বিশ্বকাপের শুরুতেই দুর্দান্ত বাংলাদেশ

জয়ের অর্ধেক কাজটা আগেই সেরে ফেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। গড়েছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তাদের এনে দেওয়া শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি কাজ সারলেন বোলাররা। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হলো দারুণ।

আজ লন্ডনে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ৩৩০ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে লড়াইয়ের সর্বোচ্চ আভাস দিয়েও পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ধারিত ওভার শেষে আট উইকেটে ৩০৯ রান তুলতে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশ জিতেছে ২১ রানে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। চার বছর আগে নেলসনে চার উইকেটে ৩২২ রান করেছিল বাংলাদেশ। আজ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনআপ তছনছ করে নিজেদের ছাড়িয়ে গেছে টাইগাররা। রাবাদা-মরিস-এনগিডি-তাহিরদের চোখের জল নাকের জল এক করে রেকর্ড সংগ্রহ তুলেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।

টাইগারদের রানপাহাড়ে শেষ পর্যন্ত চাপা পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেল স্টেইনকে ছাড়া খেলতে নেমে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে হারলো আফ্রিকানরা। পরপর দুই হারে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটা প্রোটিয়াদের জন্য আরো কঠিন হয়ে উঠল।

ব্যাট হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান করে টাইগাররা। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে ১৬ রানে তামিম ইকবাল ফিরলে ভাঙে জুটি। বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না সৌম্য সরকারও। ৩০ বলে ৪২ রানেরর ঝড়ো ইনিংস ইনিংস খেলে আউট হন তিনি।

হঠাৎ পথহারা বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরান অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এই যুগল করেন বিশ্বমঞ্চে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি (১৪২)। সাকিব-তামিমকে বিচ্ছিন্ন করেন ইমরান তাহির। ৮৪ বলে ৭৫ রানে আউট হয়েছেন সাকিব। ইনিংসে আটটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি।

সাকিবের সমান চার মেরেছেন মুশফিকও। ৮০ বলে ৭৮ রানে ফিরেছেন তিনি। সাকিব-মুশি ফিরে গেলেও বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ২১ বলে ২১ রানে আউট হয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ২০ বলে ২৬ রানে সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩৩ বলে ৪৬ রানের হার না মানা ইনিংসের সুবাদে শক্তিশালী সংগ্রহে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। টাইগারদের পতন হওয়া ছয় উইকেট সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন অ্যান্ডিলে ফেলুখায়ো, ক্রিস মরিস ও ইমরান তাহির।

লক্ষ্যটা পাহাড়সম। দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হলো তাই। সাবধানী উদ্বোধনী জুটিতে ৪৯ রান যোগ করেন কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করাম। কুড়িতম ওভারের মধ্যে ১০২ রানে দুজনকেই ফেরায় টাইগাররা। ডি কক ২৩ এবং ৪৫ রানে ফেরেন মার্করাম।

এরপর ফ্যাফ ডু প্লেসি ও ডেভিড মিলারের প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা। ৫৩ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্কার ইনিংস ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ৬২ রানে আউট হন ডু প্লেসি। দলীয় সংগ্রহ দুশো ছাড়াতে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন মিলারও। ৪৩ বলে ৩৮ রানে আউট হন কিলার মিলার।

এরপর লড়াইটা চালিয়ে যান ফন ডার ডুসেন ও জেপি ডুমিনি। হাফ সেঞ্চুরির আভাস দিলেন দুজনই। কিন্তু একজনকেও সেই সুযোগ দেননি টাইগার বোলাররা। ৩৮ বলে ৪১ রানে সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন ডুসেন। ৩৭ বলে ৪৫ রান করা ডুমিনির স্ট্যাম্প উড়িয়ে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

টাইগারদের দুর্দান্ত বোলিং তোপে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউটের শঙ্কা এড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মুস্তাফিজ নিয়েছেন তিন উইকেট। সাইফুদ্দিনের শিক্ষার দুটি। এ ছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিবের ঝুলিতে গেছে একটি করে উইকেট। তবে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব।