বিকেলে ভারত-বধের মিশন বাংলাদেশের

সুতোয় ঝুলে আছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ভাগ্য। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে রবিন লিগ রাউন্ডের দুই ম্যাচের দুটোতেই জিততে হবে টাইগারদের। যার একটি ভারতের বিরুদ্ধে। শুধু জিতলেই হবে না, মাশরাফিদের অমঙ্গল কামনা করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের জন্য। আপাতত নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার মিশনে আজ ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।

সাত ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাত নম্বরে নেমে গেছে টাইগাররা। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ১১ পয়েন্ট থাকা ভারত ভালোভাবেই আছে সেমিফাইনালের দৌড়ে। আজ বার্মিংহামে জিতলে আশা থাকবে মাশরাফিদের। হারলেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে মাশরাফিদের। বাংলাদেশ সময় ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল সাড়ে তিনটায়।

টাইগারদের সেমিফাইনালের রাস্তাটা কঠিন করে দিয়েছে ইংল্যান্ড। দুদিন আগে এই এজবাস্টনেই ভারতকে হারিয়েছে ইংলিশরা। ওই ম্যাচটা জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। অনেক প্রশ্ন উঠেছে ওয়ানডের শীর্ষ দুই দলের মহারণ ঘিরে। কারণ ইংলিশদের ছুড়ে দেওয়া ৩৩৭ রানের পাহাড় ডিঙানোর তাড়না দেখা যায়নি ভারতের মধ্যে। জেতা কঠিন ছিল, কিন্তু ধোনি-কেদাররা তার কোনো চেষ্টাই করেননি।

ভারতের রহস্যজনকভাবে হেরে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে উপমহাদেশের আরো তিনটি দলের। শ্রীলঙ্কার তো বিশ্বকাপই শেষ হয়ে গেছে। চাপ বেড়েছে বাংলাদেশের ওপর। ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তানেরও। দুটি দলেরই সেমিফাইনালে যাওয়ার এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড হারালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটা হয়ে যাবে নিয়মরক্ষার।

বাংলাদেশ অবশ্য এই মুহূর্তে অমন জটিল সমীকরণ নিয়ে ভাবছে না। আপাতত নিজেদের কাজটা করে রাখতে মরিয়া তারা। এ জন্য আজ ভারতের বিরুদ্ধে মরণকামড়ই দেবেন মাশরাফি অ্যান্ড কোং। প্রয়োজনবোধে এবং উইকেট ও কন্ডিশন বিবেচনায় জয়ী দলের কম্বিনেশনও ভাঙতে পারে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।

এ যাত্রায় ভারতের বিপক্ষে একাদশে চার পেসার নামিয়ে দিতে পারে তারা। কারণ এজবাস্টনের উইকেট স্পিনারদের জন্য দুঃস্বপ্নের এক নাম। সবশেষ ম্যাচেও সেটা টের পেয়েছেন চাহাল-মঈনরা। তবে মূল লড়াইটা হবে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। যেখানে ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাকে দ্রুত সাজঘরে ফেরানোর ছক কষছেন মাশরাফিরা।

বিশ্বকাপে নিজেদের অভিষেক আসরেই ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। পরে দুবার ধোনি-কোহলিদের সঙ্গে দেখা হলেও হেরেছে টাইগাররা। আজ টাইগারদের জন্য সমতায় ফেরার উপলক্ষ্য। ভারতের জন্য ব্যবধান বাড়িয়ে ৩-১ করার। ২-২ করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। কারণ গত কয়েক বছরে বড় মঞ্চে ভারতকে হারাতে পারেনি টাইগাররা। গত বছর তো দু দুটো ফাইনালে প্রতিবেশীদের কাছে শেষ বলে হেরেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ কতটা আগুনে হয় সেটা বলে দিচ্ছে এই তথ্যটাই। যা এক সময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দেখা যেত। ক্রিকেটের সেই ক্লাসিক লড়াই এখন কালেভদ্রে দেখা যায়। এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই স্নায়ুঠাসা উত্তেজনা। এই উত্তেজনার সঙ্গে মিশে আছে বেশকিছু বিতর্কও। গত কয়েক বছরে ভারতের বিপক্ষের ম্যাচ ভালোই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে আম্পায়ারদের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে।

মাঠে যেমন পারদ ছড়ানো উত্তেজনা, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থকদের লড়াই। দুই দলের দেখা মানে ক্রিকেট যুদ্ধের চেয়েও বেশিকিছু হয়ে উঠেছে। যদিও আইসিসির তিনটি লড়াইয়ের ফল ভারতের পক্ষেই গেছে। আজ ফলটা পাল্টাতে পারবেন তো মাশরাফিরা? মেলবোর্ন, ব্যাঙ্গালুরুর সেই হারের যন্ত্রণা ভারতকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন তো?

বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দুর্ধর্ষ ফর্ম। যুক্তরাজ্যে চলমান আসরে ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে আছেন সাকিব। ব্যাট কিংবা বল দুই দিকেই তিনি ভাঙছেন, গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। সঙ্গে আশা দেখাচ্ছে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং নির্ভরতা। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংটাও ভালো হওয়া চাই। এ জন্য প্রস্তুত আছেন মুস্তাফিজরা। ফিল্ডিংয়েও ভালো করতে হবে। ম্যাচের আগে অধিনায়ক মাশরাফি তিন বিভাগেই শতভাগ নিংড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

এমন কঠিন সময়ে টাইগারদের ভাবাচ্ছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ইনজুরি। সপ্তাহ খানেক আগে আফগানিস্তান ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। এই ম্যাচে তাকে খুব করেই চাইছে দল। তাই মাহমুদুল্লাহর জন্য সম্ভাব্য সময়টুকু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে টাইগাররা। একাদশে থাকতে পারেন মোসাদ্দেক হোসেন। সেক্ষেত্রে বেঞ্চে বসে থাকতে হবে মেহেদি হাসান মিরাজকে।

অন্যদিকে দুই রিস্ট স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব ও যুজভেন্দ্র চাহালের মধ্যে একজনকে খেলাবে ভারত। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে কোহলিদের জন্য স্বস্তির খবর ইনজুরি কাটিয়ে পেসার ভুবনেশ্বর কুমারের ফিট হয়ে ওঠাটা। ভুবির ইনজুরিটা ভারতের জন্য শাপেবর হয়েই এসেছিল। সেটার প্রমাণ শেষ তিন ম্যাচে মোহাম্মদ শামির হ্যাটট্রিকসহ ১৩ উইকেট নেওয়া।

সম্ভাব্য একাদশ:

বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন/মেহেদি হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান।

ভারত: লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), ঋষভ প্যান্ট, এমএস ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদ্বীপ যাদব/যুজভেন্দ্র চাহাল, মোহাম্মদ শামি, জাস্প্রিত বুমরাহ।