তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লি: বিশ্ব ইজতেমা শুরু

হজের পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি)। বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান উর্দুতে এ বয়ান শুরু করেন। রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম ধাপ।

বিশ্ব ইজতেমায় দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরা পর্যায়ক্রমে আখলাক, ঈমান ও আমলের ওপর বয়ান করবেন। বিভিন্ন জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে এসে নিজ নিজ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্মিত তাশকিল কামরার টিনের সামিয়ানার পূর্ব পাশে স্থাপিত মূল মঞ্চ থেকে তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বিরা আরবি ও উর্দুতে বয়ান করবেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে তা বাংলায় তরজমা করা হবে। এসব বয়ান ইংরেজি, ফার্সি, মালয় ভাষায়ও তরজমা করা হবে।

শীত উপেক্ষা করে ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার রাত থেকেই তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা। গতকাল বৃহস্পতিবারও বাস, ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়ি, লঞ্চসহ নানা ধরনের যানবাহনে করে মুসল্লিরা ময়দানে আসেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশ থেকে আসা মুসল্লিরা ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশেপাশের এলাকার লাখো মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা ময়দানমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলিগলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দুই দফায় ৩২ জেলার মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন। এবার প্রথম দফায় ১৬টি জেলার মুসল্লিরা ও দ্বিতীয় দফায় ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এবারের দুই দফায়ই ঢাকা জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। বাকি ৩২ জেলার জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা আগামী বছর ইজতেমায় অংশ নেবেন।

ইজতেমা এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ, মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ সরকারি-বেসরকারি দফতরের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার কর্মকর্তারা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমার মূল বয়ান মঞ্চের পাশেই রয়েছে গাইবান্ধার ‘খিত্তা’। সেখানকার মুসল্লি ওই জেলার সাঘাটা উপজেলার মো. নাছির হোসেন (৫২) বলেন, প্রথমবারের মতো ইজতেমায় এসেছি। টাকার অভাবে হজে যেতে পারি না। তাই এলাকার অন্য সাথিদের সঙ্গে গরীবের হজ তুরাগ তীরের ইজতেমায় এসেছি।

রয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসংলগ্ন মন্নুনগর এলাকায় অস্থায়ী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে মানবতার ধর্ম। ইসলামকে কায়েম করার জন্য হাজার হাজার মুসল্লি এখানে মনেপ্রাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ হাজার সদস্য: গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার সদস্য। পাঁচ স্তরের এ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে ইজতেমা এলাকা ঢেকে রাখা হবে। প্রথম পর্বে নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রতি শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও গাজীপুর জেলা পুলিশ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত: গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম বলেন, টঙ্গীর ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকায় ইজতেমা চলাকালে প্রতিদিন তিন পালায় সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং যান চলাচল কাজে চারটি এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাবার দোকানের খাবারের মান ও মেয়াদ যাচাইয়ের জন্য আরও ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

ইজতেমার মুরব্বিদের দেওয়া তথ্য মতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয় ইজতেমা। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আপনি আরো পড়তে পারেন

ইজতেমাগামী বাস খাদে, নিহত ১ আহত ২৫

২০ দলীয় জোটে থাকছে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ