পুলিশ: রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নি জড়িত

বরগুনায় বহুল আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার হয়েছেন মামলার এক নম্বর আসামী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নি সরাসরি জড়িত। মামলার তদন্তের স্বার্থেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রিফাত হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী মিন্নির অবস্থান নিয়ে শুরু থেকেই কানাঘুষা চলছিল। মঙ্গলবার সকালে বরগুনার বাসা থেকে মিন্নি ও তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় রাতে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিন্নির সাথে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকেও পুলিশ লাইনে আনা হয়। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এই ঘটনার পর জেলা পুলিশ সুপার (এসবি) একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠান। বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া আরো ৭ জনকে সন্দেভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।'

মিন্নি জড়িত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এ মামলার ১ নং সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০)কে ডেকে এনে মামলার ঘটনা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও সুদীর্ঘ সময় যাবৎ প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ পূর্বক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং সুষ্ঠু তদন্তের নিমিত্তে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রাত ৯টায় গ্রেপ্তার করা হয়।'

এদিকে গ্রেপ্তারের পর বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী মিন্নি। তার বক্তব্য রেকর্ড ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা পুলিশ লাইনে আনা হয়। রাতে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে ও অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।'

তিনি বলেন, 'আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কারণ ও আক্রোশের জন্য এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি সরাসরি সম্পৃক্ত।'

গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করুন। তাকে গ্রেপ্তার করলে আমার ছেলে হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে যাবে। আমার ছেলে হত্যার পেছনে পুত্রবধূ মিন্নির হাত রয়েছে। আসলে আমার পুত্রবধূই ভিলেন। তার সহযোগিতায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।' তবে পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে শ্বশুড়ের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন মিন্নি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।