আপনি পড়ছেন

রোজা মানুষকে মুত্তাকি বানাতে চায়। মুত্তাকি হওয়ার এই ইবাদত শুধু উম্মতে মুহাম্মদী নয় যুগ যুগ ধরে সব নবীর শরীয়তেই ফরজ ছিলো। প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রতিটি আসমানী ধর্মের শরীয়তে রোজা ছিল ফরজ তথা অত্যাবশ্যকীয় পালনীয়। তাইতো আমরা দেখি ইহুদি এবং খ্রিষ্টান ধর্মেও রোজার বিধান রয়েছে ফরজ হিসেবেই।

historical significance of ramadan

শুধু তাই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ধর্ম পরিচিতি পেয়েছে, যত জন ধর্মগুরু ঈশ্বর সাধনার কথা বলেছেন, তারা সবাই আধ্যাত্মিক সাধনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে উপবাস ব্রতের কথা বলেছেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, কনফুসিয়াজমসহ সব ধর্মেই উপোবাসের নিয়ম আছে গুরুত্বের সঙ্গে।

উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরি সনে। কিন্তু এর আগে কি প্রিয় নবী (সা.) রোজা রাখতেন? মাশাহিরে হক গ্রন্থকার বলেন, অধিকাংশ আলেম খুব জোর দিয়েই বলেছেন, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগেও নবীজি (সা.) এবং সাহাবিদের মাঝে রোজার প্রচলন ছিল। তখন মহররম মাসের ১০ তারিখের সিয়াম এবং প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখা উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য ফরজ ছিল। এভাবেই কেটে যায় পনেরটি বছর। দ্বিতীয় হিজরি সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময় কেবলা পরিবর্তনের বিধান নাজিল হয়। এর দশদিন পর নাজিল হয় সেই ঐতিহাসিক তাকওয়া অর্জনের বিধান মাহে রমজানের সিয়াম। নাজিল হয়, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম। হে ইমানদারগণ! তোমাদের তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩)

রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশুরা ও প্রতি মাসের তিনটি রোজা নফল হয়ে যায়। তখন রোজার নিয়ম ছিল, কেউ চাইলে রোজা রাখতে পারত, আবার কেউ চাইলে রোজার বিনিময়ে কাউকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বা খাবার ফিদিয়া দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারত। আল্লাহ বলেন, ‘আর রোজা রাখা যাদের জন্য খুব কষ্টকর, তাদের সামর্থ্য থাকলে ফিদিয়া দিবে। অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দান করবে। (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৪) 

পরের বছর এ বিধান রহিত হয়ে যায়। শুধু অসুস্থ হলেই এভাবে অন্যকে দিয়ে দায় সারানো যাবে নয়ত সবার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক করে দেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ বলেন, ‘আর এখন থেকে যারাই এ মাস পাবে, তাদের জন্য পুরো মাস রোজা রাখা কর্তব্য। (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)

আরেকটি নিয়ম তখন ছিল। কেউ যদি ইফতারের পর ঘুমিয়ে যায়, তাহলে ওই রাতে সে আর কিছু খেতে পারত না। স্ত্রীর সঙ্গে মিশতেও পারত না। এভাবেই না খেয়ে তাকে রোজা রাখতে হত। অনেক সাহাবিই ক্লান্তির কারণে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়তেন আর না খেয়েই রোজা রেখে অসুস্থ হয়ে যেতেন। কেউ কেউ আবার ঘুম থেকে ওঠে স্ত্রীর সঙ্গে মিশে যেতেন। তখন আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর দয়া করলেন। তিনি রাতে খাওয়া এবং স্ত্রী সহবাসের বৈধতা নাজিল করলেন। 

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘রোজার রাতে স্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্ট হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক, তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তিনি তোমাদেরকে নিঃশর্তে মাফ করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও, আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পাওয়ার চেষ্টা করো। খাও, পান করো, যতক্ষণ না রাতের কালো রেখার বুক চিরে ভোরের সাদা আলো সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। তারপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সূরা বাকারার, আয়াত: ১৮৭)

এই হল রোজার ঐতিহাসিক তাৎপর্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের সবগুলো রোজা সুস্থভাবে হকসহ আদায়ের তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.