হোয়াটসঅ্যাপে ইসরায়েলি ‘গোয়েন্দা’দের নজরদারি, বাদ নেই অ্যামনেস্টিও

জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ সম্প্রতি হ্যাকারদের একটি আক্রমণের কথা জানিয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ইসরায়েল সরকার একটি সংস্থাকে এ ধরনের নজরদারির কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফিনান্সিয়াল টাইমের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা বলছে, হোয়াটসঅ্যাপে আক্রমণের এই প্রযুক্তিটি তৈরি করেছে একটি ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা এনএসও গ্রুপ।

হোয়াটসঅ্যাপের স্বত্বাধিকারী সংস্থা ফেসবুক বলছে, হ্যাকাররা ম্যাসেজিং অ্যাপটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এ মাসের শুরুতে এই আক্রমণ সম্পর্কে জানতে পেরেছে হোয়াটসঅ্যাপ।

সেই ত্রুটি ব্যবহার করে হ্যাকাররা দূর থেকে কিছু মোবাইল ফোনে বিশেষ নজরদারি সফটওয়্যার ইন্সটল করেছে।

নির্দিষ্ট কিছু মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপকেই টার্গেট করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।

তবুও আরও নতুন সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করতে এর একটি সমাধান ইতিমধ্যেই বাজারে ছাড়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের দেড় শ কোটি ব্যবহারকারীকে সাবধানতা হিসেবে দ্রুত অ্যাপটি আপডেট করে নিতে বলা হয়েছে।

আক্রমণকারী হ্যাকারদের 'খুব দক্ষ এবং অগ্রসর' একটি গোষ্ঠী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হ্যাকাররা এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস কল অপশন ব্যবহার করেছে। মোবাইল ডিভাইসে ভয়েস কলের রিং বাজার পর সেটি যদি কেউ নাও উত্তর দেয় তবুও নজরদারি সফটওয়্যারটি তারা ইন্সটল করতে সক্ষম হয়েছে।

এমনকি অ্যাপটির ভয়েস কলের তালিকা থেকে কলটির ইতিহাস পর্যন্ত মুছে দিতে পারে তারা।

হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মীরা প্রথম এই আক্রমণের বিষয়টি শনাক্ত করেছে এবং তার পর পরই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগ, কিছু নির্দিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাকে এই আক্রমণ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে তারা জানিয়েছে, ‘এটি যে কোনো সরকারের সাথে কাজ করা বেসরকারি কোম্পানির কাজ, তা বোঝার মতো স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে এই আক্রমণে। যাদের কাজ ছিল স্পাইওয়্যার বসিয়ে দূর থেকে মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।’

এনএসও গ্রুপ একটি ইসরায়েলি কোম্পানি যাদের পূর্বে 'সাইবার অস্ত্র ডিলার' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়ার হলো 'পেগাসাস'।

খবরে বলা হয়েছে, এই সফটওয়্যারটি কোনো মোবাইল ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি মোবাইল ফোনটির মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার তথ্য নিতে পারে। এমনকি ফোনটির অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

এনএসও গ্রুপ ইতিমধ্যেই একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘এনএসও'র প্রযুক্তি সরকারি সংস্থা থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত। যার একমাত্র কাজই হলো সন্ত্রাস ও অপরাধ প্রতিহত করা।’

হোয়াটসঅ্যাপ বলছে, কতজন ব্যবহারকারীর ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে সেটি এখনই তারা জানাতে পারছে না।

তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তারা পূর্বে এনএসও গ্রুপ দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে।

অ্যামনেস্টির প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তা ডেনা ইংগলটন বলেছেন, ‘কোনো সরকার কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি করার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এমন প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।’

অ্যামনেস্টি এই মুহূর্তে এনএসও গ্রুপের লাইসেন্স প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলে একটি আইনি লড়াই করছে।