পাউবোতে পুকুর চুরি, মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চন্দনা-বারাশিয়া নদী খনন প্রকল্পে বেশি খনন দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারকে। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনে ফরিদপুর-রাজবাড়ী জেলার ওই প্রকল্পে অনিয়মের প্রমাণ মিললেও দফায় দফায় পুনঃতদন্তের নামে মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আবার সচল পাম্পকে অকেজো দেখিয়ে ১১ কোটি টাকা লুটপাটের চেষ্টাও করা হয়।

জানা গেছে, চন্দনা নদী খননে রাজবাড়ী পওর বিভাগের আওতায় ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৯টি প্যাকেজে ৫৩.৫০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন কাজ হাতে নেয়া হয়। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮ প্যাকেজের কাজ শেষ হয়। এতে সম্পাদিত মাটির পরিমাণ এবং মাঠ পর্যায়ে মাপ বহিতে অন্তর্ভুক্ত মাটির পরিমান এবং পরিশোধিত বিলে মাটির পরিমানে পার্থক্য পাওয়া যায়। পরিশোধিত বিলে হিসাবকৃত মাটির চেয়ে অধিক পরিমান মাটির বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া চূড়ান্ত বিলে আরো বেশি মাটির বিল পরিশোধের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্পাদিত কাজের চেয়ে বেশি পরিমাণ মাটির বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২১ এপ্রিল সিডিআরএসবির প্রকল্প পরিচালক কে এম হুমায়ূন কবিরকে আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সামছুল আলমকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ক্যাপিটাল পাইলট ড্রেজিং অব রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আফতাব হোসেন চৌধুরীকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ওই কমিটি ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায় অবস্থিত প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরির্দশন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

দন্তে জমি অধিগ্রহণ ও কাজ বাস্তবায়নে সময়োপযোগী উদ্যোগের গাফলতির জন্য রাজবাড়ী পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আব্দুল আউয়াল মিয়াকে দায়ী করে।

এতে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব সম্বলিত সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন ও দাখিল অত্যাবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও এ কাজে এক বছরের অধিক সময় ব্যয় করা হয়। এক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলীরা যথাযথ সময়োপযোগী উদ্যোগের অভাব ছিল। জমি অধিগ্রহণে বেশি সময় নেয়ায় শতাংশ প্রতি জমির দর বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তিতে মূল্য পরিশোধে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

ওই প্রকল্পের ফরিদপুর অংশে মাটির বিল পরিশোধে অনিয়মের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজের কাজের জন্য দায়িত্বরত ফরিদপুর পরিচালন ও রক্ষনাবেক্ষণ (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন সরকার, বোয়ালমারী পওর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল, শাখা কর্মকর্তা (বোয়ালমারী পওর) ওয়াহিদুর রহমান ভূইয়া, শশাংক কুমার বিশ্বাস, উত্তম কুমার পোদ্দার (আলফাডাঙ্গা পওর), কাজী নজরুল ইসলামের (কাশিয়ানি পওর) বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বোর্ডের শৃংখলা পরিদফতরকে নির্দেশনা দেয়।

অভিযোগ আছে, পাউবোতে লোভনীয় বদলিতে ঘুষ নিয়মে দাড়িয়ে গেছে। গত ১২ জুলাই এক আদেশে কণ্টাক্ট অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট সেলের গাড়ী চালক মো. ইউসুফ আলী মিনাকে পি,এম,ইউ,ই,এস,পি,পি (হাসান কোর্ট) বদলি করা হয়। একই আদেশে ওই বিভাগের গাড়ী চালক মো. দুলাল মিয়াকে নরসিংদী পওর বিভাগে বদলি করা হয়। এর ১০ দিন পরে ২৬ জুলাইয়ে ওই বদলি আদেশ বাতিল করা হয়। ওইদিনই আবার সেই আদেশ বাতিল করা হয়।

সচল পাম্পকে অকেজো দেখিয়ে ১১ কোটি টাকা লুটপাটের চেষ্টা করা হয়। ঢাকা শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল উত্তরা, মিরপুর, পল্লবী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পল্লবী থানাধীন গোড়ানে তিনটি পাম্পবিশিষ্ট একটি পাম্প হাউস নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১১ সালে আরো একটি পাম্প হাউস নির্মাণের কাজ নেয় বোর্ড। নির্মাণের শেষ পর্যায়ে ওই তিনটি পাম্পের মধ্যে অকেজো পাম্পটি পুনঃস্থাপনে অতিরিক্ত একটি পাম্প সরবরাহ ও স্থাপনে ১১ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় আলাদা প্যাকেজে ক্রয়ের প্রস্তাব করে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় অকেজো পাম্পটি কনডেম ঘোষণা না করেই পাম্প কেনার অনিয়ম নজরে আসে। ওইসময় বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মো. শাহিদুর রহমানের যোগসাজোসের অভিযোগ উঠে। মো. শহিদুর রহমান অবসরে গেলে এই অনিয়ম নজরে আসে।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায় নি। একটি মাত্র তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসলে কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আগে অবশ্যই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

ওবায়দুল কাদের: মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই

২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি হাইকমিশন ঘেরাও করবে গণজাগরণ মঞ্চ

বিমানবন্দরের জন্য গঠন হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী