১২ বছর পর কোপার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টে কখনো শিরোপা হাতছাড়া করেনি ব্রাজিল। ইতিহাসের ধারা এবারো অব্যাহত রাখলো সেলেকাওরা। রোববার রাতে মারাকানার ফাইনালে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতে নিল তিতের দল। স্বাগতিক দল হিসেবে পাঁচবারের প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হলো ব্রাজিল। একই সঙ্গে দীর্ঘ এক যুগের অপেক্ষা ঘোচাল ল্যাটিন আমেরিকার জায়ান্ট দলটি।

ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের নায়ক গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কাল দলের প্রথম দুই গোলেই জড়িয়ে থাকল তার নাম। প্রথমে সতীর্থ সৌসা সোয়ারেসকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। পরে বিরতির আগ মুহূর্তে জেসুস নাম লেখালেন স্কোরারশিটে। তবু মারাকানার মাঠ থেকে অস্রু নিয়ে ঝরিয়েছেন তিনি। কারণটা অন্যায্য লাল কার্ড। ৭০ মিনিটে তাকে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি।

২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ভয় ঢুকে গিয়েছিল ১০ জনের ব্রাজিলে। কখন কোন বিপদ হয় শঙ্কা ছিল তা নিয়েই। শেষ পর্যন্ত বিপদ হয়নি ব্রাজিলের। উল্টো ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সেলেকাওদের পক্ষে তৃতীয় গোল করেন রিচার্লিসন। মারাকানা স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে যায় হলুদ উৎসব। ব্রাজিলের এই উৎসব ১২ বছর পর কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার। অথচ ব্রাজিল সুদিন ফিরিয়েছে প্রাণভোমরা নেইমারকে ছাড়া শিরোপা জিতে।

৪৬তম আসরে এসে প্রতিযোগিতায় নবমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো পেলে, গারিঞ্চা, জিকো, সক্রেটিস, রোনালদোদের দেশ। গত দুই দশকের মধ্যে এনিয়ে চতুর্থবার কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতল ব্রাজিল। যদিও ট্রফি জয়ের দিক থেকে এখনো তিন নম্বরে আছে সেলেকাওরা। সর্বোচ্চ ১৫ বার উরুগুয়ে ও ১৪ বার দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছে আর্জেন্টিনা।

ব্রাজিল সবশেষ এই টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলেছিল ২০০৭ সালে। এরপর থেকেই সেলেকাওদের ফুটবলে শুরু হয় ভাটির টান। এই এক যুগে অনেক ঝড়-ঝাপ্টাই বয়ে গেছে তাদের ওপর দিয়ে। কোপার তিন আসরে শিরোপা জেতা হয়নি। তিনটি বিশ্বকাপ খেললেও স্বপ্নপূরণ করতে পারেনি হলুদ শিবির। গত বছর শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পিষ্ট হয়ে একপ্রকার মৃত্যু হয়েছিল তাদের ফুটবলের।

সেই দেশটার এবার পুনর্জন্ম হলো। ব্রাজিলের এই বদলে যাওয়ার রূপকার তিতে। রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য বানিয়েছিলেন শক্তিশালী দল। ফুটবল মহাযজ্ঞেও ফেভারিট ছিল তিতের ব্রাজিল। যদিও বেলজিয়ামের কাছে হেরে অঘটনের শিকার হয়ে স্বপ্নের সমাধী হয় সেলেকাওদের। তবু প্রধান কোচের ওপর আস্থা রেখেছিলেন দেশটির ফুটবলকর্তারা। অবশেষে সেটার প্রতিদান দিলেন ব্রাজিলিয়ান কোচ।

ঘরের মাঠের ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য তকমা ধরে রাখার আভাস ব্রাজিল দিয়েছে ম্যাচের শুরুতেই। ১৫ মিনিটে ডি-বক্সে জেসুসের কাছ থেকে ক্রস পেয়েই পেরুর জালে বল জড়িয়ে দেন এভারটন। চলতি আসরে এটা তার তৃতীয় দল। ম্যাচের শেষ দিকে ভিএআর থেকে স্বাগতিকরা যে পেনাল্টি পেয়েছিল সেখানেও অবদান ছিল উঠতি তারকা এভারটনের।

শুরুর গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যেতে পারেনি তিতের দল। ৪৪ মিনিটে স্পট কিক থেকে পেরুভিয়ানদের সমতায় ফেরান অভিজ্ঞ ফরওয়ার্ড পাওলো গুরেরো। ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভার ডি-বক্সে হ্যান্ডবলের মাশুল দিতে পারেননি গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। টুর্নামেন্টে প্রথমবার হজম করলেন গোল। লিভারপুলের শেষ প্রহরীকে ফাঁকি দিয়ে জালে বল পাঠান গুরেরো।

পেরুর সমতায় ফেরার আনন্দ কিছুক্ষণের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। বিরতির আগ মুহূর্তে ব্রাজিল ফের লিড নেয়। এবার জেসুস নিজেই গোলদাতা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আর্থারের পাস থেকে মাটি কামড়ানো শটে গোল করেন সিটি স্ট্রাইকার। আসরজুড়ে দ্যুতি ছড়ানো জেসুসের শেষটা ভালো হলো না। ৭০ মিনিটে হেড নেওয়ার সময় শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে ফেলে দেন তিনি।

পরিণামটা যে এতটা বাজে হবে সেটা ভাবতেই পারেননি জেসুস। তাকে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ কার্ড) দেখান রেফারি। অবিশ্বাসে শুরুতে হেসেই দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ তুর্কি। পরে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। সতীর্থরা যখন ১০ জনের দল নিয়ে লড়ছে তখন আবার টানেলে বসে অঝরে কাঁদতে দেখা গেছে জেসুসকে।

সিটির তারকাকে হারানোর শোকটাকে শক্তিতে রূপান্তর করেন সতীর্থরা। বাকি সময়ে আরো দুর্দান্ত ছিলেন তারা। একজনের কম দল নিয়েও করেছেন ম্যাচের তৃতীয় গোল। শেষ অবধি ঘরের মাঠে উচ্ছ্বাসে মাতেন তিতের শিষ্যরা। সবশেষ অর্ধযুগ আগে মারাকানার এই মাঠেই কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে কোনো শিরোপা উৎসব করেছিল ব্রাজিল।

রোল অব অনার (শেষ ছয় আসর)

২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল রানার্সআপ আর্জেন্টিনা
২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল রানার্সআপ আর্জেন্টিনা
২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে রানার্সআপ প্যারাগুয়ে

২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন চিলি রানার্সআপ আর্জেন্টিনা
২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন চিলি রানার্সআপ আর্জেন্টিনা
২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল রানার্সআপ পেরু