সেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়

চোকার্স অপবাদ ঘুঁচাতে যুক্তরাজ্যে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটা কার্যত হচ্ছে না। নক আউট পর্বে ওঠার আগেই খাদের চূড়ান্ত কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রোটিয়ারা। আজ বুধবার নিউজিল্যান্ডের কাছে চার উইকেটে হেরেছে ডুপ্লেসি-মিলাররা।

বিশ্বকাপের চলমান আসরে পঞ্চম ম্যাচে এটা নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ জয়। এই জয়ে ইংল্যান্ডকে (৮ পয়েন্ট) টপকে শীর্ষে উঠে এসেছে তারা। কিউইদের পয়েন্ট এখন ৯। অন্যদিকে এনিয়ে ছয় ম্যাচের চারটিতেই হেরে বিদায়ের প্রহর গুনছে প্রোটিয়ারা। অলৌকিক কিছু না ঘটলে সেমিফাইনালে যাওয়া হচ্ছে না তাদের। টুর্নামেন্টে রবিন লিগ রাউন্ডের বাকি তিনটি ম্যাচ ডু প্লেসিদের জন্য শুধুই নিয়মরক্ষার।

বার্মিংহামে ম্যাচের শেষ দিকটা অবশ্য জমিয়ে তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সাত বলে ১২ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। অ্যান্ডিলে ফেলুখায়োর নবম তথা ম্যাচের শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় আট রানে। প্রথম বলে এক রান নেন মিচেল স্যান্টনার। পরের বলে ছক্কা মেরে প্রোটিয়াদের আশার সমাধী ঘটিয়ে দেন উইলিয়ামসন। তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।

এদিন বৃষ্টির কারণে টস হয়েছে এক ঘণ্টা দেরিতে। বল মাঠে গড়িয়েছে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর। দিনের প্রথম লড়াইয়েও হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৯ ওভারে ছয় উইকেটে ২৪১ রান করে প্রোটিয়ারা। জবাব দিতে নেমে উইলিয়ামসনের অজেয় সেঞ্চুরি ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের হাফ সেঞ্চুরির সুবাদে নাটকীয় জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড (২৪৫/৬; ৪৮.৩ ওভার)।

বৃষ্টির কারণে কিছুটা গতি কমে আসে উইকেটের। আউটফিল্ডও স্লো হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাট করা কঠিন ছিল। তবু প্রোটিয়াদের টপ ও মিডল অর্ডারের প্রায় সব ব্যাটসম্যান উইকেট থিতু ছিলেন। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি করতে পারলেন দুজন। ৮৩ বলে ৫৫ রান করেছেন হাশিম আমলা। ৬৪ বলে ৬৭ রানে অজেয় ছিলেন রসি ফন ডার ডুসেন।

এ ছাড়া ডু প্লেসি ৩৫ বলে ২৩, এইডেন মার্করাম ৫৫ বলে ৩৮ এবং ডেভিড মিলার ৩৭ বলে ৩৬ রান করেছেন। প্রোটিয়াদের পতন হওয়া ছয় উইকেটের তিনটি নিয়েছেন লোকি ফার্গুসন। ট্রেন্ট বোল্ট, ডি গ্র্যান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। দলীয় ১২ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার কলিন মুনরো। ধাক্কাটা প্রায় সামলে উঠেছিলেন মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো। দুজন মিলে যোগ করেন ৬০ রান। এরপরই হঠাৎ বিপর্যয় নেমে আসে কিউই শিবিরে।

৮০ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছিল গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বিপর্যয় সামলে ওঠেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। তার সঙ্গী জিমি নিশাম। কিন্তু ব্যক্তিগত ২৩ রানে আউট হয়ে যান তিনি। এরপর ডি গ্র্যান্ডহোমকে নিয়ে জয়ের পথে এগোতে থাকেন উইলিয়ামসন।

দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দিয়ে সাজঘরে ফিরে আসেন ডি গ্র্যান্ডহোম। ফেরার আগে ৪৭ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে গেছেন তিনি। ইনিংসটি পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় সাজিয়েছেন ডি গ্র্যান্ডহোম। তবে ম্যাচের সুন্দর সমাপ্তি টেনেই উইকেট ছেড়েছেন উইলিয়ামসন। তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি।

১৩৮ বলে ১০৬ রানে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। নয়টি চার ও একটি ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরিটি সাজিয়েছেন উইলিয়ামসন। রাজসিক এই ব্যাটিং নৈপুণ্যে অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৪৯ রানে তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন ক্রিস মরিস। কিন্তু বৃথাই গেছে তার দুর্দান্ত নৈপুণ্য। গত বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল প্রোটিয়ারা।