সিটির অবিশ্বাস্য বিদায়: সেমিতে টটেনহাম

মহারণ প্রান্তসীমায়। অপেক্ষা শেষ বাঁশির। কিন্তু যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ম্যাচের অষ্টম গোল। তাতেই কেঁপে উঠল ইতিহাদ স্টেডিয়াম। উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা গ্যালারির দর্শকরা। মাঠে স্টার্লিং-অ্যাগুয়েরোদের উল্লাস। ডাগ আউটে তখন পেপ গার্দিওলা বুনো উল্লাসে ব্যস্ত। স্প্যানিশ কোচের উচ্ছ্বাস হার মানিয়েছে খেলোয়াড়দের!

টটেনহাম হটস্পারের ফুটবলাররা যেন একেকজন বিধ্বস্ত সৈনিক। যুদ্ধে হেরে গেলে বীরদের চেহারা যেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কিন্তু পাগলাটে ম্যাচের শুরুর মতো শেষটাও হলো মহানাটকীয়ভাবে। ঘরের মাঠে সিটির উৎসব থেমে গেল কয়েক মুহূর্ত পরই। সার্জিও অ্যাগুয়েরোর অফসাইডে বাতিল হয়ে যায় স্টার্লিংয়ের ‌তৃতীয় গোলটা! তাতে টটেনহাম খুঁজে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নটা।

রঙ ছড়ানো সাত গোলের থ্রিলার ম্যাচটা সিটি জিতেছে ৪-৩-এ। কিন্তু খ্যাপাটে ম্যাচটা জিতেও হেরে গেল গার্দিওলার দল। হেরেও গৌরবের উল্লাস করেছে টটেনহাম। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ স্পার্স শিবিরে। ভাগ্যিস উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল! ভিএআরের সহায়তা নিয়ে সিটির পঞ্চম গোলটা বাতিল করে দেন রেফারি।

টটেনহামের পৌষ মাশ। সর্বনাশ হলো সিটির। দুর্দান্ত একটা ম্যাচ খেলেও দুর্ভাগবশৎ ইউরোপের সর্বোচ্চ মঞ্চ থেকে ছিটকে গেল ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়নরা। দুই লেগে মিলিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল ৪-৪ গোলে ড্র; অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে ইতিহাস গড়ল টটেনহাম। মাওরিসিও পচেত্তিনোর দল উঠল সেমিফাইনালে। আগামী ৩০ এপ্রিল শেষ চারের প্রথম লেগে তাদের প্রতিপক্ষ রূপকথার আয়াক্স। যারা বিদায় করেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বর্তমান দল জুভেন্টসকে।

‌'অল ইংল্যান্ড' ক্লাসিক লড়াইয়ের শুরুটা হলো অলৌকিক। ১১ মিনিটে চার গোল। ২১ মিনিটের মধ্যে ইতিহাদ দেখল পাঁচটি গোল! যেন অবিশ্বাসের ভূত নেমে এসেছে ম্যানচেস্টারে। প্রথম গোলটা করলেন সিটি স্ট্রাইকার রহিম স্টার্লিং। ম্যাচের বয়স তখন তিন মিনিট ৫১ সেকেন্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দ্রুততম গোল।

সাত মিনিটে সন হিয়ুং-মিনের পাল্টা গোলে সমতায় ফেরে টটেনহাম (১-১)। দশ মিনিটে দক্ষিণ কোরয়িান ফরওয়ার্ড করলেন দ্বিতীয় গোল। উত্তর লন্ডনের ক্লাব এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। লিড নেওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাদেরও। পরের মিনিটেই ম্যাচে ফেরে স্বাগতিক সিটি ২-২। গোল করেন বার্নাডো সিলভা।

মহারণটা সবার যে স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত নিয়ে ছাড়বে সেটার পূর্বাভাস দিল শুরুর এই গোলবন্যা। ২১ মিনিটে ম্যাচে দ্বিতীয়বার এগিয়ে যায় সিটি। স্বাগতিকদের এবারো এগিয়ে দেন স্টার্লিং। লিগের ইতিহাসে এই প্রথম ২১ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করলেন দুই দলের দুই ফুটবলার। প্রথমার্ধের রোমাঞ্চ শেষ হয়েছে এই পাঁচ গোলেই।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচটা উপহার দিল আরো দুটি গোল। ৫৯ মিনিটে সিটির পক্ষে ব্যবধান বাড়ান অ্যাগুয়েরো। ডি-বক্সে দুর্দান্ত এক কোনাকুনি শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। সিটি এগিয়ে গেল ৪-২-এ। সেমিফাইনালের টিকিটের জন্য সিটির এটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু নাছোড়বান্দা টটেনহাম। ৭৩ মিনিটে ব্যবধান কমায় তারা (৪-৩)। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল লরেন্তের ঊরুতে লেগে খুঁজে নেয় সিটির জাল।

এরপর কয়েক দফা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হলো ম্যাচটাতে। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো থাকল প্রায় প্রতিটি মিনিটে। সাত গোলের থ্রিলার ম্যাচটার যোগ করা সময়ে নাটকীয় গোল। ভিএআরে আবার বাতিলও হলো। অল ইংলিশ দ্বৈরথটা এরচেয়ে বেশি রোমাঞ্চ উপহার দিতে পারতো না। নিঃসন্দেহে ম্যাচটা বহুদিন গেঁথে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। ম্যাচের আগা-গোড়া দর্শক, খেলোয়াড়, কোচদের স্নায়ুচাপের কী পরীক্ষাটাই নিলো!