প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিল আফগানিস্তান

সবশেষ টেস্টের পুনরাবৃত্তি করেছে বাংলাদেশ দল। কন্ডিশন বিবেচনায় পেসবিহীন একাদশ টাইগারদের কাছে চমকের কিছু নয়। কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেটের নবজাতক আফগানিস্তানের বিপক্ষে কেবল স্পিনারদের নিয়ে বাংলাদেশের মাঠে নেমে পড়া কতটা যৌক্তিক। টিম ম্যানেজমেন্ট যে আশায় দল নামিয়েছে সেটা বুমেরাং হয়ে যাবে না তো?

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে কয়েকবারই দেখা গেল মাঠে পানি টানছেন বাংলাদেশ দলের পেসাররা। যাদের তৃষ্ণা নিবারণে নিবেদিত প্রাণ পেসাররা, সেই স্পিনারদের জন্যই হতাশার একটা দিন পার হলো। সাকিব-তাইজুলদের স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে ডরভয়হীন ক্রিকেট খেলে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনেই বাজিমাত করেছে আফগানরা। দিন শেষে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটে ২৭১ রান করেছে রশিদ খানের দল।

আফগানিস্তানের বড় সংগ্রহের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন রহমত শাহ ও আসগর আফগান। ৭৭ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এই দুজনই পথ দেখিয়েছেন দলকে। চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ১২০ রান। এই জুটিতে আফগানরা শুধু শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে তা নয়, উল্টো বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে চাপের মুখে। যা একটা অশনি সংকেত হয়ে সামনে এলো।

চট্টগ্রামের এই উইকেটে প্রথম ইনিংসে তিন শর ওপরে রান মানেই প্রতিপক্ষের জন্য চাপ। অলৌকিক কিছু না ঘটলে আফগানিস্তান প্রথম ইনিংসে দলীয় সংগ্রহ তিন শ ছাড়াবে। সাড়ে তিন শ বা চার শ করলেও সেটা বিস্ময়কর কিছু হবে না। সেই হিসেবে স্বস্তিতে নেই সাকিব আল হাসানের দল। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে রশিদকে গুটিয়ে দিতে না পারলে বড় বিপদে পড়তে পারেন তারা।

যে আশায় স্পিনারদের নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে বাংলাদেশ সেটা বুমেরাং হয়ে গেছে প্রথম দিনে। উইকেট থেকে প্রত্যাশিত টার্ন পাননি বোলাররা। উল্টো তাদের ওপর ক্রমাগত ছড়ি ঘুরিয়ে গেছেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। প্রথম সেশনটুকু বাদ দিলে পুরো দিনটাই আফগানিস্তানের। তৃতীয় তথা শেষ সেশনের শুরুর দিকে জোড়া আঘাত করে বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বটে, তবে নির্ভার হতে পারেনি।

বাংলাদেশের দিনের শুরুটাই হয়েছে দুর্ভাগ্য দিয়ে। মুদ্রা নিক্ষেপের প্রতিকূলে থেকে বল হাতে নিতে হয়েছে। সেই হতাশা আনন্দে পরিণত হয়েছে। মুখে চওড়া হাসি নিয়েই মধ্যাহ্ন ভোজে গেছেন সাকিবরা। দিনের সবচেয়ে বড় বিরতি শেষে বল মাঠে গড়াতেই পাল্টায় ম্যাচের রঙ। দলকে ম্যাচে ফেরানোর পথে আফগানিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন রহমত। নাঈম হাসানকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্বপ্নের অংক ছুঁয়েছেন তিনি; তার ঠিক পরের বলেই অবশ্য সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন।

সাজঘরে ফেরার আগে তার নামের পাশে ১৮৭ বলে ১০২ রান। ১০টি চার ও দুটি ছক্কায় রাজসিক ইনিংসটি সাজিয়ে গেছেন রহমত। তার সমান ছক্কা মেরেছেন আসগরও। চার মোটে তিনটি। ৪১ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া আসগর এখন সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছেন। ৮৮ রানে অজেয় থেকে বীরদর্পে উইকেট ছেড়েছেন তিনি। তার সঙ্গী আফসার জাজাই এগোচ্ছেন হাফসেঞ্চুরির দিকে। ব্যক্তিগত অর্ধশতকের ১৫ রান দূরে থেকে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নামবেন আসগর।

আজ সাতসকালে ১৯ রানে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করে তাইজুল তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়েছেন এক শ উইকেটের মাইফলক। ইহসানউল্লাহর স্টাম্প ভেঙে দেশের পক্ষে দ্রুততম ‘সেঞ্চুরিয়ান’ বনে যাওয়া তাইজুল ঘণ্টা খানেকের ব্যবধানে সাজঘরে পাঠান আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদ্রানকে। ইহসান ৯ এবং ২১ রানে ফিরে গেছেন ইব্রাহিম। জোড়া ধাক্কা সামলে না উঠতেই তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে হাসমতউল্লাহ শাহীদিকে হারানোর ধাক্কা। উইকেট থিতু হওয়ার পর ১৪ রানে ফিরেছেন শাহীদি।