দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ

প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দল পাওয়াই দুষ্কর ছিল। শেষ পর্যন্ত আট দল নিয়ে যাত্রা শুরু করে ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। এরপর আরো দশটি বিশ্বকাপ হয়েছে। অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। এবারই বিশ্বকাপটা 'ছোট' হয়ে এসেছে। দলের সংখ্যা নেমে এসেছে দশ-এ।

অবশ্য অংশ নেওয়া দলের সংখ্যার নিরিখে দ্বাদশ বিশ্বকাপের মাহাত্ম বোঝানো কঠিন। আজ থেকে শুরু হওয়া ক্রিকেট মহাযজ্ঞের দলগুলো প্রায় সমশক্তির। যে কোনো দল অন্য দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। তা ছাড়া টুর্নামেন্টের ফরেমেটেও এসেছে পরিবর্তন। রবিন লিগ রাউন্ড খেলার পর সেমিফাইনালে উঠবে চারটি দল। স্বাভাবিকভাবেই এবারের আসরের রোমাঞ্চটা একটু অন্যরকম।

ইংল্যান্ডের দাবি- ক্রিকেটের আবিস্কারক তারা। শুরুর দিকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য তাই আধিপত্য বিস্তার করতো ইংলিশরা। তাদের বিরোধীতা করেই একটা পর্যায়ে তৈরি করা হয়েছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে, পর্যায় ক্রমিকভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে আইসিসির সদস্য দেশগুলো।

কয়েকটি দেশ ঘুরে বিশ্বকাপ আবার বসছে যুক্তরাজ্যে। প্রায় দেড় মাস ধরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১১টি ভেন্যুতে চলবে ব্যাট-বলের যুদ্ধ। ৪৮ ম্যাচের সবকটি সরাসরি সম্প্রচার করবে আইসিসি। এ ছাড়া টিভির পর্যায় তো দেখা যাবেই। এবারের আসরে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করারও প্রস্তুতি নিয়েছে আইসিসি। যা আগে কখনো দেখেননি দর্শকরা।

সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ আয়োজন করলেও একদিনের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কখনো মাথায় তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। তিনবার ফাইনাল খেলেও স্বপ্ন হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে গেছে তাদের কাছে। এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। কন্ডিশন ও ফর্ম বিবেচনায় এই বিশ্বকাপের ফেভারিটের তালিকায় সবার ওপরে নাম ইংল্যান্ডেরই।

আজ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। শিরোপাবন্ধ্যত্ব ঘোচানোই মূল লক্ষ্য ইংলিশদের। ট্রফিতে চোখ দক্ষিণ আফ্রিকারও। নিজেদের চোকার্স বদনাম এবার অন্তত ঘুচতে চায় প্রোটিয়ারা। এ যাত্রায় শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে আফ্রিকানরা। ইনজুরি নিয়ে উদ্বোধনী ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন বিধ্বংসী পেসার ডেল স্টেইন।

ইংল্যান্ডের পরই ফেভারিটের কাতারে আছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। দুই দলই তারকাঠাসা। ফর্মে আছেন তাদের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল ও পাঁচবারের বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়ার শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার দলে ফেরায়।

এবারই প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। যদিও ফেভারিটের কাতারে নেই টাইগাররা। আসরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দলের লক্ষ্য সেমিফাইনাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপে চোখ থাকবে আফগানিস্তানের ওপর। আফগানরা আন্ডারডগ; তবে হয়ে উঠতে পারে 'জায়ান্ট কিলার'।

এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা খুব একটা আলোচনায় নেই। দেশটির ক্রিকেটে এখন সূর্যাস্ত চলছে। আরেক জায়ান্ট দল পাকিস্তানও ফর্মে নেই অনেকদিন ধরে। তবু এই দলটাকে নিয়ে কোনোকিছু অনুমান করা কঠিন। যতই বাজে সময় যাক না কেন, পাকিস্তানকে আশা দেখাচ্ছে ইতিহাস। বড় মঞ্চে ইংল্যান্ডের মাটিতে সবচেয়ে সফল দল যে তারাই!

বিশ্বকাপ জয় তো আছেই, ২০১৭ সালে সবশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এই ইংল্যান্ডেই বাজিমাত করেছিল তারা। যুক্তরাজ্যের উর্বর ভূমিতে এবার পাকিস্তান কেমন করে সেটাই দেখার। ভালো ফর্মে না থাকলেও, বাদ দেওয়া যাবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও। গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ডও এবার বড়কিছুর স্বপ্ন দেখছে। এই দুই দলের প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৫১ রান জানান দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ শাসন করবেন ব্যাটসম্যানরা।

স্বপ্ন দেখছে সব দলই। কিন্তু পূরণ হবে একদলের। কোন দলের স্বপ্ন পূরণ হবে উত্তরটা সময়ের হাতে। আপাতত বিশ্বকাপে বুঁদ হয়ে থাকবে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া।