি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দশমবার শূন্য রানে আউট হয়েছেন মুশি।

স্বাগতিকদের এমন বিপদে ফেলেছেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। টাইগারদের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। বাংলাদেশের পতন হওয়া আট উইকেটের চারটিই নিয়েছেন এই স্পিনার। দুটি শিকার মোহাম্মদ নবির। একটি উইকেট নিয়েছেন আহমাদজাই। শুধু বল হাতেই নয়, এদিন ব্যাট হাতেও দারুণ করেছেন রশিদ। পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৫১ রানে আউট হয়েছেন তিনি। তবে আজগর আফগানকে হতাশ হতে হয়েছে। ৯২ রানে তাকে আউট করেছেন তাইজুল।