সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণে বেড়েছে মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ। অনেকেই ফেসবুকের মত স্যোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে ব্যবসাসহ নানান সামাজিক কর্মকাণ্ড করছেন। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমেই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদশে বেশ কয়েকটি গণআন্দোলনের মত ঘটনাও ঘটেছে। স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে সংকটাপন্ন রোগীর জন্য মুহুর্তের মধ্যেই ব্যবস্থা করা যাচ্ছে রক্ত, কেউবা খুঁজে পাচ্ছেন অনেক বছর যোগাযোগ না থাকা বন্ধুকে। এতো ভালো দিক থাকার পরও স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার আসলে কতটুকু মানুষের কল্যাণ করছে সেটি ভাবার সময় বোধহয় এসে গেছে। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সেরকমই বলছেন।

facebook and drugs

বিবিসি বাংলার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ার এই আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নিচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে। অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। আর এর পেছনে রয়েছে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেগুলোর হাত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলেন, 'এখন খুব দ্রুতই সম্পর্কগুলো গড়ে উঠছে। খুব সহজেই এক জনের সঙ্গে আরেক জন যোগাযোগ করতে পারছেন। এসব কারণে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার হারও বেড়েছে অনেক বেশি। আবার ফেসবুক বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এমন কিছু দেখছেন যেটি তাদের মানসিকতার উপরও প্রভাব ফেলছে। এর কারণে হতাশার পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি।'

তিনি বলেন, 'স্যোশাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার মাদকের আসক্তির চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এটা খুবই চিন্তার এবং উদ্বেগের বিষয়। মাদক যখন গ্রহণ করা হয় সেটি একা অথবা কয়েক জনের সঙ্গে নেয়া হয়। কিন্তু কেউ যখন অন্য একজন বা একাধিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে সেটি তখন অনেক মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।'

মেহতাব খানম বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বিশেষ করে পরিবারের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কাউন্সেলিংয়ের জন্য অনেকেই আসছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাবা মায়েরা ভীষণ সমস্যায় পড়ছেন এসব বিষয় নিয়ে।'

বাচ্চাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে এই মনোবিজ্ঞানী বলেন, 'বর্তমানে সারারাত জেগে বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। এতে করে তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে তাদের পাড়ালেখায় ক্ষতি হচ্ছে। অল্প বয়সে তারা ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে পারিবারিক দূরত্ব। অধিকাংশ অভিভাবকই বুঝতে পারছেন না কীভাবে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখে তাদের সহায়তা করবেন।'

মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম বলেন, 'কাউন্সেলিং নিতে আসা শিশুদের অনেকেই বলছেন অভিভাবকরা তাদের কৈশরে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। অভিভাবকরা তাদের কৈশোরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, অভিভাবকরা পড়াশোনার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টারনেট পড়ালেখার কাজ দেয়া হয়, সেটা অভিভাবকরা বুঝতে চায় না। এদিকে সারারাত জেগে মোবাইল বা কম্পিউটারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।'

তিনি বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করাই কিন্তু সমাধান নয়। দরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সম্পর্কে যথাযথ শিক্ষার। এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিমান শিক্ষা গ্রহণের আগেই সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রের দ্বায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি সময় ব্যয় করার কারণে তার প্রভাব পড়ছে অন্য সকল বিষয়ের ওপরে। মস্তিস্ক তখন সব সময়ই ওটাতেই ব্যস্ত থাকছে।'

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ক্ষতির ধকল সামলাতে যথাযথ শিক্ষার প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে দরকার অভিভাবদের সচেতনতা। সন্তান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী পরিমান সময় ব্যয় করছে সেটি নিয়েও সতর্ক থাকা উচিত অভিভাকদের। স্কুলগুলোতে প্যারেন্টিং কর্মসূচি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে বর্তমান সময়ের এই সমস্যা দূর করতে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.