৩০০ চিকিৎসকের গণপদত্যাগ: মমতার নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি

জুনিয়র চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই, নয়াদিল্লি ও হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে টানা চারদিন ধরে চলা এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই গণপদত্যাগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ৩০০ জন চিকিৎসক।

গত মঙ্গলবার হাসপাতালে এক রোগী মারা যাওয়ার পর নীলরতন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধর করেন রোগীর স্বজনরা। এ ঘটনায় নিরাপাত্তার দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামেন চিকিৎসকরা। টানা চারদিন ধরে কর্মবিরতি ও আন্দোলনে কার্যত ভেঙ্গে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

এখন পর্যন্ত কলকাতার পিজি হাসপাতালের ১৭৫ জন এবং কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের ৮৯ জন চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রাজ্যের আরো বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পদত্যাগ করেছেন।

এমনই যখন অবস্থা তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা মন্তব্যের কারণে তোলপাড় চলছে রাজ্যের চিকিৎসক মহলে।

সিনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিকিৎসকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তার দায় রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। তারা দায় এড়াতে পারেন না।

সিনিয়র চিকিৎসকরা আরও অভিযোগ করেন, রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং পরিসেবা ব্যবস্থায় দুরাবস্থা চলছে। এমন অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো তাদের হুমকি দিয়েছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে চিকিৎসকদের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কলকাতার নীলরতন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের আন্দোলন মঞ্চে হাজির হয়েছেন দেশটির বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ও নির্মাতা অপর্ণা সেন।

সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও নমনীয় হওয়ার অনুরোধ করে অপর্ণা বলেন, মমতা শুধু তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি গোটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা উচিত।

মমতার উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, মমতা সকলের মায়ের মতো। তাই তার অবস্থান থেকে সরে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি চিকিৎসকদের অনেক অভিমান ও ক্ষোভ রয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কলকাতার পিজি হাসপাতালে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যের চিকিৎসকরা রোগীদের নাম পদবী দেখে চিকিৎসা করান। রোগীদের মধ্যে কে হিন্দু কে মুসলিম তা দেখে চিকিৎসা করছেন তারা। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বহিরাগত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জেরেই শুক্রবার থেকে সারাদেশে আউটডোরে ধর্মঘট পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরাও। দেশটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ চিকিৎসক কলকাতার এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।